চেলসির ‘দায়িত্ব’ ছাড়ছেন আব্রামোভিচ, মালিকানা নয়
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আঁচ লেগেছে ফুটবলেও। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জানানো হচ্ছে প্রতিবাদ। ব্রিটেন তো রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবেও রাশিয়ার এ আগ্রাসনের বিরোধী।
ব্রিটেনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে হচ্ছে বিক্ষোভ। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে শুরু করে মিটিং-মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি—সবকিছুই হচ্ছে। এর মধ্যেই বিপাকে পড়েছে চেলসি। রাশিয়ান মালিক থাকার কারণে ইংলিশ ক্লাব হয়েও সাধারণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে ক্লাবটি।
২০০৪ সাল থেকে চেলসির মালিকের চেয়ারে রোমান আব্রামোভিচ। শোনা যায়, রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছের মানুষ এই আব্রামোভিচ। পুতিনের এত বছর ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকা ও তাঁর হাত শক্তিশালী করার পেছনে বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন এই ধনকুবের।
এরই মধ্যে হাউস অব কমন্সে চেলসির মালিকানা আব্রামোভিচের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে চেলসিকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহতি নিয়েছেন এই রাশিয়ান ধনকুবের। চেলসিকে এখন সরাসরি দেখভাল করবেন ক্লাবটির দাতব্য ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। তবে চেলসির মালিকানা এখনো ছাড়েননি আব্রামোভিচ।
গত রাতে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা জানিয়েছেন আব্রামোভিচ। চেলসির ওয়েবসাইটে বলেছেন, ‘চেলসিতে আমার ২০ বছরের মালিকানায় আমি সব সময় নিজেকে ক্লাবের একজন অভিভাবক হিসেবে দেখেছি। দায়িত্ব ছিল ক্লাবকে এমন পর্যায়ে নিয়ে আসা, যে পর্যায়ে ক্লাবটা এখন আছে। একই সঙ্গে চেলসির ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের দিকেও মনোযোগ দিয়েছি। সেই সঙ্গে সমাজে যেন ইতিবাচক ভূমিকা রাখা যায়, সে ব্যাপারেও খেয়াল রেখেছি। সব সময় ক্লাবের স্বার্থ মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখনো এই মূল্যবোধগুলো মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিই। তাই আজ ক্লাবের দায়ভার চেলসির দাতব্য ফাউন্ডেশনের সদস্যদের (ট্রাস্টি) হাতে তুলে দিচ্ছি। আমি মনে করি, চলমান সময়ে তাঁরা ক্লাব, খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও সমর্থকদের সবচেয়ে ভালোভাবে দেখাশোনা করতে পারবেন।’
বক্তব্যেই স্পষ্ট, মালিকানা ছাড়ছেন না আব্রামোভিচ। শুধু ক্লাবের নেতৃত্বের পদ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সরে দাঁড়িয়েছেন, এই যা। ক্লাবের যেকোনো কর্মকাণ্ডে তিনি সরাসরি যুক্ত থাকবেন না। চেলসির দাতব্য ফাউন্ডেশনের সদস্য হিসেবে আছেন ব্রুস বাক, জন ডিভাইন, এমা হেজ, পিয়ারা পাওয়ার, পল রামোস ও স্যার হিউ রবার্টসন।
আব্রামোভিচের অনুপস্থিতিতে তাঁরাই এখন চেলসির দেখভাল করবেন। যেসব সিদ্ধান্ত আগে আব্রামোভিচ নিতেন, সেগুলোই এখন দাতব্য ফাউন্ডেশনের সদস্যরা নেবেন।
সম্প্রতি হাউস অব কমন্সে অনুষ্ঠিত এক বিতর্কে সাংসদ ব্রায়ান্ট ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আব্রামোভিচের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং চেলসি ক্লাবের মালিকানা থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। ব্রায়ান্ট বলেন, তাঁর হাতে যে ফাঁস হওয়া নথি আছে, আর তাতে আব্রামোভিচ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তাতে কোনোভাবেই ইংল্যান্ডে একটি শীর্ষ ফুটবল ক্লাবের মালিকানা রাখতে পারেন না রাশিয়ান ধনকুবের। সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকার জানায়, তারা ব্রিটেনে বসবাসরত তিন রাশিয়ান ধনকুবেরের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে। এই তিনজনই রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। পুতিন গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছেন। প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার এমন আচরণের ঘোর বিরোধী ব্রিটেন সরকার।
এই তিনজনের একজন রোমান আব্রামোভিচ। এখন দেখা যাক, অভিভাবকত্বের দায়িত্ব ছাড়ার ফলে সমস্যা মেটে কি না। আজ রাত সাড়ে ১০টায় লিভারপুলের বিপক্ষে কারাবাও কাপের ফাইনাল খেলতে নামবে চেলসি।