চুক্তি চূড়ান্ত, খেলোয়াড়ও হাজির, খেলাতে পারবে বার্সেলোনা?
এখন আর গুজব বা গুঞ্জনে আটকে নেই খবরটি। স্পেন জাতীয় দলের উইঙ্গার ফেরান তোরেস যে বার্সেলোনায় যোগ দিচ্ছেন, এটা এখন নিশ্চিত খবর। স্পেন বা ইউরোপিয়ান ফুটবলের বিশ্বাসযোগ্য সব সাংবাদিক নিশ্চিত করেছেন ৫ কোটি ৫০ লাখ ইউরোতে (শর্ত সাপেক্ষে যা ৬ কোটি ৫০ লাখ ইউরো হতে পারে) ম্যানচেস্টার সিটি থেকে বার্সেলোনাতে যাচ্ছেন ২১ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।
তোরেসও খবরটা নিশ্চিত করেছেন অন্যভাবে। ১৬ ঘণ্টা আগেই নিজের অনুশীলনের একটি ভিডিও দিয়েছেন টুইটারে। তোরেসের নিজ শহর ভ্যালেন্সিয়ায় ফেরা এবং সেখানে একা একা অনুশীলন করা একটি ইঙ্গিতই দেয়, সিটির সঙ্গে সম্পর্ক চুকেবুকে যাচ্ছে তাঁর। এদিকে আজই বার্সেলোনার সঙ্গে মেডিকেল সম্পন্ন হয়েছে ফেরান তোরেসের। তবু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারছে না বার্সেলোনা।
আর্থিক দুর্দশার মধ্যে থাকা বার্সেলোনা কীভাবে ৫ কোটি ৫০ লাখ ইউরো দিয়ে খেলোয়াড় কিনছে, এ নিয়েই প্রথমে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছিল। জানা গেছে, একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ধার নিয়েই আপাতত দলবদলের অর্থ জোগাড় করে নিয়েছে বার্সেলোনা। যত দুর্দশার মধ্য দিয়েই যাক, বার্সেলোনার মতো ক্লাবের অর্থের জোগান পেতে কখনোই খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। কিন্তু খেলোয়াড় কেনা আর খেলোয়াড়কে মাঠে নামানোর মধ্যে ঢের ফারাক আছে।
এ মৌসুমের শুরুতেই যা টের পেয়েছে বার্সেলোনা। মেসির চুক্তি শেষ হয়ে যেতে দিয়েছিল তারা। কারণ, তারা ধরেই নিয়েছিল, মেসি আবার নতুন করে চুক্তি করবেন। মেসি রাজিও হয়েছিলেন, আগের চুক্তির অর্ধেক বেতনেই। তবু মেসিকে ধরে রাখতে পারেনি বার্সেলোনা। কারণ, ধার করে মেসির বেতন দেওয়া সম্ভব হলেও কাগজে–কলমে যে সে ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল বার্সেলোনা! টানা দুই বছর আর্থিক ক্ষতির কারণে বার্সেলোনার এ মৌসুমের বেতনসীমা দাঁড়ায় মাত্র ৯ কোটি ৭০ লাখ ইউরোতে।
বর্তমান খেলোয়াড়দের ধরে রাখা সম্ভব হলেও মেসির চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায়, মেসিকে নতুন একজন খেলোয়াড় হিসেবেই দেখা হচ্ছিল আইনে। আর বার্সেলোনার বেতনসীমার অনেক ওপরে থাকায় মেসিকে চুক্তিবদ্ধ করতে পারেনি বার্সেলোনা।
