এক গোলের দাম যখন ৪১ কোটি টাকা!
২০১৮-এর জানুয়ারিতে চুক্তিটা যখন হলো, তখন মনে হয়েছিল লটারির টিকিট জিতেছে আর্সেনাল। অ্যালেক্সিজ সানচেজ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে চলে গিয়েছেন, দলের দ্বিতীয় সেরা খেলোয়াড়কে ধরে রাখতে পেরে তাই তৃপ্ত হয়েছিল গানাররা। এক বছর পর সেই চুক্তিই গলার কাঁটা মনে হচ্ছে আর্সেনালের কাছে। মেসুত ওজিলের একেক গোলের জন্য তাদের এবার ৩.৮ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হচ্ছে। অর্থাৎ ৪১ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় একেকটি গোল।
গত বছর ওজিলের চুক্তি নবায়ন করেছে ক্লাব। সাড়ে তিন বছরের চুক্তিতে ৬২ মিলিয়ন পাউন্ডের বিপুল অর্থ প্রাপ্তি হওয়ার সম্ভাবনা তাঁর। চুক্তি নবায়নের পর নিজের মূল্য ভালোই বোঝাচ্ছিলেন জার্মান মিডফিল্ডার। ১৩ ম্যাচে এক গোল করেছেন, সাতটা গোল করিয়েছেন। দলকে ইউরোপার সেমিফাইনালেও তুলেছিলেন।
কিন্তু এসবই গত মৌসুমের কথা। নতুন মৌসুমে নতুন কোচের অধীনে চিত্রটা পালটে গেছে। উনাই এমেরির অধীনে সম্ভাব্য ৩৯ ম্যাচের মাত্র ১৯টিতে ছিলেন। এ ম্যাচগুলোতে তাঁর ৪ গোল আর ২টি এসিস্ট। অর্থাৎ নতুন চুক্তির পর ১৯ মিলিয়ন পাউন্ড বুঝে নেওয়ার বদলে দলকে মাত্র ৫টি গোল উপহার দিয়েছেন ওজিল! প্রতি ম্যাচের জন্য ৫ লাখ ৮৭ হাজার পাউন্ড নিয়েছেন।
যে গোল করেছেন বা করিয়েছেন, সেগুলো দলের কাজে লাগলেও হতো। এখন পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করা গোলগুলো কোনো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আসেনি। পাঁচ গোলের দুটি এসেছে ইউরোপা লিগে অস্টারসুন্ড ও ভরস্ক্লার বিপক্ষে। দলগুলোর নাম অপরিচিত ঠেকলে দোষ দেওয়া যাচ্ছে না। ইউরোপের দ্বিতীয় সেরা মহাদেশীয় প্রতিযোগিতাতেও পাতে তোলার মতো দল নয় এরা। ওজিলের বাকি তিন গোল নিউক্যাসল, ওয়াটফোর্ড ও লেস্টারের বিপক্ষে। এদের মাঝে লিগে ওয়াটফোর্ডই একমাত্র শীর্ষ দশে আছে, যদিও নামে-ভারে এ দলটিই সবচেয়ে পিছিয়ে।
সে তুলনায় গত মৌসুমে ইউরোপাতে মিলান ও সিএসকেএ মস্কোর বিপক্ষে পাঁচ এসিস্ট একটু ভালো দেখাচ্ছে। তবে সেটাও তো গত মৌসুমের কথা। কিন্তু যে খেলোয়াড়ের জন্য মিনিটে ৭ হাজার ৬০০ পাউন্ড দিচ্ছে ক্লাব, তাঁর কাছ থেকে আরেকটু ভালো কিছু আশা করতেই পারে আর্সেনাল। কিন্তু ওজিল এখনো পর্যন্ত গোলে প্রতি শটের জন্য ১২ লাখ পাউন্ড নিয়েছেন, প্রতিটি পাসের জন্য পেয়েছেন ১২ হাজার ৩০০ পাউন্ড। যখনই মাঠে নামছেন, সমর্থকদের হতাশা আরও বাড়িয়ে তুলছেন ওজিল। এভাবে চললে গত বছরের সে চুক্তি আর্সেনালের ক্লাবের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত হিসেবেই গণ্য হবে!
মজার ব্যাপার, এ ব্যাপারে ওজিলের একমাত্র সান্ত্বনা তাঁর সাবেক সতীর্থ সানচেজ। প্রতি সপ্তাহে ৫ লাখ পাউন্ডের বেশি পাওয়া সানচেজ এ মৌসুমে মাত্র দুই গোল করেছেন। অর্থাৎ গোল প্রতি ৭ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন পাউন্ড। একেকটি গোলের জন্য ৮০ কোটি ২৭ লাখ টাকা পাচ্ছেন সানচেজ! চিলিয়ান ফরোয়ার্ডের ভাগ্যকে ঈর্ষা করতেই পারেন লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোরা!