গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েও ক্ষমা চাইছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক!
>টানা দুই ম্যাচ জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ। তবে অসংখ্য গোল মিসের অনুশোচনায় ভুগছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মিসরাত জাহান মৌসুমি।
অনুশোচনা বুঝি একই বলে! টানা দুই ম্যাচ জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে অনূর্ধ্ব–১৯ বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। তবে অসংখ্য গোল মিস করায় দলের খেলায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেনি মাঠে আসা অনেক দর্শক। তাই অনুশোচনায় ভুগছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মিসরাত জাহান মৌসুমি। অনুশোচনাবোধ এতটাই তীব্র যে অকপটে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সব শূন্যতা ভুলিয়ে দেওয়ার।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে আরব আমিরাতকে ২-০ গোলে হারানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে কিরগিজস্তানের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়। তিন দলের গ্রুপে টানা দুই জয় নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে স্বাগতিকেরা। প্রথম ম্যাচের তুলনায় দ্বিতীয় ম্যাচে মিসরাত জাহান মৌসুমিদের খেলায় উন্নতির ছাপ থাকলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ ছিল না। স্কোরলাইনটা বোঝাতে পারছে না ম্যাচের সঠিক চিত্র। অসংখ্য গোল মিস, অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলা এবং ব্যক্তিগত ঝলক দেখাতে গিয়ে ২৯ সেকেন্ডে গোলের খাতা খুলেও ব্যবধানটাকে খুব বেশি বড় বানাতে না পারা—আক্ষেপের জায়গা আছে অনেক। উল্টো বাংলাদেশ গোলরক্ষক রুপনা চাকমা হাত ফসকে গোল হজম করায় শেষ দিকে কিছুটা চাপই নিতে হয়েছে স্বাগতিকদের। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও তাই মৌসুমিদের খেলায় অনেকের অসন্তুষ্টি।
গতকাল বাফুফে অ্যাস্ট্রো টার্ফে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ককে দিতে হয়েছে অনেক ‘না’ হওয়ার জবাব। বিশেষ করে এত গোল মিস হচ্ছে কেন, তার ব্যাখ্যা। বিষয়টা উপলব্ধি করতে পেরে দেশবাসীর প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছেন মৌসুমি, ‘গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে ওঠায় খুশি। গতকাল (শুক্রবার) আমরা সবাই ৯৪ মিনিট পর্যন্ত লড়াই করেছি। তবে আমাদের ওপরে দেশবাসীর অনেক প্রত্যাশা। আমরা সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছি না। সে জন্য দেশের মানুষের কাছে দলের পক্ষ থেকে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা চেষ্টা করছি, সুযোগও পাচ্ছি, কিন্তু কাজে লাগাতে পারছি না। দেশবাসীর প্রতি দুঃখিত, ক্ষমা চাইছি।’
গতকালের ম্যাচে বাংলাদেশের বলের দখল ছিল ৬২ ভাগ। বাংলাদেশ শট নিয়েছে ২৯টি। এর মধ্যে গোলমুখেই ছিল ১৭টি শট। পরিসংখ্যান বলছে, ১৫টি গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। এসব পরিসংখ্যান দেখে ‘মাত্র’ এক গোলের ব্যবধানের জয়কে মনে হতে পারে কিরগিজস্তানের গোলরক্ষক চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন! প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক ভালো খেলেছেন, কিন্তু তাতে বাংলাদেশ ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতার ভূমিকাই বেশি! ফরোয়ার্ডরা গোলমুখে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে গোলরক্ষকের হাতে তুলে দিয়েছেন বল। এ ছাড়া গোলমুখের সামনে থেকেও শট পোস্টে রাখতে পারেনি।
অথচ ২০১৬ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বে এই মেয়েরাই প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে আদায় করে নিয়েছিল চূড়ান্ত পর্বের টিকিট। সেবার পাঁচ ম্যাচে মোট ২৬ গোল করেছিল কৃষ্ণা রানী সরকার, সানজিদা আক্তাররা। কিরগিজস্তানের বিপক্ষেই বাংলাদেশ জিতেছিল ১০-০ গোলে। ফলে, বাংলাদেশের মেয়েরাই প্রত্যাশা বাড়িয়ে রেখেছে। নিকট অতীতে ফুটবলের বেশ কিছু সুখবর তো এদের ঘিরেই। বয়স বেড়েছে তিন ধাপ, গোল আটটি কমে উল্টো এক গোল হজম। বয়সের ধাপ বাড়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মাঝের সময়ে কিরগিজর খুব বেশি উন্নতি করেছে বলে গতকালের খেলা দেখে মনে হয়নি। বরং বাংলাদেশের মেয়েদের পায়ে কিসের যেন আড়ষ্টতা।
আগে পারলেও এখন কেন পারছেন না? স্বাভাবিকভাবে ওঠে প্রশ্নটা। সেই অনূর্ধ্ব-১৬ দলের সহ-অধিনায়ক মৌসুমিই এখন ১৯ দলের অধিনায়ক। তুলনামূলক ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন, ‘শুরুর দিকে আমরাও হালি হালি গোল হজম করতাম। কিন্তু অনেক কঠোর পরিশ্রম করে এখন অনেক দলকে আমরা হালি হালি গোল দিই। আসলে কেউ বসে নাই। আমরা কিরগিজস্তানকে হালি হালি গোল দিয়েছিলাম। ওরা এখন কঠোর পরিশ্রম করে উন্নতি করেছে।’
মৌসুমির যুক্তিটা ফেলনার নয়। কিন্তু গোলমুখে সহজ ভুলগুলো দেখার যন্ত্রণা তাতে লাঘব হয় না। যাঁদের পায়ে গোল ছিল সহজতম কাজ, তাঁরাই যেন গোল করতে ভুলে গিয়েছেন। আগে দেখা যেত দৃষ্টিনন্দন সব গোল। আর এখন সহজ সুযোগটাই মিস করছেন। অবশ্য আশার আলো খুঁজে নেওয়া যায় এই ভেবে, প্রথম ম্যাচের তুলনায় দ্বিতীয় ম্যাচের উন্নতি। হয়তো প্রতি ম্যাচে উন্নতি করে ঠিকই নিজেদের চেনা ছন্দে ফিরে পাবেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা।