কে জিতবে ইউরো? প্রশ্নটা আসলেই প্রায় ১০০ কোটি টাকার। ইউরোর চ্যাম্পিয়ন দল ১ কোটি ইউরো পাবে, বাংলাদেশি মুদ্রায় সেটা তো প্রায় ১০০ কোটি টাকাই। সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হবে ১১ জুন, শেষ ১১ জুলাই। ইউরোতে অংশ নিতে যাওয়া ২৪টি দলের খুঁটিনাটি জেনে নিলে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা সহজ হতে পারে আপনার জন্য।
পাভেল নেদভেদ, পিওতর চেক কিংবা টমাস রসিচকির মতো ডাকসাইটে তারকা এবারের চেক দলে নেই। তাতে কী? অন্যান্য যেকোনো বারের মতো এবারও চেক প্রজাতন্ত্র একতা ও দলীয় রসায়নের শক্তিতে বলীয়ান। টানা তিন বিশ্বকাপে জায়গা না পেলেও ইউরোতে ঠিকই সুযোগ করে নিয়েছে তারা। স্বাধীন দেশ হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর ইউরোতে থাকাটা অবশ্য অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছে তারা। ইংল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া ও স্কটল্যান্ডের গ্রুপ থেকে কী আশা করছে দলটা?
দল: চেক প্রজাতন্ত্র
ফিফা র্যাঙ্কিং: ৪০
দলে আছেন যাঁরা
গোলকিপার
টমাস ভাচলিক (সেভিয়া), জিরি পাভলেঙ্কা (ভেরডার ব্রেমেন), আলেশ মানদুস (সিগমা ওলোমুক)
সেন্টারব্যাক
টমাস কালাস (ব্রিস্টল সিটি), অন্দ্রেই সেলুটস্কা (স্পার্তা প্রাগ), ইয়াকুব ব্রাবেক (ভিক্টোরিয়া পালসিয়েনা), ডেভিড জিমা (স্লাভিয়া প্রাগ)
রাইটব্যাক/রাইট উইংব্যাক
ভ্লাদিমির কুফল (ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড), পাভেল কাদেরাবেক (হফেনহেইম)
লেফটব্যাক/লেফট উইংব্যাক
ইয়ান বোরিল (স্লাভিয়া প্রাগ), অ্যালেস ম্যাতেউ (ব্রেসিয়া)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার/ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার
টমাস সুচেক (ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড), অ্যালেক্স ক্রাল (স্পার্তাক মস্কো), টমাস হোলেস (স্লাভিয়া প্রাগ), পিওতর শেভচিক (স্লাভিয়া প্রাগ), মিশাল সাদিলেক (স্লোবান লিবেরেক)
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার
আন্তোনিন বারাক (হেল্লাস ভেরোনা), ভ্লাদিমির দারিদা (হার্থা বার্লিন)
উইঙ্গার/ওয়াইড মিডফিল্ডার
লুকাস মাসোপুস্ট (স্লাভিয়া প্রাগ), ইয়াকুব ইয়াঙ্কটো (সাম্পদোরিয়া), ইয়াকুব পেশেক (স্লোবান লিবেরেক), অ্যাডাম লোজেক (স্পার্তা প্রাগ)
স্ট্রাইকার
পাত্রিক শিক (বায়ার লেভারকুসেন), মিকায়েল ক্রমেনচিক (পিএওকে), মাতেই ভিদ্রা (বার্নলি), টমাস পেকহার্ট (লেগিয়া ওয়ারশ)
কোচ
ইয়ারোস্লাভ সিলহাভি
অধিনায়ক
ভ্লাদিমির দারিদা
ইউরোয় সেরা সাফল্য
রানার্সআপ (১৯৯৬)
গ্রুপে প্রতিপক্ষ
স্কটল্যান্ড (১৪ জুন)
ক্রোয়েশিয়া (১৮ জুন)
ইংল্যান্ড (২২ জুন)
শক্তি
মূল একাদশে বেশ দক্ষ কিছু খেলোয়াড় আছেন, যাঁদের ব্যক্তিগত নৈপূণ্য পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। স্ট্রাইকার পাত্রিক শিককের দৈহিক গড়ন প্রথাগত স্ট্রাইকারের মতো মনে হলেও এই ‘নাম্বার নাইন’ বল পায়ে দুর্দান্ত, গোল করার পাশাপাশি নিচে নেমে গোল বানিয়েও দিতে পারেন। সাম্পদোরিয়ায় আলো ছড়ানোর পর রোমায় অত ভালো করতে পারেননি। গত দুই বছর বুন্দেসলিগায় লাইপজিগ ও লেভারকুসেনে খেলে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। তবে আলাদাভাবে বলতে হয় ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেডের টমাস সুচেক ও ভ্লাদিমির কুফলের কথা।
