ক্যানসারে আক্রান্ত লুই ফন গাল
ফুটবল ইতিহাসে লুই ফন গালের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। তিন দফায় নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের কোচ হয়েছেন, আয়াক্সের হয়ে জিতেছেন লিগ-চ্যাম্পিয়নস লিগ সহ ক্লাব পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সকল শিরোপা। ছিলেন বার্সেলোনার কোচও। এজেড আলকমারের মতো অখ্যাত ক্লাবকে ডাচ লিগ জিতিয়ে চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে।
বায়ার্ন মিউনিখ ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবের দায়িত্বেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। ২০১৪ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসকে তৃতীয় করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। নেদারল্যান্ডসের অন্যতম প্রভাবশালী ফুটবল-ব্যক্তিত্ব মনে করা হয় তাঁকে।
ফ্রাঙ্ক ডি বোরের অধীনে গত ইউরোতে প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়া নেদারল্যান্ডস আবারও এই কোচের হাতেই জাতীয় দলের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল। তাঁর দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে ভার্জিল ফন ডাইক, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, জর্জিনিও ভাইনালডমরা বিশ্বকাপে বড় কিছু করে দেখাবেন, এমনটাই আশা করছিল নেদারল্যান্ডস।
কিন্তু আজ ৭০ বছর বয়সী এই কোচ যে খবর দিলেন, তাতে ডাচ শিবিরে দুশ্চিন্তার গুমোট বাতাস বয়ে যেতে বাধ্য। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে আয়াক্সকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো এই কোচ জানিয়েছেন, ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন তিনি।
ডাচ টিভি অনুষ্ঠান 'উমবের্তো'-তে এই খবর জানিয়েছেন ফন গাল। জানিয়েছেন, বাজে ধরনের এক প্রোস্টেট ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন। এর মধ্যে নাকি ২৫ বার রেডিয়েশন থেরাপিও নেওয়া হয়ে গেছে তাঁর!
এতদিন এই বড় খবরটা নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রেখেছিলেন ফন গাল। এমনকি, নিজের শিষ্যদেরও জানাননি এই খবর। তাঁর কাছে মনে হয়েছে, আগে আগে জানিয়ে শিষ্যদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করার কোনো মানেই হয় না, 'আমি ওদের কাউকেই এ ব্যাপারে কিছু জানাইনি কারণ এটা এমন এক জিনিস, যা হয়তো ওদের সিদ্ধান্ত, জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলবে। তাই ওদের জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি।'
ফন গাল জানিয়েছেন, এই ক্যানসারের ধরণটা বেশ বাজে, 'প্রোস্টেট ক্যানসারে আপনি মরবেন না। অন্তত ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে তো বটেই। আসলে এই ক্যানসারের কারণে অন্যান্য সুপ্ত রোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে সেটাই যন্ত্রণা দেয়। আমার এই ক্যানসারটা বেশ বাজে ধরণের। এর মধ্যে ২৫ বার রেডিয়েশন থেরাপি দিতে হয়েছে। এর মধ্যেই আবার দল ম্যানেজ করার দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে।'
যথেষ্ট লুকিয়ে লুকিয়ে এতদিন ক্যানসারের চিকিৎসা করিয়েছেন ফন গাল, 'আমি হাসপাতালে আমার সুবিধামতো সময়ে চিকিৎসা করিয়েছি। পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে দ্রুতই অন্য কক্ষে চলে যেতাম। আমার চিকিৎসা বেশ ভালোভাবে হচ্ছে।'
খেলোয়াড়েরা না জানলেও নিজের পরিবার-পরিজনকে ঠিকই জানিয়েছেন ফন গাল, 'অবশ্যই আপনার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের জানাবেন। তাদেরকে জানানোর পরেও যে মিডিয়ায় এতদিন এই খবরটা আসেনি, এটাই আমার আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা দেবে।'
তৃতীয় দফায় গত বছর নেদারল্যান্ডসের দায়িত্ব নেওয়ার পর দলকে ৯ ম্যাচের মধ্যে ৬ ম্যাচ জিতিয়েছেন ফন গাল, বাকি তিন ম্যাচ ড্র হয়েছে। বেশ ভালোই ফর্মে আছে নেদারল্যান্ডস। কোচের এই খবরে ফন ডাইক-ডি ইয়ংরা এখন ফর্মহীন না হয়ে গেলেই হয়!