কোনো রকমে হার এড়াল চট্টগ্রাম আবাহনী
নির্ধারিত সময়ের খেলা ততক্ষণে শেষ। চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে ২-১ গোলে এগিয়ে উত্তর বারিধারা। যোগ হওয়া সময়ের ৪ মিনিট কোনো রকমে কাটানোর প্রস্তুতি তাদের। প্রিমিয়ার লিগে প্রথম জয় উদযাপনের অপেক্ষায় বারিধারার ফুটবলাররা। কিন্তু খেলার শেষ বাঁশি বাজার মিনিটখানেক আগে বারিধারার হৃদয় ভেঙে দিলেন চট্টগ্রাম আবাহনীর মিডফিল্ডার কাউসার আলী। হাতের মুঠোয় থাকা জয়টা ফসকে গেল বারিধারার। শেষ পর্যন্ত বারিধারার সঙ্গে হারতে হারতে ড্র করেই খুশি চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ মারুফুল হক।
উত্তর বারিধারার বিপক্ষে হারটা ধরেই নিয়েছিলেন মারুফুল। এই ম্যাচে যে ৩ পয়েন্ট হারাতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম আবাহনী সেটা এক রকম নিশ্চিত ভেবেই ডাগআউটে শেষ চার মিনিট চুপচাপ বসে ছিলেন দেশের একমাত্র উয়েফা প্রো লাইসেন্সধারী কোচ। কিন্তু কোচ আশা ছাড়লেও ফুটবলাররা আশা ছাড়েনি। প্রতি আক্রমণ থেকে আচমকা গোল পেয়ে গেলেন কাউসার, শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট ভাগাভাগি করে কিছুটা হলেও স্বস্তি নিয়ে ফিরতে পেরেছে চট্টগ্রামের দলটি।
ঢাকায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ দিনটি ছিল স্থানীয় ফুটবলারদের। ৪ গোলের ৩টিই করেছেন দেশি ফুটবলার। চট্টগ্রাম আবাহনীর ১টি করে গোল করেছেন ব্রাজিলিয়ান নিক্সন গিয়াহামে ও কাউসার আলী। বারিধারার গোলদাতা সুমন রেজা ও আরিফ হোসেন।
চোটের কারণে চট্টগ্রাম আবাহনীর মূল অস্ত্র চার্লস দিদিয়ের খেলেননি। অন্য দুই বিদেশি ব্রাজিলিয়ান নিক্সন ও চিনেদু ম্যাথুও নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারেননি। ম্যাচ শেষে কোচ অবশ্য টানা খেলার ক্লান্তিকেই দায়ী করলেন, ‘এমনিতে চোট থেকে সেরে উঠলেও নিক্সন পুরো ফিট নয়। এরপর কয়েক দিন পরপর টানা খেলতে হচ্ছে। এটার কারণে ওরা স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারছে না।’
পয়েন্ট টেবিলের তলানির দিকের দল হলেও বারিধারাকে মোটেও হালকাভাবে নেয়নি চট্টগ্রাম আবাহনী। এই দলটিই ব্রাদার্স ইউনিয়নের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্র করেছে। মোহামেডানের সঙ্গে ড্র করেছে ২-২ গোলে। আর আজ তো জিতেই মাঠ ছাড়তে পারত।
ম্যাচের ২৮ মিনিটে প্রথম এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় বারিধারা। আরিফ হোসেনের শট শেষ পর্যন্ত কর্নানের বিনিময়ে রক্ষা করেন চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলরক্ষক মোহাম্মদ নাঈম। প্রথমার্ধে আক্রমণে এগিয়ে ছিল উত্তর বারিধারা। কিন্তু ধারার বিপরীতে প্রথমার্ধে গোল পেয়ে যায় চট্টগ্রাম আবাহনী। ৪০ মিনিটে মোনায়েম রাজুর ফ্রি কিক থেকে হেডে গোল করেন নিক্সন। ১-০ তে এগিয়ে যায় চট্টগ্রাম আবাহনী।
দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠা বারিধারা সাফল্য পায় খানিক পরই। ৫৬ মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে খেলায় সমতা ফেরান সুমন রেজা। আরিফের থ্রো পাস থেকে সুমন রেজার দুর্দান্ত শটে ১-১ হয়েছে ম্যাচ।
জয়ের খোঁজে হন্য হয়ে ততক্ষণে হাই প্রেসিং ফুটবল খেলা শুরু করেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। আর সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ম্যাচে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বারিধারা। ৭৩ মিনিটে চট্টগ্রাম আবাহনীর ডিফেন্ডার মনির আলমের ভুল পাস থেকে বল পেয়ে যান আরিফ। এরপর তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে চমৎকার শটে করেন গোল।
ম্যাচের যোগ হওয়া সময়ে নাটকীয়ভাবে গোল করেন চট্টগ্রাম আবাহনীর বদলি মিডফিল্ডার কাউসার। বাঁ প্রান্ত থেকে চিনেদু ম্যাথুর ক্রস প্রথম চেষ্টায় গোলে মারেন। কিন্তু বলটি বারিধারার গোলরক্ষক মিতুল মারমার হাতে লেগে ফেরে। ফিরতি শটে আর ভুল করেননি। গোল করেই সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠেন।
৭ ম্যাচে ২ জয়, ২ ড্র ও ৩ হারে ৮ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে উঠে এল চট্টগ্রাম আবাহনী। বারিধারার কোনো জয় নেই। তবে ৩ ড্র ও ৩ হারে ৩ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে বারিধারা।