টাকার জন্য নয়, পিএসজিকে ভালোবেসেই রিয়ালকে ‘না’ বলেছেন এমবাপ্পে
এমবাপ্পে-নাটকের যবনিকাপাত ঘটেছে, তা–ও মাসখানেক হয়ে গেল। রিয়াল মাদ্রিদের আবেদনকে প্রত্যাখ্যান করে পিএসজিতেই থেকে গিয়েছেন এই ফরাসি ফরোয়ার্ড।
রিয়াল মাদ্রিদে তাঁর যাওয়া প্রায় নিশ্চিতই ছিল, এ নিয়ে গত এক বছরে মাদ্রিদের আগাম উচ্ছ্বাসেরও কমতি ছিল না। কিন্তু শেষে এসে হঠাৎ মন বদলে পিএসজিতেই থেকে গিয়েছেন ফরাসি ফরোয়ার্ড।
পিএসজির সঙ্গে এই জুনেই তাঁর আগের চুক্তি শেষ হওয়ার কথা ছিল, সেটি শেষে বিনা মূল্যে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেবেন এমবাপ্পে—গুঞ্জন ছাপিয়ে সেটির নিশ্চয়তাই যেন দিয়ে দিয়েছিল মাদ্রিদের সংবাদমাধ্যম।
কিন্তু কাতার বিশ্বকাপের আগে পিএসজিতে এ মুহূর্তে তর্ক সাপেক্ষে সবচেয়ে আলোচিত তারকাকে আর ছাড়তে চায়নি ফরাসি ক্লাবটির কাতারি মালিকেরা। শেষ পর্যন্ত বিশাল অঙ্কের বেতন আর বোনাস, রাজনৈতিক নেতাদের পরামর্শ আর পিএসজির ভবিষ্যতে এমবাপ্পের মতামতের গুরুত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁকে চুক্তি নবায়নে রাজি করিয়েছে পিএসজি।
কিন্তু পিএসজির সভাপতি নাসের আল খেলাইফির কথা শুনে মনে হবে, ওসবের কিচ্ছু সত্যি নয়। সব সাংবাদিকদের মনগড়া প্রলাপ। এমবাপ্পে নাকি পিএসজিতেই থাকতে চেয়েছেন আজীবন, রিয়াল বৃথাই চেষ্টা করে গিয়েছে এই ফরাসি তারকাকে দলে আনার জন্য!
গত রাতে ফরাসি গণমাধ্যম লা পারিসিয়েন ও স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা-কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন পিএসজির মালিক নাসের আল খেলাইফি। সেখানে এমবাপ্পেকে ধরে রাখার পেছনে অর্থযোগের ভূমিকাটা স্রেফ অস্বীকার করেছেন তিনি, 'ক্লাব হিসেবে আমি রিয়াল মাদ্রিদকে অনেক সম্মান করি। তারা ক্লাব হিসেবে অসাধারণ। কিন্তু সবার প্রথমে যে কথাটা মাথায় রাখতে হবে, সেটা হলো, কিলিয়ান কখনই টাকার জন্য আমাদের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেনি। মাদ্রিদের প্রস্তাব আমাদের চেয়ে অনেক ভালো ছিল। এমবাপ্পে আমাদের খেলোয়াড়, আর ওর হাতে রিয়াল ছাড়াও ইংল্যান্ডের অনেক ক্লাবের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু সে পিএসজিকেই বেছে নিয়েছে। ও আর ওর পরিবারের সঙ্গে টাকাপয়সা নিয়ে আমরা একদম শেষ মুহূর্তে এসে কথা বলেছি।'
খেলাইফির মতে, দেশ ও নিজের শহরকে প্রতিনিধিত্ব করার লোভ সামলাতে পারেননি দেখেই পিএসজিতে থেকে গিয়েছেন প্যারিসে জন্ম নেওয়া এমবাপ্পে, ‘কিলিয়ান পিএসজির পুরো প্রকল্প নিয়েই আগ্রহী ছিল। সে প্যারিসের বাসিন্দা, ফ্রান্সের নাগরিক। ও এখানে থাকতে চেয়েছে কারণ ও নিজের দেশ ও শহরের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়। এই ক্লাবকে প্রতিনিধিত্ব করতে চায়। ওর কাছে টাকাপয়সা গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। ও এখানে জিততে চায়, একটা সফল প্রকল্পের অংশ হতে চায়।’
খেলাইফির দাবি, তিনি আগেই জানতেন এমবাপ্পে পিএসজিতে থেকে যাবেন।
যে কারণে রিয়ালের আকাশছোঁয়া প্রস্তাবও অনাদরে পায়ে ঠেলে দিতে দুবার ভাবেননি, ‘আমি জানি না মাদ্রিদ ব্যাপারটা নিয়ে কী বলছে। এমবাপ্পের মন শেষ দশ দিনে পরিবর্তিত হয়েছে না কয়েক মাস আগে— এসব জানি না। আমি শুধু ১৮ মাস আগে থেকে এটাই জানি, এমবাপ্পে আমাদের এখানেই থাকতে চায়। আমি মাদ্রিদের মানুষজনকে বলতে শুনেছি এমবাপ্পে নাকি মাদ্রিদে যেতে চেয়েছে, এটা একদমই সত্যি নয়। গত গ্রীষ্মে এমবাপ্পের জন্য ১৭ না ১৮ কোটি ইউরোর একটা প্রস্তাব দিয়েছিল রিয়াল, এর অর্থ হলো, মাদ্রিদের প্রস্তাব, বেতন-বোনাস সবকিছু মিলিয়ে আমাদের চেয়ে অনেক ভালো ছিল। আমি ওদের ১৮ কোটি ইউরোর প্রস্তাব যখন নাকচ করে দিলাম অনেকে আমাকে পাগল বলেছে। মানুষজন বলেছে এমবাপ্পে আগামী মৌসুমে ফ্রি-তে চলে যাবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম, এমবাপ্পে আমাদের এখানেই থাকবে। আমি ওকে আর ওর পরিবারকে চিনতাম। যে কারণে আমি রিয়ালের ওই প্রস্তাবে রাজি হইনি। আমি জানতাম ও কী চায়। কিলিয়ান অনেক পেশাদার, ও খেলতে চায়, জিততে চায়। ও টাকাপয়সার তোয়াক্কা করে না। আমি জানি মাদ্রিদ অনেক হতাশ ওকে না পেয়ে, কিন্তু এমবাপ্পেকে ঢালাওভাবে দোষ দেওয়া একদমই উচিৎ না।’