জার্মানি হলে বার্সেলোনা এত দিনে দেউলিয়া হতো
নিজেদের সেরা খেলোয়াড়কে নিয়ে যেতে চাইছে বার্সেলোনা। প্রকাশ্যে কাতালান ক্লাবটি কিছু না বললেও রবার্ট লেভানডফস্কি যে সেখানেই যেতে চাইছেন, সেটা এখন সবাই জানে। লেভানডফস্কি দুই দিন পরপর ক্লাব ছাড়ার আর্জির কথা জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমে। ওদিকে বায়ার্ন মিউনিখও এ নিয়ে যত কথা লেভানডফস্কিকে উদ্দেশ করেই বলেছে। কিন্তু পোলিশ স্ট্রাইকারের মন কোনোভাবেই গলছে না, ক্লাব তিনি ছাড়বেনই।
এবার তাই নিজেদের লক্ষ্য বদলেছে বায়ার্ন। জার্মান চ্যাম্পিয়নরা লক্ষ্য বানিয়েছে বার্সেলোনাকে। আর্থিক দুর্দশার কারণে লিওনেল মেসিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে বার্সেলোনা। ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে দামি দুই খেলোয়াড় ফিলিপে কুতিনিও এবং আতোয়ান গ্রিজমানকেও ক্লাবছাড়া করতে হয়েছে। সে দল কীভাবে লেভানডফস্কিকে কেনার কথা চিন্তা করে, তা নিয়ে বিস্ময়ের কথা জানিয়েছেন বায়ার্নের সাবেক সভাপতি। বলেছেন, জার্মানির ক্লাব হলে এত দিন বার্সেলোনাকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হতো।
দলবদলের বাজারে লেভানডফস্কির মতো একজন স্ট্রাইকারকে কেউ ছাড়তে চায় না সহজে। ৩৩ বছর হলেও এখনো মৌসুমে ৫০ গোলের নিশ্চয়তা দেন এই স্ট্রাইকার। তাঁকে পেতে বার্সেলোনা এর মধ্যেই প্রস্তাব দিয়েছে বলে শোনা যায়। কিন্তু বায়ার্ন মিউনিখ সেসব প্রস্তাবে রাজি হয়নি। লেভানডফস্কিকে যেন সহজে ছাড়তে না হয়, সে জন্য উচ্চমূল্য সেঁটে রেখেছে, যা দিতে অনিচ্ছুক বার্সেলোনা।
এত দিন তবু বায়ার্নের সব কথাবার্তা ছিল লেভানডফস্কি-কেন্দ্রিক। তাঁর এখনো চুক্তির মেয়াদ বাকি আছে, চুক্তির মেয়াদ থাকা অবস্থায় এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়—এমনটাই বলেছে তারা। কিন্তু এতেও যখন মন গলছে না, তখন সরাসরি বার্সেলোনাকেই আক্রমণ করেছে তারা। তা–ও এমন এক উপায়ে, যাতে বায়ার্নকে সরাসরি দোষারোপ না করা যায়। আবার বায়ার্নের সব ইচ্ছার কথা তাঁর মুখ দিয়েই বলিয়ে নেওয়া যায়।
বায়ার্নের সাবেক সভাপতি উলি হোয়েনেস বার্সেলোনার আর্থিক অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, শুধু স্পেনের ক্লাব বলেই বেঁচে যাচ্ছে দলটি। জার্মানির মতো কড়া নিয়ম চালু থাকলে এত দিনে ক্লাবটি বিলুপ্ত হতো, ‘বার্সেলোনা লেভানডস্কিকে নিতে চায়, অথচ ছয় মাস আগেও ওদের ১০০ কোটি পাউন্ডের বেশি দায় ছিল। জার্মানিই হলে বহু আগেই ওরা দেউলিয়া হতো। দেউলিয়া ঘোষণা করার জন্য বিচারকেরা দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। আর তারা বায়ার্নের খেলোয়াড়ের জন্য কোটি ডলারের প্রস্তাব পাঠাচ্ছে।’
হোয়েনেসের এমন বার্সেলোনা–বিরাগ অবশ্য নতুন। করোনার কারণে বার্সেলোনার আর্থিক দুর্দশা এতটা নগ্নভাবে ফুটে উঠেছে। এর আগপর্যন্ত বার্সেলোনাকে আদর্শ ক্লাব বলেই মনে করতেন হোয়েনেস। বায়ার্ন ওয়ানকে বলেছেন, ‘বার্সেলোনা আর অনুসরণ করার মতো আদর্শ ক্লাব নয়, এখন আর কোনোভাবেই নয়। মহামারির আগে বায়ার্ন আদর্শ ক্লাব ছিল। আর্থিক সাফল্য ছাড়া দারুণ সাফল্য প্রায় কেউই পায়নি। মহামারি কাজটা আরও কঠিন করে দিয়েছে। দর্শক ছাড়া এক বছরে প্রায় ১০ লাখ ইউরো হারিয়েছি। এ কারণে আমাদের সঞ্চয়ে হাত দিতে হয়েছে, একসময় যা অনেক বড় ছিল, তা একদম শেষ হয়ে গেছে। এখনো কিছু আছে, কিন্তু এমন চলতে থাকলে ভবিষ্যতে খুব কঠিন হয়ে যাবে।’
বায়ার্ন মিউনিখ এরই মধ্যে লিভারপুল থেকে ফরোয়ার্ড সাদিও মানেকে নিয়ে গেছে। সেনেগালের ফরোয়ার্ডের আবির্ভাবের পর ভাবা হয়েছিল, এবার লেভানডফস্কিকে ছেড়ে দিতে রাজি হবে বায়ার্ন। কিন্তু হোয়েনেস এমন চিন্তা উড়িয়ে দিয়েছেন, ‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার: ২০২৩ সালের গ্রীষ্ম পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে চুক্তি আছে রবার্টের। দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়াতেই সাদিওকে নিয়েছি। আমরা দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়াতেই লোক বাড়াচ্ছি। আক্রমণে সবার মধ্যে অদলবদল আনবে মানের অন্তর্ভুক্তি। সাদিওকে নেওয়ার সময় কারও বিদায়ের কথা মাথায় আনিনি।’