জিদান পিএসজির, জিদান পিএসজির নন
এ তো দেখা যাচ্ছে কিলিয়ান এমবাপ্পের পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়া না–যাওয়ার মতোই আরেক নাটকে রূপ নিচ্ছে। একবার শোনা যায়, জিনেদিন জিদান আগামী মৌসুমে পিএসজির কোচ হচ্ছেন, তো পরক্ষণে খবর আসে ফরাসি কিংবদন্তির পিএসজির ক্রীড়া প্রকল্প পছন্দ হয়নি। রিয়াল মাদ্রিদ আর মার্শেইয়ের প্রতি ‘জিজু’র টানকেও তাঁর পিএসজিতে যাওয়ার পথে বড় বাধা বলে মনে করা হয়।
নাটকের নতুন ধাপে আজ আবার বেশ জোরেশোরেই উঠেছে জিদানের পিএসজির কোচ হওয়ার গুঞ্জন। ফরাসি বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, আগামী মৌসুমে পিএসজির কোচ হতে ফরাসি ক্লাবটির সঙ্গে প্রাথমিক সম্মতি হয়ে গেছে জিদানের।
তবে পিএসজি–ভক্তদের এখনই একেবারে উচ্ছ্বাসে ভেসে যেতে বাধা দেবে ফ্রান্সের সংবাদ সংস্থা এএফপি। তাদের পক্ষ থেকে পিএসজির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, সেখান থেকে জিদানের সঙ্গে কোনো ধরনের মৌখিক বা লিখিত সম্মতির কথা অস্বীকারই করা হয়েছে।
ফরাসি রেডিও স্টেশন ইউরোপ আঁর খবরের পর মূলত জিদানের পিএসজিতে যাওয়ার গুঞ্জন আবার আওয়াজ পেয়েছে। কোনো সূত্রের উল্লেখ না করেই আজ রেডিও স্টেশনটি জানায়, মরিসিও পচেত্তিনোর বদলে পিএসজির ডাগআউটে বসতে যাচ্ছেন জিদান।
রিয়াল মাদ্রিদকে কোচ হিসেবে প্রথম দফায় তিন বছরে টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানোর ইতিহাস গড়ার পাশাপাশি একবার লিগ জেতা, দ্বিতীয় দফায় আরেকবার লিগ জেতানো ফরাসি কিংবদন্তির সঙ্গে চুক্তির মূল বিষয়গুলোতে সমঝোতা হয়ে গেছে বলেই জানিয়েছে চ্যানেলটি।
এরপর ফরাসি আরেক চ্যানেল আরএমসি স্পোর্তও জানিয়েছে, জিদান ও পিএসজি ‘সমঝোতার খুব কাছাকাছি চলে গেছে’। তারা অবশ্য ক্লাবের ভেতরের একটি পক্ষকে সূত্র হিসেবে জানিয়ে লিখেছে, ক্লাবের ভেতরের পক্ষগুলো জিদানের সঙ্গে আলোচনার কথা অস্বীকার করছে না। তবে এখনো চুক্তি সই হয়নি। শিগগিরই চুক্তি সই করতে জিদান কাতার যাবেন বলেও গুঞ্জন ভাসছে ফ্রান্সে।
তবে ফ্রান্সেরই রেডিও ফ্রান্স ইনফো জানাচ্ছে উল্টো তথ্য। ক্লাবের ভেতরের একটি পক্ষকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে তারা জানাচ্ছে, ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি কিংবদন্তির সঙ্গে ক্লাবের কোনো ধরনের চুক্তি হয়নি। একই কথা জানাচ্ছে এএফপিও।
জিদানের পিএসজির কোচ হওয়ার গুঞ্জন তো অনেক দিন ধরেই বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, কাতারে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কাতারি মালিকানাধীন পিএসজি ক্লাবটিতে যত সম্ভব তারকা টেনে আনতে চায়—এমনটা শোনা গেছে বছর দু-তিনেক আগে থেকেই।
সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নেইমার আর কিলিয়ান এমবাপ্পে তো গেছেনই, গত মৌসুমে মেসি, রামোসরাও গেছেন পিএসজিতে। এমবাপ্পেকে রাখতে পিএসজির একেবারে সব দিয়ে দেওয়ার মতো তাড়নার কারণও সেটিই। কিন্তু তারকাখচিত দল নিয়ে গত মৌসুমে মাঠে—বিশেষ করে ইউরোপের সর্বোচ্চ মঞ্চে সাফল্য পায়নি পিএসজি।
পচেত্তিনোর অধীনে গত মৌসুমে শুধু লিগই জিতেছে পিএসজি, ২০১১ সালে কাতারি মালিকানায় যাওয়ার পর ১১ বছরে অষ্টমবার। কিন্তু ফরাসি কাপে তো শেষ ষোলোতে বাদ পড়েছেই, তার চেয়েও বড় ধাক্কা, চ্যাম্পিয়নস লিগেও শেষ ষোলোতেই বিদায় নিয়েছেন মেসি-নেইমার-এমবাপ্পেরা।
তখন থেকেই পিএসজির কোচের পদ থেকে পচেত্তিনোর ছাঁটাইয়ের গুঞ্জন। তাঁর বদলে জিদানকেই যে পিএসজির কাতারি মালিকদের সবচেয়ে বেশি পছন্দ, সেটিও এখন সর্বজনবিদিত গোপন খবর।
গত মৌসুমের ব্যর্থতার পর এরই মধ্যে পিএসজিতে কিছু বদল এসেছে। এমবাপ্পে চুক্তি নবায়ন করেছেন। আজই ঘোষণা এসেছে লুইস কাম্পোস পিএসজির ফুটবল উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিয়েছেন। ইংলিশ ওয়েবসাইট দ্য অ্যাথলেটিক জানাচ্ছে, ব্রাজিলিয়ান মহাতারকা নেইমারের জন্য ভালো প্রস্তাব পেলে তাঁকেও ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা পিএসজির। এর মধ্যে আসছে জিদানের যোগ দেওয়ার গুঞ্জনও।
কিন্তু এত দিন একদিকে খবর এসেছে, পিএসজির প্রয়োজনের চেয়ে ইচ্ছেমতো তারকা কিনে দল ভারী করার এই ‘ক্রীড়া প্রকল্প’ পছন্দ নয় জিদানের। ২০২২ বিশ্বকাপের পর তাঁর ফ্রান্স জাতীয় দলের কোচ হওয়ার ইচ্ছার কথাই শোনা গেছে বেশি। তার ওপর এমবাপ্পেকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে পিএসজি-রিয়াল মাদ্রিদের অহমের টানাটানির পর জিদান তাঁর প্রাণের ক্লাব রিয়ালকে আরেকটা ধাক্কা দিয়ে পিএসজিতে যাবেন, সেটির সম্ভাবনাও কম বলে ভেবেছেন অনেকে।
তা ছাড়া ফ্রান্সে জিদানের প্রিয় ক্লাবও পিএসজির প্রতিদ্বন্দ্বী মার্শেই! সব মিলিয়ে জিদানকে পিএসজির পাওয়া হচ্ছে না বলেই মনে হয়েছে অনেকের। যদিও ২০২০-২১ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার পর থেকে কোচিং থেকে ছুটিতেই আছেন জিদান।