বার্সেলোনার ঝামেলা সেখানেই শেষ হয়নি। এ মৌসুমে দলবদলে দারুণ একটা কাজ করেছে বার্সেলোনা। অন্য ক্লাবে চুক্তি শেষ হয়ে গেছে, এমন খেলোয়াড়দের মুফতে দলে টেনেছে তারা। মেম্ফিস ডিপাই, সের্হি আগুয়েরো ও এরিক গার্সিয়াকে দলে টেনেও অবশ্য চুক্তিবদ্ধ করতে পারছিল না তারা। ওই যে বেতন সীমার ওপরে। ত্রিনকাও, এমারসনের মতো খেলোয়াড়দের বিক্রি করে, পিয়ানিচ ও গ্রিজমানদের ধারে পাঠিয়েছে বার্সেলোনা। ক্লাবের চার অধিনায়ক বেতন অর্ধেক করে, বেতনের খরচ কমিয়ে আনার পরই ডিপাই, আগুয়েরো, গার্সিয়াদের বার্সেলোনার খেলোয়াড় বলে মেনে নিয়েছে লা লিগা।
জানুয়ারির দলবদলেও একই ঘটনা ঘটতে চলেছে। এরই মধ্যে আগুয়েরো অবসর নিয়ে ফেলায় বেতন খরচ কিছুটা কমেছে। কিন্তু মৌসুমের মাঝপথে জাভি কোচ হয়ে এসেছেন। তাঁর সঙ্গী সহযোগী স্টাফ যোগ দিয়েছেন আরও কজন। আনসু ফাতি ও পেদ্রি চুক্তি নবায়ন করেছেন বেতন বাড়িয়ে। ফলে বার্সেলোনার বেতন আবারও নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এখন তোরেসকে যত কম বেতনই দেওয়া হোক না কেন, তাঁকে চুক্তিবদ্ধ করতে দেবে না লা লিগার নিয়ম।
বার্সেলোনা এরই মধ্যে বেশ কিছু খেলোয়াড় বিক্রি করে ও ছেড়ে দিয়ে বোঝা কমাতে চাইছে। ধারে আসা ইউসুফ দেমির ও লুক ডি ইয়ংকে তাঁদের নিজ নিজ ক্লাবে ফেরত পাঠাচ্ছে তারা। ওদিকে সের্হিনিও দেস্ত, ফিলিপ কুতিনিও ও স্যামুয়েল উমতিতির মতো খেলোয়াড়দের বিক্রি করতে চাইছে বার্সেলোনা। বিশেষ করে দলে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে ওঠা কুতিনিও, উমতিতিকে অন্য ক্লাবে পাঠাতে পারলেই বাঁচে দলতি। এ দুজন মিলেই ৩ কোটি ইউরো বেতন নেন বার্সেলোনায়!
উসমান দেম্বেলেকে নতুন চুক্তিতে বেতন কমিয়ে ভবিষ্যতে বোনাস বেশি দিয়েও চাপ কমাতে চাইছে বার্সেলোনা। এসব কিছু মিললেই তোরেসকে আনুষ্ঠানিকভাবে লা লিগায় চুক্তিবদ্ধ করতে পারবে বার্সেলোনা।
বার্সেলোনার জন্য ঝামেলা সৃষ্টি করছে লা লিগার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম। বার্সেলোনার বেতন যেহেতু সীমা অতিক্রম করেছে, এখন খেলোয়াড় বিক্রি করে যত অর্থ আয় করবে বার্সেলোনা, তার পুরোটাই খেলোয়াড় কেনায় বা তাঁদের বেতনের পেছনে ব্যয় করতে পারবে না। নতুন আয়ের মাত্র ২৫ শতাংশ খরচের সুযোগ পাবে বার্সেলোনা। ফলে তোরেসকে বেতন হিসেবে যা দেবে বার্সেলোনা, তার চার গুণ অর্থ বের করে নিতে হবে; সেটা বেতন কমিয়ে হোক বা খেলোয়াড় ছেড়ে দিয়ে। আগামী কিছুদিন সেটা নিশ্চিত না করে তাই তোরেসকে লা লিগায় চুক্তিবদ্ধ করতে পারছে না বার্সেলোনা।