করোনাকালে ফেডারেশন কাপ দিয়েই প্রথম মাঠে গড়াচ্ছে ঘরোয়া ফুটবল। টুর্নামেন্ট শুরু হবে ২২ ডিসেম্বর। নতুন মৌসুম শুরুর আগে প্রথম সারির দলগুলোর প্রস্তুতি নিয়ে ৮ পর্বের ধারাবাহিকের প্রথম পর্বে আজ থাকছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের কথা
শেখ জামালের সাবেক কোচ যোসেফ আপুসি ক্লাব চত্বরে বসে প্রায়ই পাওয়ার অব ফোকাস বইটি পড়তেন। সাফল্য পাওয়ার সূত্র খুঁজতেন ওই বই থেকে।
সাফল্যপিপাসু আপুসি শেখ জামালকে দুটি লিগ, একটি ফেডারেশন কাপ জেতান। কলকাতার আইএফএ শিল্ডে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে হয় রানার্সআপ।
কিরগিজস্তানে এএফসি কাপে গ্রুপসেরা। সনি নর্দেকে নিয়ে তখন শেখ জামাল দলটাও ছিল দুর্দান্ত।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে শক্তি ক্ষয় হতে থাকে শেখ জামালের, আপুসির শেষটাও হয় তিক্ত। করোনায় গত পরিত্যক্ত লিগের আগের লিগের মাঝপথে আপুসির শেখ জামাল ছিল ১০ নম্বরে।
এলোমেলো এক ভাঙা নৌকা যেন ডুবতে বসেছিল মাঝনদীতে। আপুসিকে তখনই বিদায় করে ডুবন্ত তরি ভাসানোর দায়িত্ব পড়ে শফিকুল ইসলামের (মানিক) ওপর।
শৃঙ্খলা আর কঠিন পরিশ্রমকে মূলমন্ত্র বানিয়ে এগিয়ে চলা সাবেক ফুটবলারের হাত ধরে পতন ঠেকায় শেখ জামাল।
কিন্তু শেখ জামালের আগের ঔজ্জ্বল্যটা হারিয়ে গেছে। দল হারিয়েছে শক্তি। ২০০৯-১০ মৌসুমে আবির্ভাবেই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকায় বড় বাজেটের দল গড়া শেখ জামালের আক্রমণাত্মক মানসিকতাটাও আর নেই।
ক্লাব সভাপতির পদ থেকে সরে গেছেন মনজুর কাদের। নেতৃত্বের ঝান্ডা তাঁর হাতে থাকলেও ফুটবল নিয়ে আগের সেই ‘পাগলামিটা’ উধাও। চ্যাম্পিয়ন দল গড়া হচ্ছে না গত কয়েক মৌসুম। তারকার পেছনে ছোটাও বন্ধ।
একজন সনি নর্দে আর আনে না শেখ জামাল। ওয়েডসন, এমেকা, ল্যান্ডিংদের নিয়ে ধারালো ত্রিফলা আক্রমণভাগ গত দুই মৌসুম দেখা যায়নি। বর্তমান দলে নেই জাতীয় দলের কেউ। এই শেখ জামাল ধানমন্ডি নামে বড় ক্লাব হলেও খেলোয়াড় তালিকা চোখ কাড়ে না।
২০১৩ ও ২০১৫ সালে টানা দুটি ফেডারেশন কাপ জেতার পর এই টুর্নামেন্টে আর ফাইনালেই উঠতে পারেনি ক্লাবটি। প্রিমিয়ার লিগ জেতে না পাঁচ বছর হলো।
২০১০-১১, ২০১৩-১৪ ও ২০১৫ সালের লিগজয়ী সেই শেখ জামাল গত ফেডারেশন কাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়। তবে লিগে শুরুটা করেছিল দারুণ। করোনায় লিগ পরিত্যক্ত হওয়ার আগে ৫ ম্যাচে চার জয়ে ১২ পয়েন্ট।
৯ মাস পর দরজায় কড়া নাড়তে থাকা নতুন মৌসুমে শেখ জামাল চায় গত লিগের শেষ থেকে শুরু করতে।
