২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

খেলোয়াড় আর প্রতিপক্ষ সমর্থকের বোতল ছোঁড়াছুঁড়ি, মারামারি, ম্যাচ পন্ড

নিস সমর্থকেরা মার্শেইয়ের পায়েতসহ অন্য খেলোয়াড়দের ওপর চড়াও হয়েছেনছবি: রয়টার্স

এবারের ফ্রেঞ্চ লিগ আঁ-তে মার্শেইয়ের খেলা মানেই যেন এমন কিছু। দুই সপ্তাহ আগে মঁপলিয়ের বিপক্ষে ম্যাচেও প্রতিপক্ষ সমর্থকেরা মার্শেইয়ের খেলোয়াড়দের আক্রমণ করেছিলেন, সেদিন তবু ম্যাচটা শেষ হতে পেরেছিল। কিন্তু নিসের মাঠে কাল মার্শেইয়ের ম্যাচে মারামারি এমন পর্যায়েই গেল যে, ম্যাচটাই পণ্ড হয়ে গেছে। মারামারি শেষে মার্শেই নিরাপত্তা শঙ্কায় আর খেলতে নামতে চায়নি। ৭৫ মিনিটে মারামারি শুরু হওয়ার আগে নিস এগিয়ে ছিল ১-০ গোলে।

নিসের আলিয়াঞ্জ রিভিয়েরা স্টেডিয়ামে ৭৫ মিনিটে মার্শেইয়ের ফরাসি মিডফিল্ডার দিমিত্রি পায়েতের দিকে নিস সমর্থকদের বোতল ছুড়ে মারা থেকে ঘটনার শুরু। এর আগ পর্যন্ত যতবারই পায়েত কর্নার নিতে গেছেন, ততবারই তাঁর দিকে প্লাস্টিকের বোতল ছুড়ে মেরেছিলেন নিস সমর্থকেরা। কিন্তু কতক্ষণ আর সহ্য করবেন পায়েত! ৭৫ মিনিটে তাঁর দিকে বোতল ছুঁড়ে মারার পর তিনি সেটি উল্টো ছুড়ে মারেন নিসের সমর্থকদের দিকে। ব্যস, আর কী লাগে!

উগ্র সমর্থকেরা ঢুকে পড়েছেন মাঠে
ছবি: রয়টার্স

নিসের উগ্র সমর্থকগোষ্ঠী মাঠে ঢুকে পড়েন, শাসাতে থাকেন পায়েতকে। সেখান থেকেই শুরু যত নাটক! মার্শেইয়ের আলভারো গঞ্জালেস ও মাত্তেও গেন্দুজি মাঠের উল্টো প্রান্ত থেকে দৌড়ে এসে নিসের সমর্থকদের দিকে তেড়ে যান। নিসের অধিনায়ক দান্তে অবশ্য নিজেদের সমর্থকদের শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা!

হলুদ রঙা আস্তরণ পরে থাকা মাঠের নিরাপত্তাকর্মীরা একটা বলয় তৈরি করে ফেলেন ততক্ষণে, যাতে সমর্থকেরা মাঠে ঢুকে পড়তে না পারেন। পুলিশও চলে আসে। কিন্তু ততক্ষণে ঝগড়া-মারামারি সমর্থক ছাড়িয়ে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যেই চলে গেছে। দুই দলের যুদ্ধংদেহী খেলোয়াড়, সমর্থক, স্টাফ মিলে এক রণক্ষেত্র যেন!

হলুদ ভেস্ট পরা নিরাপত্তাকর্মী আর পুলিশ ঘিরে রাখে চারিদিক
ছবি: রয়টার্স

এর মধ্যে মার্শেইয়ের আর্জেন্টাইন কোচ ও ২০১৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্ব পালন করা হোর্হে সাম্পাওলিকে দেখা গেল কার দিকে যেন তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তাঁকে আটকে রাখছিলেন নিজ দলেরই কয়েকজন!

এমন অবস্থায় রেফারি আর কী করবেন, দুই দলের খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমে নিয়ে গেলেন। এরপর কেটে গেল ৮০ মিনিট। যুদ্ধের মনোভাব থেকে রাগারাগি, তারপর গজগজ, শেষে এ ওকে বোঝানো...এরপর ম্যাচ হবে কি না, হলেও কীভাবে হবে এসব আলোচনা মিলিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা কেটে যায়।

কাসপার ডলবার্গের গোলে এগিয়ে থাকা নিস জানায়, তারা আবার মাঠে নামতে প্রস্তুত।কিন্তু মার্শেই বেঁকে বসে। নিরাপত্তা শঙ্কাকে কারণ দেখিয়ে তাদের দাবি, ম্যাচ বাতিল করা হোক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলা এক সূত্রের কথা উল্লেখ করে সংবাদ সংস্থা এএফপি লিখেছে, ম্যাচের রেফারি বেপরোয়া বাস্তিয়ঁও ম্যাচ আবার চালু করার পক্ষে ছিলেন না।

মার্শেইয়ের আর্জেন্টাইন কোচ সাম্পাওলি
ছবি: রয়টার্স

শেষ পর্যন্ত ম্যাচ আর হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটা পরে বোঝা যাবে। সাধারণ নিয়ম বলে, তদন্তে অন্য কাউকে দোষী পাওয়া না গেলে ম্যাচে নিসকে ৩-০ গোলে জয়ী ঘোষণা করা হবে।

তবে ম্যাচ আবার খেলতে রাজি হওয়া না হওয়া নিয়েও দুই দলের মধ্যে কথার লড়াই চলছে। নিসের সভাপতি জঁ-পিয়ের রিভের দায় চাপাচ্ছেন মার্শেইয়ের ওপর, ‘কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছিল ম্যাচ আবার শুরু করা। কিন্তু মার্শেই তা চায়নি।’

আবার মার্শেইয়ের সভাপতি পাবলো লঙ্গোরিয়ার যুক্তি, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের আক্রমণ করা হয়েছে। লিগ কর্তৃপক্ষ চেয়েছিল ম্যাচ আবার শুরু করতে। কিন্তু আমরা আমাদের খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার কথা ভেবেছি, (নিসের) সমর্থকেরা মাঠে নেমে পড়ে যাঁদের আক্রমণ করেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না বলেই আমরা ম্যাচ না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

রেফারিও ম্যাচ আবার শুরু না করার পক্ষেই ছিলেন বলে দাবি লঙ্গোরিয়ার, ‘রেফারিও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি (মার্শেই কোচ) হোর্হে সাম্পাওলিকে এবং আমাকে বলেছেন যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, ম্যাচটা তাই বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।’

দুই সপ্তাহ আগে লিগের প্রথম ম্যাচে মপঁলিয়ের মাঠে মার্শেইয়ের ৩-২ গোলে জেতার ম্যাচেও প্রতিপক্ষ সমর্থকেরা মাঠে মার্শেইয়ের খেলোয়াড়দের দিকে বোতল ছুড়ে মারায় ম্যাচ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। সেদিন মপঁলিয়ের স্তাদ মোসোঁতে ৮৯ মিনিটে মার্শেইয়ের বদলি খেলোয়াড় ভালেন্তিন রঁজিয়েরের মাথায় বোতল লাগায় ম্যাচ থেমে গিয়েছিল। তবে সেদিন ম্যাচ পরে আবার শুরু হয়েছিল।