জিদানকে নিয়ে দুঃসংবাদ জানাল রিয়াল
‘কমুনিকাদো অফিশিয়াল: জিদান।’
আনুষ্ঠানিক খবর, জিদান–সম্পর্কিত। এতটুকু দেখেই হয়তো অনেক রিয়াল মাদ্রিদ ও জিনেদিন জিদান–ভক্তের পিলে চমকে গেছে। তবে কি গুঞ্জনটা সত্যি হয়েই গেল?
এ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় রিয়াল মাদ্রিদের ডাগআউট সামলাচ্ছেন জিদান। দুই দফায় প্রায় সাড়ে চার বছরে খুব কম সময়ই গেছে যখন জিদানের চাকরি যাচ্ছে বলে গুঞ্জন ওঠেনি। তবে এবার গুঞ্জনটার মাত্রা, বিশ্বাসযোগ্যতা দুটিই বেশি ছিল। কিন্তু না, জিদান বরখাস্ত হননি। রিয়াল মাদ্রিদ আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জিদানকে নিয়ে অন্য একটি খবর দিয়েছে। সেটিও একই রকম মন খারাপ করে দেওয়ার মতো খবরই। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ বছর বয়সী ফরাসি কিংবদন্তি। কোভিড-১৯ পরীক্ষায় তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।
‘রিয়াল মাদ্রিদ জানাচ্ছে যে আমাদের কোচ জিনেদিন জিদান কোভিড-১৯ টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন’—ছোট্ট এক লাইনের একটা বিবৃতি। এটিও রিয়াল মাদ্রিদ–ভক্তদের মন খারাপ না করে পারে না। শুধু রিয়াল মাদ্রিদই কেন, ফুটবল ভক্তমাত্রই তো এ খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ার কথা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দলের অনুশীলনের দায়িত্বে ছিলেন জিদান, কিন্তু আজ শুক্রবার সকালে রিয়ালের অনুশীলনে ছিলেন না। নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে এখন অন্তত ১০ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে। এরপর পরীক্ষায় নেগেটিভ হলেই কেবল দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারবেন ‘জিজু।’
বাংলাদেশ সময় আগামীকাল রাত দুইটায় লিগে আলাভেসের মাঠে রিয়ালের ম্যাচে ডাগআউটে জিদান থাকছেন না, এতটুকু নিশ্চিত। পরের শনিবার নিজেদের মাঠে লেভান্তের বিপক্ষে লিগের ম্যাচেও রিয়ালের ডাগআউটে তাঁকে দেখা না যাওয়ার সম্ভাবনা। সব ঠিক থাকলে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি লিগে উয়েস্কার মাঠে ম্যাচটিতে রিয়ালের ডাগআউটে ফিরবেন জিদান। তবে জিদানের শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ আছে কি না, সেটি বিবৃতিতে জানায়নি রিয়াল।
এই মাসের শুরুর দিকেও একবার আইসোলেশনে গিয়েছিলেন জিদান। তখন জানা গিয়েছিল, ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি কিংবদন্তি মিডফিল্ডারের নিজের করোনা হয়নি, কিন্তু করোনা পজিটিভ এক ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে গিয়েছিলেন বলেই সতর্কতাবশত আইসোলেশনে যাওয়া। পরে পরীক্ষায় নেগেটিভ হলে আইসোলেশন থেকে বেরিয়ে আসেন জিদান। কিন্তু এবার পজিটিভ হয়েই আবার আইসোলেশনে যেতে হলো।
রিয়ালের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে তাঁর শারীরিক অবস্থার বর্ণনা না থাকলেও জিদানের সহকারী কোচ দাভিদ বেত্তোনি আজ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে দিয়েছেন সর্বশেষ আপডেট, ‘আজ সকালেই তাঁর সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তিনি পুরোপুরি ঠিক আছেন।’
জিদানের করোনার খবরটা এমন সময়ে এল, যখন তাঁর ভবিষ্যৎ ঝুলছে সুতোয়। দলের সঙ্গে এ মুহূর্তে তাঁর থাকতে পারাই বেশি দরকার ছিল, অথচ এখনই দল থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে তাঁকে। দুদিন আগে স্প্যানিশ কাপে রিয়াল মাদ্রিদ লজ্জায় বিদায় নিয়েছে। শেষ ৩২-এ ২-১ গোলে হেরেছে স্পেনের তৃতীয় বিভাগের দল আলকয়ানোর কাছে। তা-ও ম্যাচটা গড়িয়েছে অতিরিক্ত সময়ে, সেখানে আলকয়ানো জয়সূচক গোলটা করার সময় তাদের খেলোয়াড় ছিল ১০ জন। ১১৫ মিনিটে আলকয়ানোর জয়সূচক গোলটা এসেছে, তার পাঁচ মিনিট আগেই তাদের একজন খেলোয়াড় লাল কার্ড দেখে। অন্যদিকে রিয়ালের জার্সিতে তখন মাঠে ছিলেন ক্রুস, কাসেমিরো, হ্যাজার্ড, মার্সেলোরা!
