চলে গেলেন মাঝমাঠের সেই নুরুল হক মানিকও
ফুটবল অঙ্গনে যেন মৃত্যুর মিছিল চলছে। কদিন আগেই পরপারে চলে যান সাবেক ফুটবলার গোলাম রাব্বানী হেলাল। পরপরই এই পৃথিবীকে বিদায় জানান আরেক সাবেক জাতীয় ফুটবলার এসএম সালাউদ্দিন। আজ বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে চলে গেলেন সাবেক ফুটবলার নুরুল হক মানিকও।
সাবেক জাতীয় ফুটবলার হাসানুজ্জামান বাবলু প্রথম আলোকে জানান, 'কয়েকদিন আগে সে বৃষ্টিতে ভিজেছিল। তারপর জ্বর আসে। গলা ব্যথা, কাশি, বুকে ব্যথা ছিল। এরপর নিজেই করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়। আজ সেই রিপোর্ট পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আর দেখে গেল না মানিক। আজ দ্রুত মানিকের অবস্থার অবনতি হয়। মৃত্যুর কয়েক মিনিটে আগে সে তার বন্ধু সোনালী অতীত ক্লাবের কোষাধক্ষ্য ইকবাল গাফফারের সঙ্গে শারীরিক সমস্যা নিয়ে কথা বলে। এর পরপরই সে মারা যায়।' মানিকের মৃত্যুর পর জানা যায়, তাঁর করোনা পজেটিভ। এর আগে সালাউদ্দিনেরও করোনার উপসর্গ ছিল।
১৯৮৫-১৯৮৭ সাল পর্যন্ত মানিক আরামবাগে খেলেন। পরের বছর ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুলে। ১৯৮৯-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ব্রাদার্সে কাটিয়ে নাম লেখান মোহামেডানে। ১৯৯৪-১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন সাদাকালোয়। ১৯৮৭-১৯৯৭ সাল, এই দশ বছর জাতীয় দলে জার্সি ছিল তাঁর গায়ে। ঢাকার ফুটবলে মানিক অধিনায়ক ছিলেন চারটি দলের। ১৯৮৭ সালে আরামবাগ, ১৯৮৮ ইয়ংমেন্স, ১৯৯১ ব্রাদার্স ও ১৯৯৫ সালে মোহামেডানের। মানিক ছিলেন তাঁর সময়ে দেশের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার।
ঢাকার ফুটবলে চারটি দলে খেলে সব দলেরই অধিনায়ক হওয়া তাঁর কাছে বড় এক গর্ব ছিল। আবাহনীর জার্সি গায়ে অতিথি খেলোয়াড় হিসেবে একটি ম্যাচ খেলেছেন এশিয়ার কাপ উইনার্স কাপে, কলকাতা ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে ঢাকায়।
বাবা এ কে এম মোজাম্মেল হক পিডব্লিউডির হিসার রক্ষক কর্মকর্তা ছিলেন, ফুটবল পাগল মানুষটির হাত ধরেই কিশোর মানিক স্টেডিয়ামে যেত ফুটবল দেখতে। ছোটবেলায় পাইলট হওয়ায় স্বপ্নটা তাই ঘুরে গেল অন্যদিকে। ফুটবলই হয়ে গেল জীবনের বড় পরিচয়। পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুরের মতলবে হলেও ঢাকায় থাকার সুবাদে ঢাকা স্টেডিয়ামে নিয়মিত যাওয়ার সুযোগ তাঁর ফুটবল প্রেম জাগিয়ে তোলে আরও বেশি। প্রেমটা ক্রমশ বাড়তে লাগল আশীষ ভদ্রকে দেখে। 'এই প্লে-মেকারের খেলা আমাকে খুব টানত। ভাবতাম, তাঁর মতো ফুটবলার হব'— কিছুদিন আগে প্রথম আলোকে বলেছিলেন মানিক।
খেলা ছেড়ে কোচ হন। তৃণমূলে কাজ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন বাফুফের কোচ। স্বপ্ন ছিল দেশের ফুটবল উন্নয়নের নিরলস কাজ করবেন। কিন্তু তা আর হলো না। কাজটা অসমাপ্ত রেখেই ৫৫ বছর উর্ধ্ব নুরুল হক মানিক চলে গেলেন পরপারে, যেখান থেকে ফিরে আসবেন না আর কখনোই। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, সোনালী অতীত ক্লাব।