ক্লাব ছাড়তে চাওয়া মেসিতেই ভরসা বার্সেলোনার
অথচ একটু এদিক-সেদিক হলে আজ বার্সা নয়, অন্য কোনো ক্লাবের জার্সি গায়ে দেখা যেত লিওনেল মেসিকে।
হাজারো চড়াই-উতরাই, অসন্তুষ্টি-সমালোচনা-বিষেদ্গার শেষে মেসি ঘোষণা দিয়েছেন, এই মৌসুমটা বার্সাতেই থাকবেন তিনি। বার্সাও তাঁকে পুরস্কৃত করল পরিচিত উপায়ে। শোনা যাচ্ছিল, ক্লাব ছাড়তে চাওয়া মেসির ওপর রুষ্ট হয়ে তাঁর কাছ থেকে অধিনায়কত্ব কেড়ে নিতে পারেন নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যান। সেটা হচ্ছে না। আসন্ন মৌসুমের জন্য মেসিকেই মূল অধিনায়ক নির্বাচন করেছে বার্সেলোনা।
অথচ বার্সেলোনার ওপর দিয়ে কী একটা ঝড়ই না বয়ে গেল গত কয়েক সপ্তাহ ধরে!
মেসি জানালেন তিনি চলে যাবেন। বার্সা জানাল তাঁকে ছাড়বে না। মেসির বাবা এলেন দৃশ্যপটে। এরপর কোথায় মেসির বার্সা ছাড়ার ইচ্ছাটা গতি পাবে মনে হচ্ছিল, উল্টো আইনি ঝামেলার সম্ভাবনা দেখে পিছু হটলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। প্রিয় ক্লাব ছাড়তে চাওয়া ক্লাবের অব্যবস্থাপনার প্রতি ক্ষোভে ঠিকই, কিন্তু তাই বলে ক্লাবটাকে আদালতের দোরগোড়ায় মেসি নিতে চান না।
গত ২৫ আগস্ট ক্লাব সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউকে বুরোফ্যাক্স দিয়ে লিওনেল মেসি জানিয়ে দিলেন ক্লাব ছাড়তে চাওয়ার কথা। কারণ, মেসির দাবি, এর আগে সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ মৌখিকভাবে অনেকবার বলেছেন, মেসি চাইলেই মৌসুম শেষে কোনো ট্রান্সফার ফি ছাড়াই ক্লাব ছাড়তে পারবেন। মেসির ব্যুরো ফ্যাক্সের পর পালটে গেল দৃশ্যপট, বার্তোমেউ আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিলেন, ৭০ কোটি ইউরো ছাড়া মেসিকে ছাড়া হবে না। লিগের সবচেয়ে বড় আকর্ষণের সম্ভাব্য প্রস্থানের খবরে ভীত হয়ে বার্তোমেউর সঙ্গে গলা মেলাল লা লিগা কর্তৃপক্ষও।
অবস্থা সামলাতে মেসির বাবা হোর্হে এলেন বার্তোমেউর সঙ্গে কথা বলতে। বিমানবন্দরে নেমেই জানালেন, মেসির বার্সায় থাকা ‘অসম্ভব।’ নিজেদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বললেন। সংবাদমাধ্যমকে জানালেন, মেসির চুক্তির এই বছরে ৭০ কোটি রিলিজ ক্লজ নেই। বার্তোমেউ যা বলেছেন, তাঁর মধ্যে সত্যতা নেই।
কিন্তু বার্তোমেউর সঙ্গে মেসির বাবার মিটিংয়ের পর কী হলো কে জানে, ভোজবাজির মতো বদলে গেল সবকিছু। জানা গেল, বার্সা ছাড়ছেন না মেসি। পরে গোল ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন এই আর্জেন্টাইন তারকা। ক্লাব সভাপতিকে ছিলেন প্রতারণার দায়ে, জানিয়ে দেন, প্রিয় ক্লাবের সঙ্গে আদালতপাড়ায় লড়াই করার ইচ্ছে নেই, তাই এ বছর ক্লাব ছাড়বেন না।
সাধারণত কোনো খেলোয়াড় ক্লাব ছাড়তে চাইলে তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয় ক্লাব। ক্লাবের অধিনায়ক ক্লাব ছাড়তে চাইলে তো কথাই নেই, অধিনায়কত্বই কেড়ে নেওয়া হয়। সাউদাম্পটন থেকে সম্প্রতি টটেনহামে যোগ দেওয়া ড্যানিশ মিডফিল্ডার পিয়েরে এমিল হোবইয়ার্গের কথাই দেখুন। সাউদাম্পটনের অধিনায়ক ছিলেন তিনি, ছিলেন দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এককালে বায়ার্ন মিউনিখে পেপ গার্দিওলার অন্যতম প্রিয় এই শিষ্য সাউদাম্পটন ছাড়ার ইচ্ছের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন প্রকাশ্যে। ব্যস, অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া তো হলোই, মূল একাদশ থেকেও বের করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।