ইব্রা নায়ক, খলনায়কও
কোপা ইতালিয়ার কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। তাতে আর যা–ই হোক না কেন, ডার্বির উত্তেজনা ফিরেছে ষোলো আনা। এককালে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় ডার্বি ম্যাচের পরিচিতি পাওয়া ‘মিলান ডার্বি’ কয়েক বছর ধরেই রং হারিয়েছিল, সেটা দুই দলের পড়তি ফর্মের কারণেই। গত রাতে মিলান ডার্বি যেন তার সেই আগের রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে ফিরে এসেছিল। আর তাতে শেষ হাসি হেসেছে ইন্টার মিলান। মিলানকে ২-১ গোলে হারিয়ে উঠেছে সেমিফাইনালে।
ওদিকে ম্যাচের শুরুর দিকে গোল করে যথারীতি দলের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হওয়া জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ পরে লাল কার্ড দেখে দলের বিপদ বাড়িয়েছে, হয়েছেন খলনায়ক। ম্যাচের একদম শেষ দিকে যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিক থেকে গোল করে দলকে মহামূল্যবান এক জয় এনে দিয়েছেন ড্যানিশ মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন। দলকে এনে দিয়েছেন মিলান শহরে ‘দাদাগিরি’ করার লাইসেন্স!
প্রথম থেকেই গোলের সুযোগ পেয়েছে দুই দল। রোমেলু লুকাকু, রাফায়েল লিয়াও, ইব্রাহিমোভিচ—গোল করতে পারেননি, নয়তো শুরুতেই বেশ কয়েকটা গোল দেখা যেত ম্যাচে। ইন্টার তুলনামূলক ভালো খেলছিল, কিন্তু প্রথমে এগিয়ে যায় এসি মিলানই। ইব্রাহিমোভিচের ডান পায়ের দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে ৩০ মিনিটে এগিয়ে যায় মিলান। ইন্টারের বর্ষীয়ান গোলরক্ষক সামির হান্দানোভিচ নড়ার সুযোগও পাননি। ক্লাব ক্যারিয়ারে এটা ইব্রার ৪৯৯তম গোল।
তবে প্রথমার্ধের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন এটা নয়; বরং দুই দলের দুই মহারথীর ‘দ্বৈরথ’ ফুটবলপ্রেমীরা দেখেছে এই অর্ধেই। লুকাকুকে করা একটা ফাউলকে কেন্দ্র করে মাঠের মধ্যে বচসায় জড়িয়ে পড়েন দুদলের দুই মূল তারকা ইব্রাহিমোভিচ ও লুকাকু। প্রায় হাতাহাতি হয়েই যাচ্ছিল। দুজন দুজনের মা-স্ত্রীকে জড়িয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালিও করেছেন কিছুক্ষণ। শেষমেশ দুজনকেই হলুদ কার্ড দেখিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন রেফারি।
দ্বিতীয়ার্ধে আস্তে আস্তে ম্যাচ মিলানের হাত থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। সার্বিয়ান সেন্টারব্যাক আলেকসান্দর কোলারোভকে অন্যায়ভাবে ফেলে দেওয়ার জন্য আরেকটা হলুদ কার্ড দেখেন ইব্রাহিমোভিচ। দুই হলুদ কার্ড দেখার ফলে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। অর্থাৎ ম্যাচের তিন ভাগের এক ভাগ সময়ের চেয়েও বেশি একজন কম নিয়ে খেলেছে এসি মিলান। এরপর মিলানের ওপর আরও জাঁকিয়ে বসে ইন্টার।
৭০ মিনিটে মিলানে নতুন আসা মিডফিল্ডার সোয়ালিহো মেইতে ডি-বক্সের মধ্যে ফাউল করে বসেন ইন্টারের ইতালিয়ান মিডফিল্ডার নিকোলো বারেল্লাকে। সেখান থেকে পাওয়া পেনাল্টিতে দলকে সমতায় ফেরান লুকাকু। দ্বিতীয়ার্ধে যোগ করা সময় হিসেবে আরও ১০ মিনিট দুই দলকে খেলতে দেন রেফারি। আর সেটাই সৌভাগ্য বয়ে আনে ইন্টারের জন্য। যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে বক্সের বাইরে আবারও অযথা এক ফাউল করে বসেন মেইতে। সেখান থেকে পাওয়া ফ্রি-কিকে দুর্দান্তভাবে গোল করে দলকে অমূল্য এক জয় এনে দেন ড্যানিশ মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন।
আর তাতেই নিশ্চিত হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য।