জার্সি নকল করেছে বার্সেলোনা?

এই জার্সি পরেই গত রাতে সেলতা ভিগোর বিপক্ষে নেমেছিলেন মেসিরাছবি : রয়টার্স

প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই এবার নিজেদের ‘অ্যাওয়ে’ জার্সি নিয়ে প্রশংসা শুনে আসছে বার্সেলোনা। অধিকাংশ সমর্থকদেরই পছন্দ হয়েছে জার্সির নকশা। কালোর মধ্যে সোনালি বর্ণের কারুকাজ, পেছনে সোনালি হরফে লেখা খেলোয়াড়দের নাম ও জার্সি নম্বর মুগ্ধ করেছে সমর্থকদের। বিপক্ষ দলের সমর্থকদের অনেকে তারিফ করেছেন বার্সার জার্সি পৃষ্ঠপোষক নাইকি-র কাজ।

তবে এ সুনামের মাঝে হুট করে চলে এল সমালোচনার গুমোট বাতাস। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লাব কাইজার চিফসের বিপণন বিষয়ক পরিচালক জেসিকা মোতাং অভিযোগ করেছেন, তাঁদের জার্সি নকল করে বার্সেলোনা অ্যাওয়ে জার্সি বানিয়েছে নাইকিকে দিয়ে।

কাইজার চিফস এ বছর তাঁদের ৫০ তম বর্ষপূর্তি পালন করছে। সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তাঁরা জার্সির পৃষ্ঠপোষক নাইকিকে অনুরোধ করেছিল, এ বছরের জন্য একটু অন্য ধরনের, আলাদা নকশার জার্সি যেন করা হয়। নাইকি আবার বার্সেলোনারও পৃষ্ঠপোষক। নাইকিও সব শুনে তাঁদের জন্য একটা ডিজাইন বানিয়ে দেয়, কালো রঙের জার্সির ওপর সোনালি নকশা। ক্লাবের সভাপতি কাইজার মোতাং বহু বছর আগে এমন একটা জার্সি পরতেন, তাই নিজেদের জার্সির ডিজাইনের অনুপ্রেরণাও তাঁরা সেখান থেকেই নিয়েছিল। পরে বার্সেলোনার অ্যাওয়ে জার্সি যখন প্রকাশিত হলো, চোখ কপালে উঠে যায় কাইজার চিফস কর্তৃপক্ষের।

একই ধরনের জার্সি এবার পরছে কাইজার চিফসও
ছবি : কাইজার চিফস টুইটার

টাইমসলাইভকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন অভিযোগই করেছেন ক্লাবের বিপণন বিষয়ক পরিচালক জেসিকা মোতাং, ‘আমি এর মধ্যেই এই নিয়ে নাইকির সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনায় বসেছি। দেখুন, আমাদের সুবর্ণজয়ন্তীর জার্সিটা যেন সবার চেয়ে আলাদা হয়, সে ব্যাপারে অনেক উদ্যোগী ছিলাম। আমাদের সভাপতি কাইজার মোতাংও জার্সির রং নিয়ে অনেক নিঃসন্দেহ ছিলেন, কারণ আপনাদের হয়তো মনে থাকবে, আমাদের চেয়ারম্যানের একটা কালো-সোনালি জার্সি ছিল যা তিনি অনেক বছর আগে পরতেন। ওনার জার্সিতেও এমন কালোর ওপর সোনালি হরফে নাম লেখা থাকত। আর ডিজাইনটাও ক্লাবের ঐতিহ্য থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বানানো হয়েছিল, আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলে দিয়েছিলাম। এই উপলক্ষটা আমাদের কাছে ছোট খাট কোনো উপলক্ষ নয়। তাই আমরা সতর্ক ছিলাম, এবারের জার্সিটা যেন বিশেষ করে আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক হয়। বেশ কয়েকটা ডিজাইন আমাদের বানিয়ে দেখিয়েছিল নাইকি, আমাদের তেমন পছন্দ হয়নি। পরে এই ডিজাইনটা যখন আমাদের করে দেখাল, আমরা পছন্দ করলাম। নাইকি আমাদের জার্সি বানানোর জন্য যা করেছে তা প্রশংসার যোগ্য।’

কিন্তু কয়েক মাস পর যখন বার্সেলোনার অ্যাওয়ে জার্সিটা বের হলো, তা দেখে বেশ হতাশই হয়েছেন মোতাং, ‘বার্সেলোনার নতুন জার্সিটা বাজারে আসার আগেই ব্যাপারটা আমাকে জানানো হয়েছিল। সত্যি বলতে আমরা বেশ আশ্চর্য হয়েছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই, সুবর্ণজয়ন্তীর জার্সি হিসেবে আমাদের জার্সির বেশ চাহিদা ছিল বাজারে। এই ডিজাইনের জার্সি শুধু তাঁদের জন্যই করা উচিত ছিল যারা তাঁদের সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে অনেক রোমাঞ্চিত ছিল।’


শুধু তাই নয়, কাইজার চিফসের জার্সি বানানোর সময় কাঁচামাল নেই, এমন অজুহাত দিলেও বার্সেলোনার জন্য একই ধরনের জার্সি বানাতে কোনো সমস্যা হয়নি ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাইকির—এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন মোতাং, ‘আমি বুঝি নাইকি একটা প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে নানা ধরনের হিসেব-নিকেশ করে থাকে। কিন্তু আমাদের ব্যাপারটাও তাঁদের বুঝতে হবে, এটা আমাদের ক্লাবের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যে উপলক্ষে বানানো জার্সিটার অনেক চাহিদা থাকবে। কিন্তু আমাদের বলা হয়েছিল জার্সি বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাব রয়েছে। তাই আমরা আশ্চর্য হয়েছিলাম যখন একই ধরনের জার্সি বার্সেলোনার জন্যও বানাল নাইকি। আমি এটাও জানি যে এমন ডিজাইন হয়তো আবারও ব্যবহার করা হবে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে দুই ক্লাবের জার্সি প্রকাশের সময় অনেক কাছাকাছি হয়ে গিয়েছে।’

তবে শেষে বার্সেলোনাকে শুভকামনাও জানিয়েছেন মোতাং, ‘জার্সিটা অসাধারণ। আশা করব এই কালো-সোনালি বর্ণ বার্সাকেও ভালো কিছু উপহার দেবে যা আমাদের দিয়েছে।’বার্সেলোনার প্রতি সাদা পতাকা ওড়ালেও নাইকির প্রতি ক্ষোভ চাপা রাখেননি মোতাং, ‘নাইকির সঙ্গে আমাদের জুটিটা অসাধারণ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা নাইকির ওপর একটু হতাশ। কেননা সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আমরা সমর্থকদের জন্য অনেক বেশি কিছু করতে চেয়েছিলাম, যেটা হয়নি। জার্সি থেকে লাভও করতে চেয়েছিলাম অনেক, সেটাও হচ্ছে না।’