আরিয়েল কোলম্যানের মুখে শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ, ‘এই চল চল।’ যোসেফ আপুসিও সাড়া দিলেন বাংলায়, ‘দাঁড়াও, দাঁড়াও, আসছি।’
দুই ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়া শেখ জামালের ট্রেনার, কোচ দ্রুত হাঁটা দিলেন ড্রেসিংরুমের দিকে। আবাহনীর সঙ্গে পিছিয়ে পড়েও ২-১ ব্যবধানে জয় নিয়ে মৌসুম শেষ করতে পারার তৃপ্তি তাঁদের চোখেমুখে। কোচ আপুসির আনন্দটাই সবচেয়ে বেশি, ‘সফলভাবে সবকিছু হলো। শেষটাই মানুষ মনে রাখে বেশি। তাই শেষ ম্যাচেও জয় পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’
এই ম্যাচ দুই গোলের ব্যবধানে জিতলে গোলগড়ে তৃতীয় হওয়ার সুযোগ ছিল আবাহনীর সামনে। কিন্তু ম্যাচটা হেরে শেষ পর্যন্ত চতুর্থ হওয়া আবাহনী শিবিরে রেফারি জালালউদ্দিনের বিরুদ্ধে অসন্তোষের আগুন। আপাতশান্ত কোচ অমলেশ সেন পর্যন্ত শেষবেলায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি নিজেকে, ‘এত বাজে রেফারিং জীবনে কমই দেখেছি। পেনাল্টি না দিয়ে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে লাল কার্ড! এ দেশে খেলব কী করে! লিগটা সত্যিই খুব বাজে গেল আমাদের।’
রেফারিং নিয়ে ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপুর বলা কথাগুলো ছিল খুবই তীর্যক। খেলোয়াড়েরাও ক্ষুব্ধ। গ্যালারিতে হাতেগোনা কিছু আবাহনী সমর্থক তাতে সুর মেলানোয় কাল সন্ধ্যার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম হয়ে উঠল উত্তপ্ত। এটি যে অষ্টম প্রিমিয়ার লিগের গুরুত্বহীন শেষ ম্যাচ, তা কে বলবে!
পুরো লিগেই এমন উত্তেজনা খুব কম দেখা গেছে। এই উত্তেজনা উসকে দিয়েছে আবাহনীর বিরুদ্ধে প্রদর্শিত দুটি লাল কার্ড। ৮৫ মিনিটে স্ট্রাইকার ওয়াহেদ বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়ে গেলেন, রেফারির বাঁশি শুনে আবাহনী ভেবেছিলেন পেনাল্টি। কিন্তু ডাইভিংয়ের অভিযোগে উল্টো ওয়াহেদ দেখলেন লাল কার্ড। ডিফেন্ডার মামুন মিয়া লাল কার্ড দেখেছেন শেষ বাঁশির পর! শেখ জামাল অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বলছিলেন, ‘ওরা যেভাবে গালাগাল করেছে রেফারিকে, লাল কার্ড তো দেবেই।’
প্রথম পর্বে শেখ জামালকে ২-০ গোলে হারানোর সুখস্মৃতিটা ফিরিয়ে আনতে এদিন মরিয়া হয়েই খেলছিল আবাহনী। শেখ জামাল চেয়েছে জয় দিয়েই ইতি টানতে। দুই দলের এই মর্যাদার লড়াইয়ে শেখ জামাল জিতেছে যথারীতি শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়াইয়ের মানসিকতায়। সদ্য এএফসি কাপে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসার আত্মবিশ্বাস তো ছিলই।
তাই ৬৫ মিনিটে দারুণ এক জোরালো শটে ডিফেন্ডার নাসির আবাহনীকে এগিয়ে নিলেও ম্যাচে ফিরতে দেরি হয়নি চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালের। মিনিট চারেক পরই এমেকা ডার্লিংটন বুদ্ধিদীপ্ত শটে করলেন লক্ষ্যভেদ (১-১)। ৮৯ মিনিটে ল্যান্ডিং দারবোয়ে দৃষ্টিকাড়া ভলিতে এনে দিলেন জয়সূচক গোল।
জয়টা ছিনিয়েই নিল শেখ জামাল। ম্যাচ শেষে মামুনুল যেন এক সুখী মানুষ, ‘অসাধারণ মৌসুম কাটল আমাদের। সবার চেষ্টার ফসলই ঘুরে তুললাম আমরা।’
পয়েন্ট তালিকা
ম্যাচ জয় ড্র হার গোল পয়েন্ট
শেখ জামাল ২০ ১৬ ৩ ১ ৬০/২২ ৫১
শেখ রাসেল ২০ ১৩ ৩ ৪ ৪১/২৫ ৪২
মোহামেডান ২০ ১১ ৫ ৪ ৩৮/১৭ ৩৮
আবাহনী ২০ ১০ ৫ ৫ ৩২ /১৩ ৩৫
ব্রাদার্স ২০ ১০ ৫ ৫ ২৯/২১ ৩৫
মুক্তিযোদ্ধা ২০ ৮ ৪ ৮ ৩১/৩১ ২৮
বিজেএমসি ২০ ৬ ৪ ১০ ২৬/২৮ ২২
ফেনী সকার ২০ ৫ ৩ ১২ ২৬/৪২ ১৮
চট্টগ্রাম আবাহনী ২০ ৩ ৭ ১০ ১৩/৩৫ ১৬
রহমতগঞ্জ ২০ ৩ ৫ ১২ ২১/৩৯ ১৪
ফরাশগঞ্জ ২০ ০ ৬ ১৪ ১৫ /৫৯ ৬
সেরা আট গোলদাতা
১৯ এমেকা ডার্লিংটন (শেখ জামাল)
১৭ ওয়েডসন আনসেলমে (শেখ জামাল)
১৭ ইসমাইল বাঙ্গুরা (মোহামেডান)
১৫ অগাস্টিন ওয়ালসন (ব্রাদার্স)
১৪ ল্যান্ডিং দারবোয়ে (শেখ জামাল)
১৩ এনামুল হক (মুক্তিযোদ্ধা)
১০ পল এমিলি (শেখ রাসেল)
১০ সানডে চিজোবা (আবাহনী)