কীসের টানে বাংলাদেশে তাঁরা?
>বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ধারাভাষ্য দিতে ঢাকায় এসেছেন সাইমন ম্যাকমেনেমি ও শেহজাদ হক
ধারাভাষ্যে টের পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু কাল বুরুন্ডির বিপক্ষে বাংলাদেশের বাতিল হওয়া গোলের সময় হতাশা লুকাতে পারেননি দুজনই। শেহজাদ ও সাইমন—দুজনেরই যে বাজির ঘোড়া ছিল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে স্বাগতিক দলের জেতার সম্ভাবনা নিয়ে বেশ স্বপ্নও দেখছিলেন তাঁরা। সেমিফাইনালে দুরন্ত বুরুন্ডি সেটা হতে দেয়নি। এতে মন খারাপ হওয়ার কথা তাঁদের। শেহজাদ হকের তো হৃদয়ের অনেকটা জায়গাজুড়ে বাংলাদেশ। আর সাইমন ম্যাকমেনেমির কাছেও বাংলাদেশ বিশেষ হয়ে থাকবে একটি কারণে।
সিঙ্গাপুরের শেহজাদ পুরোদস্তুর পেশাদার ধারাভাষ্যকার। ঢাকায় এসেছেন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ধারাভাষ্য দিতে। ১৩ বছর ধরে টেলিভিশনে ফুটবল ধারাভাষ্য দিচ্ছেন, মাঝেমধ্যে ক্রীড়াবিষয়ক অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেন। এর বাইরে টেনিস, হকি, অ্যাথলেটিকস, ব্যাডমিন্টন, রাগবিরও ধারাভাষ্য দেন। ধারাভাষ্য দিয়েছেন এশিয়ান ও যুব অলিম্পিকস গেমসে। এ বছর টোকিও অলিম্পিকেও ধারাভাষ্যকার হিসেবে দেখা যাবে শেহজাদকে। আর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট দিয়ে টেলিভিশন ধারাভাষ্যে অভিষেক হলো স্কটিশ সাইমনের।
শেহজাদের দাদার বাড়ি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে। কিন্তু শেহজাদের বাবার জন্ম সিঙ্গাপুরে। সিঙ্গাপুরের নাগরিক শেহজাদ ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ধারাভাষ্য দিতে প্রথমবার সিলেটে গিয়েছিলেন। ধারাভাষ্য দিয়েছেন কক্সবাজার ও ঢাকায়ও। গত বছর বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল টুর্নামেন্টেও ঢাকায় এসেছিলেন। তৃতীয়বারের মতো ঢাকায় এসে খুবই রোমাঞ্চিত শেহজাদ, ‘এখানে যতবার আসি ততবারই ভালো লাগে। শিকড়ের কাছে ফিরে আসতে অন্য রকম আনন্দ। আমি এর আগে কয়েকবার ফেঞ্চুগঞ্জে গিয়েছি। আমার আত্মীয়স্বজন উষ্ণ আতিথেয়তা দিয়েছে। মাছ, মাংস, পিঠা খাইয়েছে। এ এক অন্য রকম ভালো লাগা।’ ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে সেটা প্রকাশও করে দেন, ‘ম্যাচের সময় নিরপেক্ষভাবে ধারাভাষ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। মাথা বলে নিরপেক্ষ থাকো কিন্তু মন বলে বাংলাদেশের পক্ষে।’
সাইমন পেশাদার ফুটবল কোচ। ফিলিপাইন জাতীয় দলের দায়িত্ব পান ২০১০ সালে। প্রথমবারের মতো এএফএফ সুজুকি কাপে ফিলিপাইনকে নকআউট পর্বে তুলে ইতিহাস গড়েন সাইমন। এরপর ধারাবাহিকভাবে ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপের বিভিন্ন ক্লাব পর্যায়ে কোচিং করিয়েছেন। নতুন অভিজ্ঞতা নিতেই ধারাভাষ্যের প্রস্তাব বেছে নেওয়া। টুর্নামেন্টের সম্প্রচার স্বত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান কে স্পোর্টস একজন ফুটবল বিশ্লেষককে ধারাভাষ্যকার হিসেবে এনে সম্প্রচারের মানটা নিয়ে গেছে আরও এক ধাপ ওপরে। ম্যাচগুলোতে সাইমনের ফুটবলমস্তিষ্কের বিশ্লেষণ ধারাভাষ্যে যোগ করছে ভিন্নমাত্রা।
ধারাভাষ্য না ফুটবল কোচিং—কোনটা বেশি উপভোগ করেন? হেসে উত্তর দিলেন সাইমন, ‘আমার প্রথম ভালোবাসা ফুটবল কোচিং। ডাগআউটে দাঁড়িয়ে ফুটবলারদের নির্দেশনা দিতেই ভালো লাগে। তবে ধারাভাষ্যটাও দারুণ উপভোগ করছি। এটা খুব মজার ব্যাপার। নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। কোচ বলেই ধারাভাষ্যটা সেভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেওয়ার চেষ্টা করি। মাঠে ফুটবলাররা কীভাবে খেলছে, সাইড বেঞ্চে কী হচ্ছে, সব ভালোভাবে বুঝতে পারি।’
এরই মধ্যে বাংলাদেশের দুটো ম্যাচ খুব কাছে থেকে দেখেছেন। তবে এর বাইরেও বাংলাদেশের ফুটবলারদের সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে সাইমনের। সাইফ স্পোর্টিংয়ের কোচ দ্রাগো মামিচের বিপক্ষে ডাগআউটে ছিলেন ইন্দোনেশিয়ান লিগে। মালদ্বীপের নিউ রেডিয়েন্টের হয়ে কাজ করেছেন, একসময় যে দলের কোচ ছিলেন বসুন্ধরা কিংসের অস্কার ব্রুজোন। অস্কারের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ আছে। আর জাতীয় দলের ব্রিটিশ কোচ জেমি ডের সঙ্গে ঢাকায় এসেই কথা বলেছেন। ফুটবলারদের অনুশীলন দেখেছেন। এবারের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে দেখেই সাইমন টের পেয়েছেন বাংলাদেশের ঘাটতিটা, ‘এই বাংলাদেশ দলের একটাই সমস্যা, সহজাত স্ট্রাইকার নেই। তবে মতিন প্রতিভাবান ফুটবলার। ওর দুটো গোলই দুর্দান্ত ছিল।’ সে সমস্যাটাই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশকে অতিথি বানিয়ে দিল আরেকটি ফাইনালে।