ট্রেনের ভাড়া বেশি, তাই বিমানে বিদেশ ঘুরে আসবেন তিনি
সান্ডারল্যান্ড পথ হারিয়ে এখন ইংলিশ ফুটবলের তৃতীয় স্তরে। এবার লিগ ওয়ানে পঞ্চম হওয়া দলটির সামনে সুযোগ এসেছে চ্যাম্পিয়নশিপে যাওয়ার। শনিবার ২১ মে ওয়েম্বলিতে উইকম্বের বিপক্ষে প্লে-অফ ফাইনালে খেলবে সান্ডারল্যান্ড। জিতলেই আগামী মৌসুমেই দ্বিতীয় স্তরে উঠে যাবে তারা। মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচ দেখার ইচ্ছা হতেই পারে ক্লাবের পাঁড় ভক্তদের।
৩৩ বছর বয়সী জেমস জেলি তেমনই এক সমর্থক। নিউক্যাসল থেকে লন্ডনের ওয়েম্বলিতে গিয়ে ম্যাচ দেখতে যাচ্ছেন তিনি। খুব সহজেই বাস বা ট্রেনে চলে যেতে পারতেন লন্ডনে। কিন্তু যুক্তরাজ্যে সড়কব্যবস্থায় ভাড়া এত বেশি যে সেটি দিতে ইচ্ছা হয়নি তাঁর। এ কারণে উড়োজাহাজে করে স্পেনে যাচ্ছেন। স্পেন থেকে আবার উড়াল দিয়ে লন্ডনে নেমে তবেই খেলা দেখবেন!
নিউক্যাসল থেকে লন্ডনের দূরত্ব ৪৫০ কিলোমিটারের মতো। ট্রেনে সর্বোচ্চ ৪ ঘণ্টা সময় লাগে। বাসে সময় লাগে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা। কিন্তু সান্ডারল্যান্ড সমর্থক ২৮ ঘণ্টা ব্যয় করে পাড়ি দিচ্ছেন প্রায় ৪০০০ কিলোমিটার!
জেমস জেলি শনিবারের ম্যাচ দেখতে বৃহস্পতিবার রওনা দেবেন, আর লন্ডনে নামবেন শুক্রবার। এই দীর্ঘ যাত্রায় তাঁর ব্যয় হবে মাত্র ৫১ পাউন্ড। অথচ উড়োজাহাজে করে নিউক্যাসল থেকে লন্ডনে যেতে তাঁর ১৬১.৯৯ পাউন্ড খরচ হতো! নিউক্যাসল থেকে স্পেনের মেনোরকাতে যেতে মাত্র ১২.৫০ পাউন্ড খরচ হবে ৩৩ বছর বয়সী সান্ডারল্যান্ড সমর্থকের। আর মেনোরকা থেকে লন্ডন স্টানস্টেড এয়ারপোর্টে ফেরা টিকিটের জন্য ব্যয় হচ্ছে ১০.৫০ পাউন্ড!
সান্ডারল্যান্ড সমর্থকের যুক্তিটা শুনুন, ‘ট্রেনে যাওয়ার চেয়ে এটা সস্তা। অন্য যে উপায়গুলো আছে, সেগুলো অবিশ্বাস্য খরুচে। নিউক্যাসল থেকে হিথরোর (বিমানবন্দর) ভাড়া দেখছিলাম, আর সেটা যাওয়া–আসা মিলে ১৬১.৯৯ পাউন্ড! আমি ভাবলাম, “আমি জীবনেও এটা দেব না।” আমি আরেকটু নিচে দেখলাম। সেখানে দেখলাম রায়ানএয়ারে মেনোরকা হয়ে একটা ফ্লাইটে মাত্র ২৩ পাউন্ড নিচ্ছে। আমি ভাবলাম সমস্যা কী!’
নিউক্যাসল থেকে স্প্যানিশ দ্বীপটির দূরত্ব প্রায় ২২০০ কিলোমিটার। সেখান থেকে আবার লন্ডনে যেতে প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হবে। মাঝে বেশ লম্বা সময় ট্রানজিটে কাটাতে হবে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় উড়োজাহাজে চড়বেন। আবার লন্ডনে নামবেন পরদিন সন্ধ্যা ৬টায়। কিন্তু জেলি টলেননি, আমার বন্ধুরা বলছিল, ‘আসা-যাওয়ায় তাদের ২০০ থেকে ৩০০ পাউন্ড খরচ হচ্ছে। আর বাসে গেলেও ৪০ পাউন্ড লাগত। আমার বিমানভাড়া এর অর্ধেক। আর মাঝে একটা চমৎকার সকাল কাটাব স্পেনে। দুর্দান্ত সপ্তাহান্ত।’
স্পেনে যে হোটেলে থাকবেন জেমস, সেটার ভাড়া ২৮ পাউন্ড। অর্থাৎ ৫১ পাউন্ড খরচ করেই লন্ডনে যাচ্ছেন, যা ট্রেন ভাড়ার চেয়ে বেশ কম। ওদিকে উইকম্বের সঙ্গে ম্যাচের টিকিটের দাম ৫৫ পাউন্ড। লন্ডন থেকে বাড়ি ফেরার উপায়টাও বেছে নিয়েছেন মুফতে। আরেকজনের গাড়িতে নিউক্যাসল ফিরবেন। ফলে নিউক্যাসল থেকে লন্ডনে যাওয়ার বিমানভাড়ার চেয়ে প্রায় ৫০ পাউন্ড কম খরচ করেই ম্যাচ দেখে ফিরেও আসতে পারছেন তিনি।
জেমস কদিন পরই বিয়ে করতে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় খরচ বাঁচাতেই নাকি এমন অভিনব পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাঁর হবু স্ত্রী যে ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবে নেননি, সেটিও জানিয়েছেন, ‘ওর ধারণা, আমি পাগল!’