কী হলো বার্সেলোনার!
ঘরের মাঠটা যে 'পর' করে দিচ্ছে স্প্যানিশ পরাশক্তিদের। ইউরোপা লিগের আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের ম্যাচ দিয়ে শুরু। সেই ম্যাচ, যে ম্যাচে ক্যাম্প ন্যু দখল করে নিয়েছিলেন জার্মান ক্লাবটির সমর্থকেরা। ঘরের মাঠে ২–৩ গোলে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল বার্সাকে। এরপর লা লিগায় পুঁচকে কাদিজের কাছে হার। আর আজ তো রায়ো ভায়েকানোর কাছে ১-০ গোলে হেরে ক্যাম্প ন্যুতে হারের হ্যাটট্রিক করে ফেলল জাভির বার্সেলোনা। ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বার ঘরের মাঠে টানা তিন ম্যাচ হারল স্প্যানিশ পরাশক্তিরা। তবে এক মৌসুমে ঘরের মাঠে টানা তিন ম্যাচে হার এবারই প্রথম।
এই ম্যাচের আগে পয়েন্ট তালিকার ১৪ নম্বরে পড়ে থাকা ভায়েকানোর এই জয়ের মাহাত্ম্য বোঝাতে কয়েকটি পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। এবার নিজেদের মাঠে লিগের প্রথম দেখায় বার্সেলোনাকে হারিয়েছিল দ্বিতীয় স্তর থেকে উঠে আসা ভায়েকানো। অক্টোবরের সেই ম্যাচেও জয় ১–০ গোলে। এর আগে কখনোই এক মৌসুমে বার্সাকে দুবার হারাতে পারেনি ভায়েকানো।
নিজেদের ইতিহাসে মাত্র চতুর্থবার প্রথম বিভাগে উঠে আসা দলের কাছে দুবার হারল বার্সা। আজকের আগে সর্বশেষ এমন উদাহরণ খুঁজতে ফিরে যেতে হয় ১৯৯৭–৯৮ মৌসুমে। সেই মৌসুমে সালামানকা এমন লজ্জা উপহার দিয়েছিল বার্সাকে।
এই হারে বার্সার চির প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালের লা লিগা জয় এখন শুধু সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। দুই দলের পয়েন্ট-পার্থক্য এখন ১৫। ৩৩ ম্যাচে রিয়ালের পয়েন্ট ৭৮, বার্সার ৬৩। মুখোমুখি লড়াইয়ের হিসাবে এগিয়ে থাকা বার্সার লা লিগা জিততে মিলতে হবে 'মাত্র' দুটি সমীকরণ—রিয়ালকে বাকি সব ম্যাচে হারতে হবে, বার্সাকে জিততে হবে সব ম্যাচে।
এটা নিশ্চিত অসম্ভবের সেই স্বপ্ন বার্সাও দেখছে না। জাভির দলকে বরং নিশ্চিত করে ভাবাচ্ছে, কিভাবে এত এত সুযোগ নষ্ট হলো! পুরো ম্যাচেই যে একের পর এক আক্রমণে ভায়েকানোকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিল দলটি। কিন্তু ফুটবল গোলের খেলা। সেই গোল না পেলে আর লাভ কী!
প্রথম সুযোগেই একমাত্র গোলটি করে ভায়েকানো দেখিয়েছে শেষ পর্যন্ত গোলই সবকিছু। সেই গোলটি আবার ম্যাচের শুরুতেই। নিজেদের গুছিয়ে নিতে কিছুটা সময় নিয়েছিল বার্সেলোনা। ভায়েকানো সেই সুযোগটা নিয়েই এগিয়ে যায়। ডান প্রান্ত থেকে ইসি পালাজোনের দারুণ এক থ্রু খুঁজে নেয় আলভারো গার্সিয়াকে। স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের ১২ গজি নিচু শট ধরার মতো অবস্থানে ছিলেন না বার্সা গোলরক্ষক মার্ক–আন্দ্রে টের স্টেগেন। ম্যাচের বয়স তখন মাত্র সাত মিনিট।
প্রথমার্ধে এরপর বার্সার গোলপোস্টে আর কোনো শটই নিতে পারেনি ভায়েকানো। পারবেই বা কীভাবে, গোল করার চেয়ে গোল বাঁচাতেই যে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। প্রথমার্ধে ভায়েকানোর গোলে আটটি শট নিয়েছে বার্সেলোনা। ভায়েকানোর রক্ষণকে বেশি ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন ফরাসি ফরোয়ার্ড উসমান দেম্বেলে। তবে গোলের সবচেয়ে কাছে গিয়েছিলেন গাভি।
৪২ মিনিটে বার্সার নেওয়া এক কর্নার ভায়েকানোর রক্ষণের পা ঘুরে চলে যায় গাভির পায়ে। ১৭ বছর বয়সী তরুণ মিডফিল্ডারের শট বারের নিচে দিকে লেগে ফেরত আসে। ফিরতি বলটা ফেরান তোরেস জালেও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু পাঠালে কী হবে, স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড যে পরিষ্কার অফসাইড ছিলেন।
পরের মিনিটেই দেম্বেলেকে আটকাতে পেনাল্টি বক্সের বাইরে ফাউল করতে বাধ্য হয় ভায়েকানোর রক্ষণ। কিন্তু বাইরে মেরে ফ্রি-কিকটা শুধু নষ্টই করেছেন দেম্বেলে। এর আগে ২৮ মিনিটে পেনাল্টির আবেদন করে বার্সা। ভায়েকানোর ডিফেন্ডার কোমেসানাকে পেছনে ফেলতে গিয়ে পড়ে যান গাভি। পুরো ক্যাম্প ন্যু পেনাল্টির জন্য চিৎকার করলেও প্রথমে রেফারি ও পরে ভিএআর কানে তোলেনি তা। ৩৯ মিনিটেও পেনাল্টির জন্য চিৎকার করেছেন বার্সার সমর্থকেরা। বক্সের ঠিক বাইরে পড়ে যান দেম্বেলে। তবে এবার ভিএআরও দেখেননি রেফারি।
দ্বিতীয়ার্ধেও একই গল্প। বার্সার সুযোগের পর সুযোগ নষ্ট আর ভায়েকানোর দাঁতে দাঁত চেপে গোল ধরে রাখা।