২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

এল ক্লাসিকোতে পড়েছে দারিদ্র্যের ছাপ

ক্লাসিকো নিয়ে আগের সে উত্তেজনা এখন টের পাওয়া যায় না।ফাইল ছবি রয়টার্স

আজ রাতে মুখোমুখি হচ্ছে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ। বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় শুরু হবে এ মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো। বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় ম্যাচ এটি। এ ম্যাচের অপেক্ষায় থাকেন সবাই। সেরা সব তারকারা মাঠে নামেন এ দিন। ক্লাব ফুটবলে এর চেয়ে বড় ম্যাচ আর হয় না।

এটুকু বলেই দম নিতে হচ্ছে। সে সঙ্গে ভাবতে হচ্ছে। এ ম্যাচ নিয়ে যত স্তুতি বাক্য লেখা হলো, তা কি এখন আর সত্যি বলা যায়? কোনো সন্দেহ নেই স্প্যানিশ ফুটবলের সবচেয়ে বড় ম্যাচ এটি। এখনো লিওনেল মেসি নামের একজন খেলোয়াড় এ ম্যাচ খেলতে মাঠে নামবেন। কিন্তু ক্লাসিকো নিয়ে আগের সেই উন্মাদনা আর নেই। বিস্ময়করভাবে ব্র্যান্ডের মূল্যের হিসাবে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় তিন ক্লাবের মধ্যে থাকা বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ আর্থিকভাবে দৈন্য দশায় পড়েছে। আর তার প্রভাব পড়েছে এল ক্লাসিকোতে।

এল ক্লাসিকো মানেই এক সময় ছিল সেরাদের লড়াই। কোনো সন্দেহ নেই আজ ন্যু ক্যাম্পে যাঁরা মাঠে নামবেন, তাঁদের মধ্যে বড় বড় সব তারকা আছেন। আছেন ফুটবল বিশ্বের বেশ কজন কিংবদন্তি। বর্তমান ব্যালন ডি অর জয়ী মেসি তো আছেনই, আছেন তাঁর আগের বছর ব্যালন জেতা লুকা মদরিচ। এরই মাঝে কিংবদন্তি বনে যাওয়া সের্হিও রামোস ও জেরার্দ পিকে আছেন। টনি ক্রুস, রাফায়েল ভারান কিংবা সের্হিও বুসকেতসের মতো সবকিছু জেতা ফুটবলারও থাকবেন। আঁতোয়ান গ্রিজমান, ফিলিপে কুতিনিও বা করিম বেনজেমার মতো স্কিলের দিক থেকে অনন্য খেলোয়াড়েরাও থাকবেন।

তরুণ আনসু ফাতি বা ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের ঝলকও হয়তো আজ দেখা যাবে। আগামীর তারকা বলতে এ দুজনকেই ভাবা হচ্ছে। দারুণ ফর্মে থাকা দুজন আজ আলো ছড়ালেই জমে উঠবে ম্যাচ। কিন্তু এই যে এতজন খেলোয়াড়ের নাম বলা হলো, এরা কেউই আর বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের তালিকায় জায়গা পান না। গত মৌসুমের ব্যালন ডি অর তো করোনা ভাইরাসের কারণে বাতিল করা হয়েছে। এর আগের মৌসুমে এ পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় চূড়ান্ত বিজয়ী মেসি ছাড়া এ দুই দলের কেউই ছিলেন না। এবার বাতিল করা হলেও সংক্ষিপ্ত তালিকায় শেষ পর্যন্ত কেউ জায়গা পেতেন কি না সন্দেহ থেকে যায়।

রিয়ালের আক্রমণে এখন ভিনিসিয়ুসের খেলাই শুধু সমর্থকদের আনন্দ দেয়।
ফাইল ছবি রয়টার্স

এক সময় এল ক্লাসিকো মানেই ছিল সেরাদের লড়াই। মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মধ্যে চিরন্তন সে লড়াইটা তো ছিলই। এ ছাড়াও মাঠের প্রতিটি অবস্থানে যারা খেলতেন তারা স্বীয় অবস্থানে বিশ্বের সেরাদের একজন ছিলেন। একদিকে পিকে-পুয়োল, ওদিকে রামোস-পেপে। ফুলব্যাকদের মধ্যে মার্সেলো ও দানি আলভেজের মধ্যকার লড়াই জমত। মধ্যমাঠে বুসকেতস-জাভি-ইনিয়েস্তার জবাব দিতেন মদরিচ-ক্রুস। আক্রমণভাগে এমএসএন ত্রিফলার জবাব দিতেন বিবিসি।