এবার প্রিমিয়ার লিগে ওয়েস্ট হাম যে ইউরোপা লিগে জায়গা করে নিল, এর পেছনে দুই চেকের ভূমিকা অনেক। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হয়েও দলের সর্বোচ্চ ১০টা গোল করেছেন সুচেক। মিডফিল্ড থেকে রক্ষণকে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি আচমকা ওপরে উঠে সুচেকের গোল করা তাঁর দলের অন্যতম শক্তির জায়গা।
রাইটব্যাক হিসেবে ওপরে উঠে নিখুঁত ক্রস দেওয়ার ব্যাপারে এবার বেশ নাম কামিয়েছেন কুফল। হেল্লাস ভেরোনার হয়ে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে দুর্দান্ত খেলেছেন আন্তোনিন বারাক। ১৮ বছর বয়সী উইঙ্গার অ্যাডাম লোজেকও দলের গোপন হাতিয়ার হতে পারেন।
দুর্বলতা
দলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা রক্ষণভাগ। এক রাইটব্যাক ছাড়া ভরসা রাখার মতো কেউ নেই। মূল গোলকিপার টমাস ভাচলিক সেভিয়াতে মূল একাদশ সুযোগ পান না। অন্দ্রেই সেলুটস্কা প্রিমিয়ার লিগে স্যান্ডারল্যান্ডের হয়ে খেলতে গিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি, ফিরে গেছেন দেশে।
সঙ্গী সাবেক চেলসি ডিফেন্ডার টমাস কালাস এখন খেলেন দ্বিতীয় বিভাগের ব্রিস্টল সিটিতে। যে গ্রুপে হ্যারি কেইন ও আনতে রেবিচের মতো স্ট্রাইকার আছেন, এই রক্ষণ কীভাবে তাঁদের আটকে রাখতে পারে—দেখার বিষয়।
ঘরের বাইরে কীভাবে জিততে হয় সেটা না জানাও এই দলটার অন্যতম চিন্তার বিষয়। ইউরোতে ঘরের মাটিতে খেলছে না চেকরা।
সম্ভাব্য একাদশ ও খেলার কৌশল (৪-২-৩-১)
৪-২-৩-১ ছকেই দলকে খেলাতে পছন্দ করেন সিলহাভি। বল পায়ে না থাকলে চারজন ডিফেন্ডারের পাশাপাশি দুজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার মাঝখানে জমাট বেঁধে থাকতে পারেন, যাতে প্রতিপক্ষ সরাসরি প্রতি–আক্রমণ না করতে পারে। গোলকিপার ভাচলিকের ওপরে সেন্টারব্যাক হিসেবে সেলুটস্কার সঙ্গে খেলবেন কালাস, দুই ফুলব্যাক হিসেবে ডান দিকে কুফলের সঙ্গে বাঁয়ে খেলবেন ইয়ান বোরিল। বছরখানেক আগেও স্লাভিয়া প্রাগে দুজন একসঙ্গে খেলতেন, তাই তাঁদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া আছে।
মাঝমাঠে সুচেকের সঙ্গে খেলবেন ক্রাল, নিশ্চিত করবেন সুচেক যেন সময়-সুযোগমতো ওপরে উঠে গিয়ে আক্রমণভাগের বাড়তি শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারেন। এমনকি সেটপিসেও গোল করার ক্ষেত্রে সুচেক ভয়ংকর। আক্রমণে পাত্রিক শিকের নিচে দুই উইঙ্গার হিসেবে খেলবেন লুকাস মাসোপুস্ট ও ইয়াকুব ইয়াঙ্কটো। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশি অধিনায়ক ভ্লাদিমির দারিদার। যদিও আন্তোনিন বারাকের সঙ্গে তাঁর লড়াই হবে বেশ। অভিজ্ঞ ইয়াঙ্কটোর সঙ্গে শিকের বোঝাপড়ার ওপর চেকদের আক্রমণের অনেকটাই নির্ভর করবে।
আমরা গ্রুপ পর্ব থেকে উঠে নকআউট পর্বে খেলতে চাই। এরপর যেকোনো কিছু হতে পারে। কিন্তু সবার আগে আমাদের গ্রুপপর্ব পেরোতে হবে
প্রত্যাশা ও বাস্তবতা
আলাদা দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর প্রতিটি ইউরোতে খেলেছে চেকরা। ফাইনালেও উঠেছে। কিন্তু এবার অত দূর আশা করছে না দলটা। ইংল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া ও স্কটল্যান্ডের গ্রুপ থেকে কোনোরকমে নকআউট পর্বে উঠতে পারলেই সেটাকে নিজেদের সাফল্য বলে মনে করবে তারা।