কেমন হতে পারে বাংলাদেশ কোচের 'স্ট্রাইকার চাই' বিজ্ঞাপন
>জাতীয় দলের জার্সিতে গোল করার খেলোয়াড়ের অভাব। ফলে ‘ভালো স্ট্রাইকার চাই’—এমন একটি বিজ্ঞাপন দেওয়া বাংলাদেশ কোচ জেমি ডের জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। বাংলাদেশ কোচের কল্পিত সেই বিজ্ঞাপনে থাকতে পারে যে শর্তগুলো।
‘একজন গোল করার লোকের অভাব’
সেই পুরোনো চিত্রটায় আবার বড় করে ফুটে উঠল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে। সেমিফাইনালে শক্তিশালী বুরুন্ডির বিপক্ষে ভালো খেলেও গোল করতে না পেরে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো বাংলাদেশকে। ফলে ঘরের মাঠে আরও একটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে দর্শক বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষের পর থেকে বাংলাদেশ কোচ জেমির মুখে শুধুই ‘একজন গোল করতে পারার খেলোয়াড়ের’ জন্য আফসোস। জেমির ভাষায় তাঁর দলের প্রায় সবই ঠিক আছে। খালি গোলটাই করতে পারে না। কিন্তু কে না জানে ফুটবল গোলের খেলা, আর গোল না করতে পারলে সবই ‘বৃথা’।
ফলে ‘ভালো স্ট্রাইকার চাই’—এমন একটি বিজ্ঞাপন দেওয়া বোধ হয় জেমির জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। যেভাবে গোলের জন্য তাঁর স্ট্রাইকারদের হাপিত্যেশ করতে হচ্ছে, প্রতিপক্ষের পোস্টের সামনে গিয়ে গোলের ঠিকানা পাওয়ার জন্য মাথা কুটতে হচ্ছে; স্ট্রাইকার চেয়ে বিজ্ঞাপন দিলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। অবশ্য শুধু এই ব্রিটিশ কোচ কেন? সাম্প্রতিক সময়ের সব কোচেরই তো একই অভিজ্ঞতা।
বাংলাদেশ কোচের কল্পিত সেই বিজ্ঞাপনে কোন শর্তগুলো থাকতে পারে? জেমির সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তা একটু মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন এই প্রতিবেদক।
বলে প্রথম স্পর্শ হতে হবে ভালো। সতীর্থদের কাছে থেকে বল চেয়ে নেওয়ার আগে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের অবস্থান দেখে নিতে হবে। বল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে মাথা উঁচু করার অভ্যাস থাকতে হবে। অহেতুক তাড়াহুড়ো না করে বল পায়ে রাখার সাহস থাকতে হবে। পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে সতীর্থর সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান খেলে আবার বল নিতে পারা জানতে হবে।
স্ট্রাইকার হতে হবে এমন, যিনি গোলমুখে জায়গা তৈরি করতে পারেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী ক্রস বা কাট ব্যাকের পার্থক্য বুঝে জায়গা নিতে পারেন বক্সে। বুঝতে হবে কোন বলে প্রথম স্পর্শেই প্লেসিং বা শট নিতে হবে, আবার কোন মুহূর্তে রাখতে হবে নিয়ন্ত্রণে। মাথার কাজে আহামরি কিছু নয়, মাত্র ৬ গজ বক্সের মধ্যে থেকে হেড করে পোস্টের মধ্যে রাখতে পারলেই চলবে। বলের নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে প্রতিপক্ষকে সামলিয়ে ওঠার মতো গতি। এর সঙ্গে গোল পোস্টে শট নেওয়ার সাহস। এই গুণগুলো থাকলে উচ্চতা ও আরও প্রয়োজনীয় শারীরিক সক্ষমতার বিষয়গুলো শিথিলযোগ্য।
অনেকটা ‘পাত্রী চাই’ বিজ্ঞাপনের মতো। পাত্রী আচরণে ভদ্র ও শিক্ষিত হলে সুন্দরী না হলেও চলবে। বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই খুশি হতে পারেন। যাক, এত দিনে বোধোদয় হলো বাংলাদেশ কোচের। কিন্তু প্রকৃতিগতভাবে না জন্মালে স্ট্রাইকার যে তৈরি করে নিতে হয়। সে রীতিটাই তো নেই বাংলাদেশে। কিন্তু দেশে খেলোয়াড় তৈরি করার জন্য ফুটবল ফেডারেশনের নিজস্ব কোনো একাডেমি নেই, যেখানে বছরব্যাপী অনুশীলনের পর অনুশীলন করে তৈরি হবে গোল করার মতো খেলোয়াড়। আবার ক্লাবের জার্সিতেই যদি না পাওয়া যায় খেলার সুযোগ, সেই দেশে কীভাবে পাওয়া যাবে এমন স্ট্রাইকার।
ফলে কিছু বিষয় শিথিলযোগ্য করে দেওয়ার পরেও হয়তো এই বিজ্ঞাপনে সারা মিলবে না খুব একটা। জেমি ডের অবস্থা আবার না হয়ে যায় বেচারা ব্যর্থ ঘটকের মতো!