দেশি কোনো খেলোয়াড় বাদ না দিয়ে এবার দলটা রাখা হয়েছে অপরিবর্তিত। করোনায় উন্মুক্ত দলবদল না থাকলেও সমঝোতার ভিত্তিতে খেলোয়াড় যোগ-বিয়োগ করা যেত।
শেখ জামাল সেটি করেছে বিদেশিদের ক্ষেত্রে। গতবারের পাঁচ বিদেশির মধ্যে আইভরি কোস্টের ফরোয়ার্ড বাল্লো ফামুসা ও ডিফেন্ডার মানডেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পোস্টে অভিজ্ঞ জিয়া ও মামুন খান।
তাঁদের নিয়ে কাজ করার ফাঁকে গোলকিপার কোচ বিপ্লব ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘বর্তমান দলে জাতীয় দলের খেলোয়াড় না থাকলেও অভিজ্ঞ আর তরুণদের নিয়েই দেখবেন শেখ জামাল ভালো করবে।’
রক্ষণে নিকট অতীতে জাতীয় দলে খেলা কেষ্ট, রেজাউল, আরিফুলদের ওপর আস্থা অনেক। জাপানি কাতোর বদলে এশিয়ান কোটায় মাঝমাঠে থাকবেন উজবেকিস্তানের ওতাবেক।
বিজেএমসির জার্সিতে তাঁর হ্যাটট্রিক আছে ঢাকার মাঠে। মাঝমাঠে প্রতিভা অপচয় করা খেয়ালি ফুটবলার জাহিদ। তবে সবাইকে ছাপিয়ে মাঝমাঠে পুরোনো মুখ সোলেমান কিংই মূল ভরসা। ২২ বছরের তরুণ গোল করান ও করেন। দারুণ কার্যকর এক ফুটবলার।
এবারও তাঁরই অধিনায়ক হওয়ার কথা। সঙ্গে যোগ হয়েছেন গাম্বিয়ান ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার স্ট্রাইকার সুলেমান সিল্লাহ। গতবার শেখ জামালেই সিল্লাহ অনুশীলন করলেও আন্তর্জাতিক ছাড়পত্র না আসায় তাঁকে নিবন্ধিত করানো যায়নি। সিল্লাহকে নিয়ে এবার শেখ জামালে বাড়তি আশা আছে।
তিন গাম্বিয়ান এবং ওতাবেক ভালো করলে শেখ জামাল আলো কাড়বে। দলের অনুশীলন দেখতে দেখতে ক্লাবটির ফুটবল চেয়ারম্যান আশরাফউদ্দিন আহমেদ (চুন্নু) বলছিলেন, ‘বিদেশি সংগ্রহটা ভালো হয়েছে আমাদের। দলের শক্তি বেড়েছে। আমরা ফেডারেশন কাপ ও লিগে শিরোপা লড়াই করব।’
এই লড়াইয়ে সহযাত্রী সদ্য করোনামুক্ত সহকারী কোচ জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার হাসান আল মামুনের কণ্ঠেও একই সুর।
মনোরম ক্লাব চত্বরে ভেসে বেড়ানো এই সুর মৌসুমের শেষ পর্যন্ত থাকবে তো?
নতুন মৌসুমে শেখ জামাল:
গোলকিপার: জিয়া, মামুন খান, মাসুম, টিটু
ডিফেন্ডার: মনির, মনসুর আমিন, নীরা, রেজাউল, কেষ্ট, আরিফুল, মামুন, ইফতেখার, শাকিল, শ্যামল, আলাউদ্দিন
মাঝমাঠ: ফজলে রাব্বি, ওমর ফারুক, ইমতিয়াজ জিতু, সৌরভ, ফয়সাল, দিদার, জাবেদ, জাহিদ, ওতাবেক (উজবেকিস্তান), সোলেমান কিং (গাম্বিয়া)।
আক্রমণ: ওমর জোবে (গাম্বিয়া), সুলেমান সিল্লাহ (গাম্বিয়া), আফসার
কোচ: শফিকুল ইসলাম