চারটার কম গোলই করছে না বার্সেলোনা
জাভি কি তবে ধীরে ধীরে বার্সেলোনার সুদিন ফিরিয়ে আনছেন?
সম্প্রতি কিছু ম্যাচের স্কোরলাইন অন্তত সেটিই বলছে। বলছে এসব ম্যাচে বার্সেলোনার খেলার ধরনও। গত রাতে লা লিগার ম্যাচে অ্যাথলেটিক বিলবাওকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে জাভির শিষ্যরা। এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচে অন্তত ‘এক হালি’ করে গোল করল বার্সেলোনা। ইউরোপা লিগের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে কিছুদিন আগেই নাপোলিকে ৪-২ গোলে হারিয়েছিল বার্সেলোনা। তারও আগে ভ্যালেন্সিয়াকে ওড়ায় ৪-১-এ। শেষ পাঁচ ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই চারটি করে গোল করল বার্সা, এর আগে আতলেতিকোকে হারিয়েছিল ৪-২ গোলে।
ম্যাচে ডাচ মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে বিশ্রাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জাভি। বুসকেতসের পাশে খেলানো হয়েছিল গাভি ও পেদ্রিকে। আক্রমণভাগে এই জানুয়ারিতেই দলে আসা তিন খেলোয়াড় আদামা ত্রাওয়ে, পিয়েরে-এমেরিক অবামেয়াং ও ফেরান তোরেসকে নামিয়ে দিয়েছিলেন জাভি। ওদিকে বিলবাও-ও বলতে গেলে খর্বশক্তির দল নিয়েই নেমেছিল, সামনেই ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে কোপা দেল রে-এর সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ, যে কারণে বিশ্রাম পেয়েছিলেন ইনাকি উইলিয়ামস, ইনিগো মার্তিনেজ ও ইকার মুনিয়াইনের মতো তারকারা।
১৮ মিনিটেই গোলের সুযোগ পেয়েছিল বার্সেলোনা। বাঁ প্রান্ত থেকে ফেরান তোরেসের বাড়ানো বল ঠিকঠাক মতো পোস্টে মারতে পারেননি গাভি। ৩২ মিনিটে অবামেয়াংয়ের পাস থেকে তোরেসের মারা শট আটকে দেন বিলবাওয়ের গোলকিপার উনাই সিমোন।
এরপর অবশ্য বার্সেলোনাকে গোলহীন থাকতে হয়নি। ৩৭ মিনিটে দানি আলভেজের কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে গোল করতে চেয়েছিলেন পিকে, কিন্তু এখানেও প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে যান সিমোন। শট আটকানোর পর বল নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি সিমোন, নিজেও পড়ে যান। ফলে সামনে ওঁত পেতে থাকা স্ট্রাইকার অবামেয়াং গোল করে এগিয়ে দেন বার্সাকে। প্রথমার্ধে এই একটা গোলই করেছে কাতালানরা। এই নিয়ে গত ৩ ম্যাচে ৫ গোল করলেন আর্সেনাল থেকে আসা গ্যাবনিজ স্ট্রাইকার।
এক গোলে এগিয়ে থাকা মোটেও স্বস্তিদায়ক কিছু নয়, হুট করে গোল হজম করে ড্র করার একটা ভয় থেকেই যায়। ৬৭ মিনিটে ফেরান তোরেসের জায়গায় ফরাসি উইঙ্গার উসমান দেম্বেলে আর গাভির জায়গায় ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং মাঠে নেমেই ব্যবধান বাড়ানোর লক্ষ্যে ঝাঁপান। এমনিতেই চুক্তি নবায়ন না করে বার্সা সমর্থকদের চোখের বালিতে পরিণত হয়েছেন দেম্বেলে, গত রাতে মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে দুয়োও শুনেছেন যে কারণে। কিন্তু এত দুয়ো আর ঘৃণার মধ্যেও দেম্বেলে নিজের কাজটা করেছেন ঠিকই।
৭৩ মিনিটে স্কোরলাইন ২-০ করার কাজটা তিনিই করেছেন, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের সহায়তায়। ৯০ মিনিটে গোলদাতা থেকে এবার সহায়তাকারীর ভূমিকায় চলে আসেন দেম্বেলে। ডাচ স্ট্রাইকার লুক ডি ইয়ংকে দিয়ে অসাধারণ এক গোল করান। ডান প্রান্ত থেকে আসা দেম্বেলের ক্রসে মাথা ছোঁয়ানো ছাড়া আর কিছু করার ছিল না ডি ইয়ংয়ের।
যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে আরেক ডাচ স্ট্রাইকার মেম্ফিস ডিপাইউকে দিয়ে গোল করান দেম্বেলে। ম্যাচ শেষ হয় ৪-০ স্কোরলাইনে। অবশ্য গোল করা ও করানো ছাড়াও দেম্বেলের আরেক দৃশ্য দেখে আশাবাদী হতে পারেন বার্সেলোনা সমর্থকেরা।
৭৩ মিনিটে নিজের গোলটা করার পর ডাগআউটে গিয়ে কোচ জাভিকে আলিঙ্গন করেন এই উইঙ্গার। বোর্ড সভাপতি থেকে শুরু করে ক্লাব সমর্থক সবাই দেম্বেলের দিকে বাঁকা চোখে তাকালেও এই জাভিই দিনের পর দিন ধরে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন দেম্বেলেকে। হয়তো এমনও হতে পারে, কোচের সমর্থন পেয়ে শেষমেশ বার্সার হয়ে চুক্তি নবায়ন করেই ফেললেন এই ফরাসি উইঙ্গার। আগামী জুন পর্যন্ত সময় তো আছেই।
আলিঙ্গনটা হয়তো সে সুখবরেরই আগাম ইঙ্গিত!