গ্যারি নেভিল ভালোই বিপাকে পড়েছেন। উলে গুনার সুলশার কোচ হওয়ার পর থেকেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে তাঁর সাবেক সতীর্থরা সবাই এককাট্টা হয়েছেন। ইউনাইটেডের পারফরম্যান্স যেমনই হোক না কেন, রিও ফার্ডিনান্ড, নেভিলরা সুলশারের পক্ষে লড়েছেন। সুলশারকে রক্ষা করতে গিয়ে সমালোচনার ঝাঁপি খুলে দিতেন ফুটবলারদের উদ্দেশে।
কিন্তু এবার একটু ঝামেলায় পড়েছেন নেভিল। এবার সুলশারকে বাঁচাতে গিয়ে দেখছেন, লক্ষ্য বনে যাচ্ছেন আরেক সাবেক সতীর্থ, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তাই একটু রাখঢাক রেখে সুলশারকে বাঁচাতে চাইলেন। দলের খেলার ধরন নিয়ে অসন্তুষ্ট হওয়ায় মাঠেই সেটা প্রকাশ করেছেন রোনালদো। সেটা পছন্দ হয়নি নেভিলের।
এভারটনের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ১-১ গোলে ড্র করেছে ইউনাইটেড। সর্বশেষ ছয় ম্যাচে মাত্র দুটি জয় পেয়েছে ইউনাইটেড। হেরেছে তিন ম্যাচেই। এমনিতেই মানসম্পন্ন সব খেলোয়াড়ে ভর্তি ইউনাইটেড। সে দলে এবার যোগ দিয়েছেন রোনালদো, জাডোন সাঞ্চো ও রাফায়েল ভারানের মতো বিশ্বমানের খেলোয়াড়েরা। তবু এমন স্কোয়াড থেকে ফল বের করতে পারছেন না। এরই মধ্যে খবর এসেছে, দলকে কীভাবে খেলালে তাঁর গোল বাড়বে, সেটা সুলশারকে বলে দিয়েছেন রোনালদো।
কিন্তু মাঠে এর প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে না। মাঠে তাই নিজের অসন্তোষ লুকাননি। এটা পছন্দ হয়নি নেভিলের। সাবেক সতীর্থকে একটু সাবধান করেছেন এ ব্যাপারে। স্কাই স্পোর্টসে বলেছেন, ‘আমি ম্যাচটা দেখেছি এবং তাঁকে ওভাবে মাঠ ছাড়তে দেখেছি। এটা পছন্দ হয়েছে, তা আমি বলতে পারছি না। সে খেলছে না, এ জন্য মন খারাপ ক্রিস্টিয়ানোর? হ্যাঁ। সে গোল করতে পারেনি বলে হতাশ? হ্যাঁ। দল যখন জেতে না, তখন কি রোনালদো বিরক্ত হয়? অবশ্যই। আমরা এসব জানি। তার এসব প্রমাণ করার দরকার নেই। সে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, নিজের সঙ্গে বিড়বিড় করে কথা বলছে, এটা বাতাসে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। সে কী বলতে চায়? কার ওপর বিরক্ত সে? সে ক্ষেত্রে তিরটা ম্যানেজারের দিকেই যায়।’
আর প্রশ্ন যখন সুলশারের দিকে যায়, তখনই নেভিলের আপত্তি। একসময়কার সতীর্থকে যে ইউনাইটেডের সব সাবেক খেলোয়াড় ও বর্তমান বিশ্লেষকেরা আগলে রাখতে চান। এ কারণেই রোনালদোকে এমন কিছু করতে মানা করেছেন নেভিল, ‘ক্রিস্টিয়ানো যথেষ্ট বুদ্ধিমান, সে জানে এমন কাজ ম্যানেজারের ওপর সত্যিকারের চাপ বাড়াবে। এখন যা আছে, তার চেয়েও বেশি। এটা নিয়ে কিছু করার নেই, আমার মনে হয় আগামী কয়েক মাসে এমন কিছু সামলাতে হবে। ক্রিস্টিয়ানো সব সময় গোল করবে না এবং সব ম্যাচে খেলতে পারবে না। কিন্তু সে যদি এভাবে মাঠ ছেড়ে যায়, সেটা উলে গুনার সুলশারের ওপর চাপ অনেক বাড়িয়ে দেবে।’
২০১৬ সালে ইউনাইটেড সর্বশেষ কোনো শিরোপা জিতেছিল। জোসে মরিনিওর অধীনে জেতা সেই তিন ট্রফির স্বাদ ভুলে যেতে বসেছেন সবাই। ইউনাইটেডের স্কোয়াডে এখন যে তারকা মেলা, তাতে সাফল্য এনে দিতে সুলশারের ওপর চাপ বাড়বে, এটা মেনে নিয়েছেন নেভিল, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, সাঞ্চো ও ভারানের মতো বিশ্বমানের খেলোয়াড় দলে আসায় সাফল্য এনে দেওয়ার চাপ বাড়ে। উলে সেটা জানে। সে সংবাদ সম্মেলনে সেটা বলেছে। ওকে জিততে হবে। তিন বা চার বছর হয়ে গেলে এবং এমন খেলোয়াড় থাকলে আপনাকে ট্রফি জিততে হবে।’
এ জন্য চাপ কমানোর উপায় বাতলে দিয়েছেন নেভিল। সেটা অবশ্য রোনালদো সমর্থকদের পছন্দ হবে না, ‘ওর এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উলেকে স্বার্থপর হতে হবে। তাকে নিশ্চিত করতে হবে যেন ক্রিস্টিয়ানোকে ঠিকভাবে সামলানো যায়। আমার ধারণা, উলে তার সঙ্গে বসবে এবং বলবে, “দেখো, আমরা যদি এমন কিছু (মতানৈক্য) করতে চাই, সেটা ড্রেসিংরুমে করি।”’
এমন কিছু করেও রোনালদোকে যে থামানো যাবে, এতটা আশা অবশ্য করছেন না সাবেক ডিফেন্ডার, ‘ক্রিস্টিয়ানো কোনো কাপুরুষ নয়। সে এটা মেনে নেবে না এবং বলবে না, “আমি কিছু বলব না।” সে তার অসন্তোষ জানিয়ে দেবে এবং নিজের অখুশি জানিয়ে দেবে।’