সে সব দিন অতীত হয়েছে। এখন দুই দলের সেরা দিন ফেলে আসা ও সেরা দিনের অপেক্ষায় থাকা ফুটবলারের ভিড়। এর পেছনে দুই ক্লাবের বোর্ডের ভূমিকা দেখবেন অনেকে। তবে অর্থের ভূমিকাটাই এখানে বেশি। বহুদিন ধরে লওতারো মার্তিনেজকে কেনার চেষ্টা চালানো বার্সেলোনা এবার আর তাঁকে কেনার মতো প্রস্তাবই পাঠাতে পারেনি। অগতির গতি হিসেবে মেম্ফিস ডিপাইকে কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটাও সম্ভব হয়নি। মাত্র ১ কোটি ৫০ লাখ ইউরো জোগাড় করতে পারেনি বার্সেলোনা।

রিয়াল মাদ্রিদ তো আরও এক কাঠি সরেস। এ মৌসুমে কাউকে কেনার চেষ্টাই করেনি। বরং ক্লাব থেকে বেতনের বোঝা কমাতে হামেস রদ্রিগেজ ও গ্যারেথ বেলের মতো খেলোয়াড়কে বিনা মূল্যে ছেড়ে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ায় কাউকে না কিনে বরং ব্যয় কমানোর দিকে হেঁটেছে তারা। অবশ্য আগামী মৌসুমে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে কেনার ইচ্ছাও এতে ভূমিকা রেখেছে। এ দুই ক্লাব না হয় দল বদলে খরচ করতে না পারার পেছনে কিছু কারণ দেখিয়ে পার পেয়ে যেতে পারে। কিন্তু লা লিগার দৈন্য দশা ফুটে উঠেছে পুরো দলবদলেই। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ যেখানে করোনা আক্রান্ত অর্থনীতিতেও দেড় শ কোটি ইউরোর বেশি খরচ করেছে। সেখানে লা লিগায় সেটা ৩৫ কোটির কম।

এক সময় তারকা ফুটবলের স্বপ্ন ছিল লা লিগায় খেলা। দক্ষতা দেখানোর জন্য লা লিগাই ছিল সবচেয়ে দৃষ্টি সুখকর। কিন্তু অর্থবিত্তে দিন দিন পিছিয়ে পড়ার ফলে দিন দিন তারকা হারাচ্ছে লিগটি। প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড়েরাও লা লিগা ভুলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যাচ্ছেন। বার্সেলোনা বা আতলেতিকো যাকে পেতে চেয়েছিল সেই রদ্রিগো মরেনো এ মৌসুমে যোগ দিয়েছেন সদ্য প্রিমিয়ার লিগে ওঠা লিডস ইউনাইটেডে। স্পেন জাতীয় দলের সর্বশেষ স্কোয়াডে রিয়াল ও বার্সেলোনা থেকে যতজন ডাক পেয়েছিলেন, লিডস থেকেও ততজন ডাক পেয়েছিল—এ তথ্যটা লা লিগার জন্য আশঙ্কা জাগানিয়া তো বটেই।

মেসির উত্তরসূরি হওয়ার সব সম্ভাবনাই দেখাচ্ছেন ফাতি।
ফাইল ছবি রয়টার্স

এতে দুই ক্লাবের আর্থিক দিকটাই বেশি প্রভাব ফেলছে। এক সময় লা লিগার সম্প্রচার সত্ত্বের সিংহ ভাগ এ দুই ক্লাব নিয়ে নিত। ফলে অন্য ক্লাবগুলোর ওপর দাপট দেখিয়ে বেড়াত বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ। দেশটির সেরা সব তারকাদের টেনে নিতে কষ্ট হতো না তাদের। কিন্তু এখন সে নিয়ম বদলেছে। এখনো অন্য ক্লাবের চেয়ে অনেক বেশিই পায় তারা। কিন্তু ব্যবধান আগের মতো আর চমকে দেওয়ার মতো নয়। ফলে ক্লাবের অনিচ্ছায় এখন আর কাউকে সহজে টেনে নিতে পারে না বার্সা-রিয়াল। তাদের সে দাপুটে রূপটা এখন নিয়ে নিয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। অর্থবিত্তে অনেক অনেক বেশি এগিয়ে থাকার সুবিধা নিয়ে তারা স্পেনের শীর্ষ সারির প্রতিভাদের টেনে নিচ্ছে। কিন্তু সে কাজটা আর এত সহজে করতে পারছে না বার্সা বা রিয়াল।

কোনো সন্দেহ নেই, এখনো বিশ্বের অধিকাংশ ফুটবলারের কাছে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ অমোঘ এক আকর্ষণের নাম। এখনো অনেক লোভনীয় প্রস্তাব ঠেলে এ দুই ক্লাবে যেতে চান অনেক খেলোয়াড়। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত তারকাদের দলে টানতে যে আর্থিক শক্তি প্রয়োজন হয় সেটা যে দিন দিন কমছে তাদের সেটা এক করোনা সংকট দেখিয়ে দিয়েছে। আর এর প্রভাবও পড়ছে এল ক্লাসিকোতে।