গোলশূন্য ড্রয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ম্যাচ। শেষ দিকে পেনাল্টি থেকে গোলে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে ১–০ ব্যবধানের জয় পেয়েছে বসুন্ধরা কিংস। এমন কষ্টের জয়ের পরও উল্লাস নেই বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা স্টেডিয়ামে।
প্রিয় সতীর্থকে বিদায় দেওয়ার কষ্ট কিংস খেলোয়াড়দের। বড় চোট পেয়ে মৌসুমের মাঝপথেই ঢাকা ছাড়ছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার জোনাথন ফার্নান্দেজ। আগামীকাল রাতে ব্রাজিলের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন তিনি। আজ ম্যাচ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে জোনাথনকে বিদায় জানাল বসুন্ধরা।
প্রিয় সতীর্থর বিদায়ক্ষণে বসুন্ধরার অভিজ্ঞ খেলোয়াড় তৌহিদুল আলম বলছিলেন, ‘জোনাথনের মতো খেলোয়াড় বাংলাদেশে হঠাৎ আসেন। মাঠে আমরা সবাই দেখেছি জোনাথন কত উঁচু মাপের খেলোয়াড়। মাঠের বাইরে সে অসাধারণ মানুষ।’
জোনাথনকে জয়ে বিদায় দেওয়ার কাজটি করেছেন জোনাথনের স্বদেশি বন্ধু রবসন। পেনাল্টি থেকে গোলটি তাঁরই। ৮০ মিনিটে বিতর্কিত পেনাল্টি পায় কিংস। কিংস অধিনায়ক রবসন ও শেখ রাসেল ডিফেন্ডার নাসিরউদ্দির চৌধুরীর মধ্যে বল দখলের লড়াইয়ে রবসন মাটিতে পড়ে গেলে পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি। পেনাল্টির বিপক্ষে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন শেখ রাসেলের খেলোয়াড়েরা। এতে কর্ণপাত করেননি রেফারি। স্পট কিক থেকে বল জালে জড়ান রবসন।
বসুন্ধরা দলটা যেন ছোটখাটো হাসপাতালের মতো। দলে চোট এতটাই প্রভাব ফেলেছে যে বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে কেবল খেলতে পারছেন রবসন। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে চোটের কারণে আজ নিয়মিত একাদশ থেকে ছিটকে গিয়েছেন ডিফেন্ডার তারিক কাজীও।
এ অবস্থায় একাদশ সাজাতে গিয়ে অস্কার ব্রুজোনের গলদঘর্ম অবস্থা। প্রথাগত রাইটব্যাক বিশ্বনাথকে খেলানো হয়েছে সেন্টারব্যাক। তাঁর জায়গা পূরণ করতে গিয়ে রাইটব্যাকে খেলানো হয়েছে নিয়মিত লেফটব্যাক রিমন হোসেনকে। তাহলে লেফটব্যাকে খেলবেন কে? সেখানে আগের ম্যাচে বদলি নেমে জয়সূচক গোল করা ইয়াছিন আরাফাত।
এত ওলট–পালট সত্ত্বেও প্রধমার্ধটা একচেটিয়া খেলেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। প্রথম ৩০ মিনিটেই তিনটি ভালো সেভ দিয়ে শেখ রাসেলকে বাঁচিয়েছেন গোলকিপার আশরাফুল ইসলাম।
সাত মিনিটে প্রথম সুযোগটা পেয়েছিলেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম। ইয়াছিনের ক্রসে গোলমুখ থেকে ইব্রাহিমের হেড ডান দিকে ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেছেন আশরাফুল। আজ গতি ও বলের নিয়ন্ত্রণে ডান প্রান্ত দিয়ে বারবার ভীতি ছড়িয়েছেন ইব্রাহিম।
তিন মিনিট পরেই ইব্রাহিমের কল্যাণে ম্যাচের অন্যতম সেরা মুভ। মাঝমাঠ থেকে ডান প্রান্তে বাতাসে থ্রু দেন সোহেল রানা। বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বক্সে ঢুকে কাটব্যাক করেন ইব্রাহিম। রবসনের পা ঘুরে বল যায় সোহেল রানার পায়ে, এই মিডফিল্ডারের শট সেভ করেছেন গোলকিপার আশরাফুল।
বল দখলের লড়াইয়ে সোহেল, ইব্রাহিম, রবসনরা এতটাই এগিয়ে ছিলেন যে বল ঘুরাঘুরি করেছে মাঝমাঠের ওপর থেকে বসুন্ধরার আক্রমণ ভাগে। ভাঙাও যাচ্ছিল শেখ রাসেলের রক্ষণভাগ। শুধু বলটা পাঠানো যাচ্ছিল না জালে। আজ দুর্দান্ত খেলেছেন গোলকিপার আশরাফুল। ৩০ মিনিটে আবারও বসুন্ধরার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ান তিনি। এবার গোলমুখ থেকে নেওয়া কিংসলির শটটা বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন তিনি।
পুরো ম্যাচে কেবল একবারই গোলকিপার আনিসুর রহমানের পরীক্ষা নিতে পেরেছে শেখ রাসেলের আক্রমণভাগ। সেটি ৫৯ মিনিটে বদলি মান্নাফ রাব্বির কল্যাণে। তবে সেটি ঠেকাতে তেমন বেগ পেতে হয়নি আনিসুরকে। শেষ পর্যন্ত ৮৩ মিনিটে রবসনের গোলটিই হয়ে থাকে ম্যাচের মীমাংসা করে দেওয়া মুহূর্ত।
আজকের জয়ে স্থানীয় খেলোয়াড়দের কৃতিত্ব দিচ্ছেন কিংস কোচ অস্কার ব্রুজোন, ‘স্থানীয় খেলোয়াড়েরা নিজেদের দায়িত্বটা ভালোভাবে পালন করতে পারায় ম্যাচটি জিতেছি। দলে অনেক চোট সমস্যা থাকা সত্ত্বেও প্রথমার্ধটা পুরো নিয়ন্ত্রণ করেছি আমরা। দ্বিতীয়ার্ধে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলেও তারা সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।’
দিনের অন্য ম্যাচে মুন্সিগঞ্জ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে ১–১ গোলে ড্র করেছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ৩২ মিনিটে সলোমন কিংয়ের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল শেখ জামাল। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে মোহামেডানকে সমতায় ফিরিয়েছেন সুলেমান দিয়াবাতে।
এ জয়ে ৬ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে কিংস, ১২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে শেখ জামাল। পঞ্চম স্থানে থাকা মোহামেডানের পয়েন্ট ৯ এবং ৫ পয়েন্ট নিয়ে অষ্টম স্থানে শেখ রাসেল।