তার দিন চারেক আগে স্প্যানিশ সুপারকাপের সেমিফাইনালে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের কাছে ২-১ গোলে হেরে সেই টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতার সুযোগ হারায় রিয়াল। তার আগে গত রোববার লিগে গোলশূন্য ড্র করেছে ওসাসুনার সঙ্গে। লিগে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের তিনটিতেই পয়েন্ট হারিয়েছে রিয়াল—দুটি ড্র, একটি হার।
সে কারণে আজ সংবাদ সম্মেলনে জিদান কী বলেন, সেটি নিয়ে আগ্রহ ছিল অনেক। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় জিদান সেই সংবাদ সম্মেলনে আসতেই পারেননি, তাঁর বদলে এসেছেন সহকারী কোচ দাভিদ বেত্তোনি।
আলকয়ানোর কাছে গত পরশুর হারের পর জিদানের চাকরি নিয়ে শঙ্কা পারদ চড়লেও সেদিনই পরে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম জানায়, এখনই জিদানকে ছাঁটাই করবে না রিয়াল। মৌসুমের শেষ পর্যন্ত তাঁকে সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের। অবশ্য এর মধ্যে রিয়ালের ফর্মে উন্নতি না এলে অন্য কথা। ফুটবলবিষয়ক ব্লগ ইএসপিএনও লিখেছে, মাদ্রিদ জিদানকে রাখতে চায়, জিদানেরও পদত্যাগ করার কোনো ইচ্ছা নেই।
তা যে নেই, সেটি অবশ্য পরশু ম্যাচের পরই বোঝা গিয়েছিল জিদানের কথায়। তাঁর চাকরি নিয়ে প্রশ্নেও ফরাসি কোচ বলেছিলেন, ‘যা হবে দেখা যাবে।’ চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তার এই চাপের সঙ্গে জিদান কীভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন, সেটি নিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়েছিল বেত্তোনিকে। তাঁর কথায়ও বোঝা গেল, জিদান চাপমুক্তই রাখছেন নিজেকে, ‘কোচ ফুটবল ভালোবাসেন। এই অসাধারণ ক্লাবে কোচিং করাতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবেন। সময়টা কঠিন যাচ্ছে, কিন্তু তাঁর কষ্টটা এই মুহূর্তে আমাদের (দলের) সঙ্গে থাকতে পারছেন না বলে। কিন্তু তিনি বাসায় বসেই আমাদের সমর্থন করে যাবেন।’
চাকরির অনিশ্চয়তা জিদানের মনে ছাপ ফেলতে পারেনি বলেও জানালেন বেত্তোনি, ‘প্রতিদিন সকালেই তাঁকে খুশি দেখি, মুখে হাসি থাকে তাঁর। অনুশীলন করানোর তাড়না থাকে। আমরা সবাই এভাবে চালিয়ে যেতে উন্মুখ। এই কাজটাকে আমরা ভালোবাসি, আর এখানে এই খেলোয়াড়দের সঙ্গে থাকতে পেরে আমরা সবাই-ই খুশি।’
আগামীকালের ম্যাচ নিয়েও রিয়ালকে ঘিরে আশা জানিয়ে রেখেছেন রিয়ালের সহকারী কোচ, ‘আজ সকালে আমাদের অনুশীলন সেশনটা বেশ ভালো কেটেছে। আমরা সবাই একসঙ্গে জেতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে চাই, কাল সেটি কাজে প্রমাণ করার একটা সুযোগ আসছে আমাদের সামনে। ভালো একটা ম্যাচ খেলার জন্য প্রস্তুত আমরা।’
তবে কালকের ম্যাচ তো নয়ই, আপাতত সামনের কয়েক ম্যাচেই তরুণ উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার ফেদেরিকো ভালভার্দেকে পাচ্ছে না রিয়াল। জিদানের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরের পাশাপাশি আজ রিয়াল এটিও নিশ্চিত করেছে যে ভালভার্দে মাংসপেশির চোটে পড়েছেন, এক মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাঁকে।