চরমপন্থীর সঙ্গে সংযোগের অভিযোগে ২৯ বছরেই অবসর
ফ্রাঙ্কফুর্টের হয়ে ইউরোপা লিগ জিতেছেন এখনো এক মাসও হয়নি। ১৯৮০ উয়েফা কাপের (এখন যেটি ইউরোপা লিগ) জার্মান ক্লাবটির ইতিহাসে দ্বিতীয় ইউরোপিয়ান সাফল্য, তাঁর নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম—সবচেয়ে বড় সাফল্যও। বয়সও হয়েছে মাত্র ২৯, তেমন কোনো চোটের ইতিহাসও নেই। ডিফেন্ডারদের ক্যারিয়ারের গড় স্থায়িত্ব হিসাব করলে আরও পাঁচ-ছয় বছর অনায়াসে খেলে যাওয়ার কথা তাঁর। কিন্তু মার্টিন হিন্টারেগার অবসর নিয়ে নিলেন!
নাকি বলা ভালো, নিতে বাধ্য হলেন? নতুন নাৎসিবাদী সংগঠনের এক রাজনীতিবিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠেছে অস্ট্রিয়ান ডিফেন্ডারের বিরুদ্ধে। অ্যাডলফ হিটলারের দেশ জার্মানির ক্লাবে খেলেন তিনি, এমন অভিযোগে সহজে নিস্তার পাওয়ার কথা নয়। হিন্টারেগার পানওনি। বিতর্ক এড়াতে আড়ালে চলে যাওয়াতেই মন স্থির করা, নিয়ে নিলেন অবসর।
গতকাল আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট নিশ্চিত করেছে, খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারের শেষ টেনে দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন হিন্টারেগার। ক্লাবের সঙ্গে তাঁর চুক্তিতে এক বছর বাকি থাকলেও হিন্টারেগারের চুক্তি বাতিলের অনুরোধকে সম্মান জানিয়েছে ফ্রাঙ্কফুর্ট।
একভাবে দেখতে গেলে অস্ট্রিয়ায় নিজের ছোটবেলার ক্লাব যে শহরে, সেই সিরনিৎজে একটা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে গিয়েই এত বিপাকে পড়তে হলো হিন্টারেগারকে। ‘হিন্টি কাপ’ নামের সেই টুর্নামেন্টের আয়োজনে তাঁর সঙ্গী ছিলেন তাঁরই সাবেক ব্যবসায়িক অংশীদার হাইনরিখ সিকল।
টুর্নামেন্টটির পরই সিকলের সঙ্গে হিন্টারেগারের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সিকল যে নব্বইয়ের দশকে অস্ট্রিয়ায় কাজ করা নব্য-নাৎসি একটি সংগঠনের সাবেক সদস্য! সম্প্রতি পশ্চিম ইউরোপে শ্বেতাঙ্গদের স্বার্থকে সবার ওপরে রাখার চরমপন্থী আন্দোলনে ব্যবহারের জন্য একটি জায়গা ভাড়া নিয়েছেন সিকল।
টুর্নামেন্টের পর সিকলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে চারদিকে সমালোচনা শুরু হলে ইনস্টাগ্রামে হিন্টারেগার দাবি করেছিলেন, তিনি নিষ্পাপ। সিকলের রাজনৈতিক পরিচয়ের ব্যাপারে নাকি কিছুই জানতেন না তিনি। ‘সিকল পরিবারের অতীত কর্মকাণ্ড বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। আমি শুধুই একটা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চেয়েছি, এর বেশি কিছু নয়’—হিন্টারেগারের ইনস্টাগ্রাম পোস্ট। সিকল পরিবারের পরিচয় জানার পর তাদের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণাও দেন হিন্টারেগার।
কিন্তু তাতেও বিশেষ লাভ হলো না। সমালোচনা চলেছে, তাঁর জীবনাচরণ আতশি কাচের নিচে এসেছে। সমাধানে অবসরই বেছে নিলেন হিন্টারেগার। কেন অবসরের সিদ্ধান্ত, সেটির ব্যাখ্যা অস্ট্রিয়ান ডিফেন্ডার দিয়েছেন ক্লাব আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের ওয়েবসাইটে, ‘গত শরতে আমি মৌসুম শেষে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবতে শুরু করি। (চারদিকের সমালোচনার কারণে) মাঠে খুব কঠিন সময় চলছিল আমার, পারফরম্যান্স নড়বড়ে ছিল। জিতলে সেটির আনন্দ তেমন হচ্ছিল না, হারের ব্যথা ছিল দ্বিগুণ। বসন্তে আমার পারফরম্যান্সে উন্নতি আর ইউরোপা লিগে আমাদের সাফল্য মিলিয়ে মাঠে দারুণ সাফল্য নিয়ে বিদায় নিতে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হই।’
নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়েও বিদায়বেলায় কথা বলেছেন হিন্টারেগার, ‘সর্বশেষ কয়েক সপ্তাহে আমার হিন্টি কাপের আয়োজন ঘিরে অনেক ইস্যুর জন্ম হয়েছে। টুর্নামেন্টটা আমি পুরো আবেগ দিয়ে, সাদা মনে আয়োজন করেছি। কিন্তু সেটি ঘিরে ওঠা সমালোচনার ফল এখন পেছনে ফিরে তাকিয়ে ভালোভাবে বুঝতে পারছি।’ সমালোচনার জবাবে মাঝেমধ্যে নিজে অনেক জবাব দিয়েছেন, তার কিছু হয়তো কঠোর ভাষায় ছিল। সেসবের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন হিন্টারেগার।
শেষে এসে শ্বেতাঙ্গদের দাপট পুনঃস্থাপনের আন্দোলন, চরমপন্থী রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে অস্ট্রিয়ান ডিফেন্ডারের দাবি, ‘আরেকবার পরিষ্কার করে জানিয়ে দিই, ডানপন্থী ভাবনাকে আমি ঘৃণা করি। অসহনীয় ও অমানবিক আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই। যাঁরা আমাকে চেনেন, তাঁরা জানেন এটি। আপাতত আমি সবকিছু থেকে দূরে গিয়ে নিজের জীবনটাকে আরেকবার গুছিয়ে নিতে চাই। আমাকে এই মুহূর্তে এ সিদ্ধান্তে আসতে সাহায্য করায় আইনট্রাখটের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’