তাঁর সিদ্ধান্তটা নিতে এত দেরি হওয়ায় অনেকে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। বিরক্তিটা তাঁকে নিয়ে গুঞ্জনের দোলাচলের কারণেও। একবার শোনা যেত কিলিয়ান এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদে যাচ্ছেন, আরেকবার শোনা যায় এমবাপ্পে পিএসজিতেই থাকছেন।
শেষ পর্যন্ত গুঞ্জনের শেষ হয়েছে পিএসজিতে এমবাপ্পের চুক্তি নবায়নে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত পিএসজির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছেন ২৩ বছর বয়সী ফরাসি ফরোয়ার্ড। খবরটা পিএসজির জন্য স্বস্তি হয়ে এসেছে। তবে এত দিন ধরে নিজেদের দলে এমবাপ্পেকে পাওয়ার স্বপ্নকে বিশ্বাসে পরিণত করে ফেলা রিয়াল কতটা বিরক্ত, সেটি বোধ হয় না বললেও চলে।
তবে পিএসজিতে থেকে গেলেও শৈশবের প্রিয় ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ যে নিজের মনের কোণেই আছে, সেটি বুঝিয়ে দিয়েছেন এমবাপ্পে। আগামী শনিবার চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদকেই সমর্থন দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন পিএসজি ফরোয়ার্ড।
টুইটারে গতকাল নিজের সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করে বিশাল পোস্ট করেছেন এমবাপ্পে। সেটির চতুর্থ প্যারাগ্রাফে থাকল রিয়াল মাদ্রিদ আর ক্লাবটির সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন। পিএসজির একজন খেলোয়াড় রিয়ালকে ধন্যবাদ জানানোর কোনো কারণ নেই, কাগজপত্রে তো আর রিয়ালের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই। তবু এমবাপ্পে জানিয়েছেন, সম্ভবত রিয়াল তাঁর প্রিয় ক্লাব বলেই!
ছোটবেলা থেকে রিয়ালের ভক্ত এমবাপ্পে স্প্যানিশ ক্লাবটিতে যাওয়ার ইচ্ছা কখনো গোপন করেননি। এমনকি নিজের নামে প্রকাশিত কমিকস ‘জ্য মাপেল কিলিয়ান’-এও বেশ ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন রিয়ালে যাওয়ার ইচ্ছার কথা। পিএসজিতে তাঁর আগের চুক্তিটি আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল, সেটি শেষে এমবাপ্পে রিয়ালেই যাচ্ছেন—এটি মোটামুটি নিশ্চিত ছিল। এমনই যে, মাদ্রিদের সংবাদমাধ্যম, সমর্থক, এমনকি ক্লাবের খেলোয়াড়দের কথাবার্তায়ও ‘এমবাপ্পে আমাদেরই একজন’ সুর ছিল।
কিন্তু পিএসজি তাঁকে ছাড়তে চায়নি। একে তো বয়স আর ফর্ম মিলিয়ে এমবাপ্পে এখন ক্যারিয়ারের চূড়ায়, তাঁকে হারাতে চায় না ফরাসি ক্লাবটি। তার ওপর আগামী নভেম্বরে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ। কাতারের মালিকানাধীন পিএসজি এর আগে দলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনকে হারাতে না দিতে মরিয়া হওয়ারই কথা।
ফল? এমবাপ্পের সঙ্গে যে অঙ্কের চুক্তি করেছে পিএসজি, সেটিকে অবিশ্বাস্য, চোখধাঁধানো বললেও কম বলা হয়ে যায়। ৩০ কোটি ইউরো শুধু চুক্তি স্বাক্ষরের বোনাস হিসেবেই পেয়েছেন এমবাপ্পে, কর কেটে নেওয়ার পরই ১৫ কোটি ইউরো করে বেতন পাবেন প্রতিবছরে। পাশাপাশি এমবাপ্পের ইমেজস্বত্বের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ পিএসজি এমবাপ্পের কাছেই ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে।
এ তো গেল আর্থিক লাভ, এর পাশাপাশি ক্লাবের কোচ নিয়োগ, খেলোয়াড় কেনাবেচার ক্ষেত্রেও এমবাপ্পের মতামত গুরুত্ব পাবে—শর্ত আছে বলে শোনা যায়। এমনকি এমবাপ্পেকে রাজি করাতে কাতারের আমির, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টও জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে খবর এসেছে।
এত কিছুর পর গত শনিবার এমবাপ্পের পিএসজিতে চুক্তি নবায়নেরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে। মাদ্রিদে তাতে যেন আগুন লেগেছে। সংবাদমাধ্যম এমবাপ্পেকে ধুয়ে দিচ্ছে, রিয়ালের খেলোয়াড়েরা একযোগে ক্লাবের প্রতি নিজেদের আনুগত্য নতুন করে জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। এমবাপ্পের সমালোচনা তো চলছেই!
ক্লাবের ঘোষণার পরদিন গতকাল তাই এমবাপ্পে টুইটারে দিয়েছেন নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা। সাধারণ ব্যাখ্যাই। পিএসজির ‘ক্রীড়াপ্রকল্প’ তাঁকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে, জন্মভূমি ফ্রান্সে চালিয়ে যাওয়া...সাধারণত খেলোয়াড়েরা কেতাবি ভাষায় যা বলেন আর কী! তবে এরপর রিয়াল মাদ্রিদকেও ধন্যবাদ জানিয়ে রেখেছেন এমবাপ্পে। মাদ্রিদের সংবাদমাধ্যম, সমর্থক, ক্লাবের কর্মকর্তাদের ঘায়ে একটু পানি দেওয়ার চেষ্টাই কি? হতে পারে!
এমবাপ্পে টুইটারে লম্বা পোস্টে মাদ্রিদের প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদ ও তাদের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই। এত অসাধারণ একটা ক্লাব আমাকে দলে নিতে চেয়েছে, এটা কত বড় সম্মান ও ভাগ্যের ব্যাপার, সেটি আমি বুঝি। তাদের হতাশাটাও বুঝি।’ এরপর বুঝিয়ে দিলেন রিয়ালের প্রতি তাঁর টানের কথা, ‘আমার ঘর প্যারিসে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে তাদের সবচেয়ে বড় সমর্থক আমিই হব।’
প্যারিসে হলেও ফাইনালটা অবশ্য পিএসজির মাঠে নয়, ফ্রান্সের জাতীয় স্টেডিয়াম স্তাদ দো ফ্রান্সে।