গোলে স্মরণীয় এরিকসেনের ফেরা
প্রীতি ম্যাচ। এ কারণে হারটা অত বেশি গায়ে লাগবে না ডেনমার্কের। কিন্তু এ প্রীতি ম্যাচেই এমন একটা ঘটনা হলো, যা হার ছাপিয়ে ডেনমার্কের ফুটবলপ্রেমীদের মনে থাকবে বহুদিন।
২৮৭ দিন পর গত রাতে দেশের হয়ে আবারও খেলতে নেমেছিলেন ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন। হ্যাঁ, সেই এরিকসেন, ২৮৭ দিন আগে যিনি আদৌ বেঁচে থাকবেন কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহের দোলাচলে ছিল পুরো ফুটবল দুনিয়া।
ইউরোতে ডেনমার্কের হয়ে ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নেমে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন এই মিডফিল্ডার। সংশয় ছিল, তিনি আর কখনো ফুটবল খেলতে পারবেন কি না। পরে কৃত্রিম যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে এরিকসেনের হৃদ্যন্ত্রে। সুস্থও হয়েছেন তিনি। কিন্তু ইতালির নিয়ম অনুযায়ী বুকে কৃত্রিম যন্ত্র বসানো কেউ সে দেশের ফুটবলে খেলতে পারেন না। এ কারণে ইন্টার মিলান তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে।
সব সংশয় তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে এরিকসেন অবশ্য ফুটবলে ফেরেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের নিচু সারির ক্লাব ব্রেন্টফোর্ডের সঙ্গে চুক্তি করেন তিনি। দলটির হয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে ক্লাব ক্যারিয়ার শুরু করেন আবার। বাকি ছিল জাতীয় দলের হয়ে প্রত্যাবর্তন। সে প্রত্যাবর্তনটাও কী রাজসিকই না হলো!
গত রাতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে ৪-২ গোলে হেরেছে ডেনমার্ক। ম্যাচে খেলতে নামা এরিকসেন গোলও পেয়েছেন। ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও দেওয়া হয়েছে এই মিডফিল্ডারকে। ডেনমার্কের বড় হার, নেদারল্যান্ডসের জয়—সবকিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে এসব। দেশের ইতিহাসের অন্যতম কৃতী ফুটবল-সন্তান আবারও ফিরেছেন গোলের ধারায়, আবারও নেমেছেন দেশের হাল ধরার কাজে। হার ছাপিয়ে ডেনমার্কের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এটাই তো সবচেয়ে বড় হয়ে উঠবে!
মূল একাদশে ছিলেন না। দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রাঙ্কফুর্টের ইয়েসপের লিন্ডস্টর্মের জায়গায় মাঠে নামেন এরিকসেন। ততক্ষণে ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়েছে ডেনমার্ক। মাঠে নামার দুই মিনিটের মধ্যেই এরিকসেন-ঝলক। ডান প্রান্ত থেকে উইঙ্গার আন্দ্রেয়া স্কোভ ওলসেনের পাসে বাতাসে ভাসানো বাঁকানো শটে ব্যবধান কমান এরিকসেন। দুর্দান্ত এ শট দেখে কে বলবে, গত সাত-আট মাস এই লোকের ওপর কী ঝড়ঝাপটাই না বয়ে গেছে!
আরও একটা গোল পেতে পারতেন এরিকসেন। তবে ব্রেন্টফোর্ডে খেলা এই মিডফিল্ডারের সেই শট পোস্টে লাগে।
ম্যাচটা ছিল আয়াক্সের মাঠ আমস্টারডাম অ্যারেনায়। ক্যারিয়ারের শুরুতে এটাই ছিল এরিকসেনের ঘর। আয়াক্সের সাবেক এই মিডফিল্ডারের কথায়ও ফুটে উঠেছে সেই আবেগ, ‘আমি খুশি বলটা যে ঠিক সময় আমার কাছে এসেছিল। আমার মনে হয়েছে, আমার গোলটা বেশ সুন্দর হয়েছে। আমার প্রত্যাবর্তন এমন সুন্দর হবে, এমনটাই আশা করেছিলাম। এ মাঠও আমার জন্য বিশেষ একটা জায়গা, সুস্থ হওয়ার পর দেশের হয়ে এ মাঠেই আবার খেলা শুরু করতে পারায় বেশি ভালো লাগছে।’
১৬ মিনিটেই ডেলেই ব্লিন্ডের সহায়তায় নেদারল্যান্ডসকে এগিয়ে দেন টটেনহামের উইঙ্গার স্টিভেন বের্গভেইন। তিন মিনিট পরই ডেনমার্ককে সমতায় ফেরান সেন্টারব্যাক ইয়ানিক ভেস্টেরগার্ড। ২৯ মিনিটে ডিফেন্ডার নাথান আকের গোলে আবারও এগিয়ে যায় ডাচরা। ৩৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ব্যবধান ৩-১ করে ফেলেন বার্সেলোনার তারকা মেম্ফিস ডিপাই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এরিকসেনের সেই গোল। ৭১ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করে ম্যাচের ফলাফল নিয়ে আর কোনো সংশয় রাখেননি বের্গভেইন। নেদারল্যান্ডসও ৪-২ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
জাতীয় দলের হয়ে আবারও ডাক পাওয়ার আগে লিগে বার্নলি ও নরউইচ সিটির বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলেছেন এরিকসেন।