ক্যাম্প ন্যু’র গর্জন স্তব্ধ করে রিয়ালের জয়
তাঁকে আনা হয়েছিল সের্হিও রামোসের উত্তরসূরি হিসেবে। দেওয়া হয়েছিল রামোসের বিখ্যাত সেই চার নম্বর জার্সিটাই। রিয়াল কি তবে ভবিষ্যৎ দেখতে পেরেছিল? হয়তো! নাহয় ম্যাচের পর ম্যাচ এই চার নম্বর জার্সি গায়ে রিয়ালের নায়ক হওয়া রামোসের 'বিকল্প'-ও কীভাবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার বিপক্ষে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই রিয়ালের নায়ক হয়ে যান?
সেটাই হয়েছেন ডেভিড আলাবা। রিয়ালের খেলোয়াড় হিসেবে নিজের প্রথম এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনার বিপক্ষে গোলে পেয়েছেন তিনি। সঙ্গে গোল পেয়েছেন লুকাস ভাসকেজও। সব মিলিয়ে বার্সেলোনার মাঠ ক্যাম্প ন্যু থেকে ২-১ গোলে জিতে এসেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
২০০৩ সালে কার্লো আনচেলত্তির এসি মিলান আর রোনাল্ড কোমানের আয়াক্স যখন পরষ্পরের বিপক্ষে মুখোমুখি হয়েছিল, দুজনের কেউ কি বুঝেছিলেন ১৭ বছর পর ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দ্বৈরথের ডাগআউটেও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তারাই থাকবেন? আজ সেটাই হয়েছে। দুই কোচই নিজ নিজ দলকে নামিয়েছিলেন ৪-৩-৩ ছকে।
প্রথমে স্বাগতিক বার্সেলোনার কথায় আসা যাক। বেশ কয়েক ম্যাচ ধরেই রাইটব্যাক সের্হিনিও দেস্তকে রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলানোর একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন কোমান। রিয়ালের বিপক্ষেও সে ব্যাপারটা দেখা গেছে। ফিলিপ কুতিনিওকে না নামিয়ে দেস্তকেই রাইট উইঙ্গার হিসেবে নামিয়েছিলেন কোমান, আর রাইটব্যাক হিসেবে খেলেছেন অস্কার মিঙ্গেসা। জর্দি আলবা চোটের কারণে খেলতে পারেন কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও শেষমেশ তাঁকে মাঠে নামিয়েছেন কোমান। আর সেন্টারব্যাক হিসেবে জেরার্ড পিকের সঙ্গী হয়েছিলেন এরিক গার্সিয়া। মাঝমাঠে চোটের কারণে পেদ্রি ছিলেন না, তাই সের্হিও বুসকেতস আর ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের সঙ্গে নেমেছিলেন তরুণ গাভি। আক্রমণভাগে দেস্তকে ডানে রেখে খেলেছেন মেম্ফিস ডিপাই ও আনসু ফাতি।
ওদিকে রিয়ালও নেমেছে একই ছকে। কারভাহাল ছিলেন না, ফলে রাইটব্যাকে লুকাস ভাসকেজকে রেখে খেলেছেন ডেভিড আলাবা, এদের মিলিতাও ও ফারলাঁ মেন্দি। মাঝমাঠে মদরিচ, ক্রুস আর কাসেমিরোর পরীক্ষিত মিডফিল্ডের সামনে দুপাশে দুই ব্রাজিলিয়ান রদ্রিগো আর ভিনিসিয়ুসকে রেখে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছেন বেনজেমা। প্রথমে নিজের মাঠে বার্সেলোনা বেশ ভালোই শুরু করেছিল। তিন মিনিটে একটা পেনাল্টির জন্য উতলাও হয়ে যায় ক্যাম্প ন্যু'র দর্শকেরা। লাভ হয়নি। প্রথমদিকে রিয়াল সেভাবে নিজেদের অর্ধ থেকে বের হয়ে আসতে পারছিল না। দুই দলই হাইল লাইন রক্ষণ বজায় রেখে খেলেছে, কিন্তু কেউই সেভাবে ভীতি জাগাতে পারছিল না প্রতিপক্ষের মনে। ২৫ মিনিটে গোল করার এক দুর্দান্ত সুযোগ হারান দেস্ত।
এর সাত মিনিট পরেই আলাবা-ঝলক। মেম্ফিসের পা থেকে রিয়ালের রক্ষণে নিজেই বল কেড়ে নিয়ে আক্রমণের সূচনা করেন, পরে রদ্রিগো হয়ে বল আবার আসে আলাবার কাছেই। যেমন দুর্দান্ত শটে গোল করেছেন, কে বলবে তিনি একজন ডিফেন্ডার?
রিয়ালের জার্সি গায়ে নিজের প্রথম গোল পাওয়ার জন্য এর থেকে বড় উপলক্ষ্য হয়ত পেতেন না এই অস্ট্রিয়ান ডিফেন্ডার। গোল পাওয়ার পরেই রিয়াল প্রতি আক্রমণে বেশ কয়েকবার গোলের সুযোগ পেয়ে যায়। যদিও উলটো গোল করার বড় সুযোগ বার্সার সামনেই আসে। আনসু ফাতির এক শট আটকে আবারও নায়কের ভূমিকা নেন এই আলাবা।
দল পিছিয়ে আছে দেখেই কি না, দেস্তকে রাইট উইংয়ে খেলানোর পরীক্ষা করার আর সাহস হয়নি কোমানের। মিঙ্গেসাকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় দেস্তকে পাঠিয়ে দেন, আর দেস্তের জায়গায় রাইট উইঙ্গার হিসেবে নামান ফিলিপ কুতিনিও। ৬৩ মিনিটে করিম বেনজেমার দুর্দান্ত এক শট আটকে দেন বার্সা গোলকিপার মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন। আনসু ফাতিকে নিয়ে বার্সার অনেক ভরসা থাকলেও, এই ম্যাচে বার্সার নতুন দশ নম্বরের কাছ থেকে তেমন কিছুই দেখা যায়নি। ৭৩ মিনিটে তাঁর জায়গায় নামান হয় সের্হিও আগুয়েরোকে। ৮৩ মিনিটে আগুয়েরো একটা সুযোগও পেয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ম্যাচের শেষে পিকের কল্যাণে একটা সুযোগ পেয়ে যান ডিপাই, কিন্তু লাভ হয়নি। উলটো অপর প্রান্তে দ্বিতীয় গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন ভাসকেজ।
ভাসকেজের গোল দেখেই কি না, মরণ-কামড় দেওয়ার বড় সাধ জাগল বার্সার। আগুয়েরোর কল্যাণে সে গোলটা এলও। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে বড্ড। ২-১ গোলের জয়ের উৎসব শুরু হয়ে গেছে রিয়ালের ডাগআউটে। এই জয়ের মাধ্যমে ৯ ম্যাচে শেষে ২০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেই রইল রিয়াল। ১৫ পয়েন্ট নিয়ে আট নম্বরে আছে বার্সেলোনা।