ইনস্টাগ্রামে তারকা হওয়ার কৌশল জানালেন মরিনিও
জোসে মরিনিওকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে মিলিয়ে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। দুজনই পর্তুগিজ, দুজনই যেকোনো মূল্যে জিততে পছন্দ করেন। কিন্তু মিলটা এখানেই শেষ। দুজনের মধ্যে তুলনারও প্রশ্ন আসে না। একজন সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন, আরেকজন নিজের ফুটবল ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নন। কোচ হিসেবে ফুটবলকে যা দিয়েছেন, তাতেই কিংবদন্তি হয়ে থাকবেন মরিনিও।
রোনালদোর সঙ্গেই তুলনা টানা যাচ্ছে না, সেখানে আরিয়ানা গ্রান্দে, ডোয়াইন জনসন, কাইলি জেনার বা কিম কার্ডাশিয়ানদের সঙ্গে তুলনা টানার তো প্রশ্নই ওঠে না। ফুটবল ছেড়ে এভাবে বিনোদন জগতে ঢুকে পড়ার কারণ হলো, তাঁদের ইনস্টাগ্রামে অনুসারীর সংখ্যা। এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অনুসারী রোনালদোর। ২৩ কোটি ৮৮ লাখ মানুষ অধীর আগ্রহে বসে থাকেন রোনালদো কখন কোনো কিছু পোস্ট করবেন সে অপেক্ষায়। এরপরই ২০ কোটি ৩৩ লাখ অনুসারী নিয়ে আছেন সংগীতশিল্পী গ্রান্দে। জনসন (দ্য রক), জেনারদের অনুসারীর সংখ্যাও ২০ কোটির কাছাকাছি।
মরিনিও ছবি শেয়ার করার জন্য জনপ্রিয় এই মাধ্যমে এখনো অতটা প্রভাবশালী হতে পারেননি। ইনস্টাগ্রামে টটেনহাম হটস্পার কোচের অনুসারীর সংখ্যা এখনো মাত্র ১১ লাখ। রোনালদোদের অনুসারীসংখ্যার তুলনায় বেশ হাস্যকরই দেখায় একে। কিন্তু বহুদিন ধরে ইনস্টাগ্রাম থেকে দূরে থাকা মরিনিও গত কিছুদিনে রাতারাতি তারকা হয়ে উঠেছেন এই ওয়েবসাইটে। মজার সব পোস্ট করে ইনস্টাগ্রামে বেশ সাড়া ফেলেছেন দুই চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী কোচ। নিজের সাফল্যের রহস্যটা সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন টটেনহামের টুইটারে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দায়িত্বে থাকার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর ত্যক্তবিরক্ত হয়ে ইনস্টাগ্রাম অ্যাপটি মোবাইল থেকে মুছেই ফেলেছিলেন মরিনিও। সেই ব্যক্তিই আবার ইনস্টাগ্রামে ফিরেছেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কামিয়ে নিচ্ছেন ভক্তদের ভালোবাসা। টটেনহামের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে নতুন এক ভিডিও দেওয়া হয়েছে। সেখানে মরিনিওর ইনস্টাগ্রাম সাফল্য নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। চার মিনিটের বেশি লম্বা ভিডিওতে মরিনিও নিজের সাফল্যের পথটা দেখিয়েছেন। অন্যদেরও বলছেন, কীভাবে কী করলে ইনস্টাগ্রামে সাফল্য পেতে পারেন।
মজার সে ভিডিওর শুরুতেই বিনয়ের অবতার বনেছেন মরিনিও, ‘আমার কোনো ধারণা নেই। আমি তো শুধু যা আসল তাই দিই।’ এরপরই ধীরে ধীরে ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে অনুসারীদের মনোযোগ কাড়েন। নিজের করা পোস্টের উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন কীভাবে অনুসারীদের কাছে গল্প বলতে হয়। উড়োজাহাজে বসে ট্যাবলেটে কিছু দেখার একটা ছবি দিয়েছিলেন মরিনিও। সে প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আপনাকে অনুসারীদের যাত্রার অংশ করতে হবে। আমি টম হার্ডির লেজেন্ড (২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত) চলচ্চিত্রটা দেখছিলাম। আমি যে বার্তা দিতে চেয়েছিলাম, তা হলো ম্যাচের আগে আমি নির্ভারই আছি। আর যেকোনো ভালো চলচ্চিত্র দেখার জন্য সঙ্গে পপকর্ন থাকতে হবে।’
ভিডিওতে আরও অনেক বার্তা দিয়েছেন। এর মধ্যে গত কিছুদিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিখ্যাত হয়ে ওঠা একটি ছবির উদাহরণ দিয়েছেন মরিনিও। ইউরোপা লিগে অ্যান্টোয়ার্পের বিপক্ষে হেরে যাওয়ার পর পোস্ট করেছিলেন সেই ছবি। দেখিয়েছেন। মুখ কালো করে টিম বাসে একা বসে আছেন। মরিনিওর দাবি, ভালো সময় হোক আর খারাপ সময়, সব সময় সত্য বার্তাই দিতে হবে ইনস্টাগ্রামে। সেদিন হারের পর ড্রেসিংরুমে কিছু বলেননি মরিনিও। কারণ, এমন বাজে পারফরম্যান্সের পর মুখ খুললে আর নিজেকে আটকাতে পারবেন না। চেলসির হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জেতা কোচের ভাষায়, ‘আমার এক সহকারী এ ছবিটা তুলেছিল এবং আমার মনে হয়েছে এ ছবিটাই সব বলে দিয়েছে। নিঃশব্দ একটা বাস ছিল এবং পরে বিমানযাত্রায়ও কোনো টুঁ শব্দ ছিল না সেদিন। অনেক সময়ই কথা বলার চেয়ে চুপ থাকাটাই বেশি ভালো।’
আগামীকাল অনেক বড় এক পরীক্ষা মরিনিওর। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে খেলবে টটেনহাম। সিটি কোচ গার্দিওলার সঙ্গে তাঁর দ্বৈরথ তো নতুন কিছু নয়। এর আগে ২৩ বার মুখোমুখি হয়েছেন দুজন। তাতে ১১ বারই জয়ী গার্দিওলা। মরিনিওকে এতবার হারাতে পারেননি অন্য কোনো কোচ। মাত্র ৬ বার জিতেছেন পর্তুগিজ কোচ। এ মৌসুমে দারুণ ফর্মে থাকা টটেনহামের এবারই ভালো সুযোগ মরিনিওর পরিসংখ্যানটা উজ্জ্বল করার।
ঘরের মাঠে আগামীকাল সিটির বিপক্ষে নামবেন মরিনিও। তার আগে এই কোচের দেওয়া সাত পরামর্শ নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে ব্যবহার করে দেখতে পারেন!
মরিনিওর দেওয়া সাত পরামর্শ দেখে নিতে পারেন:
১. অনুসারীদের একটি গল্পের অংশ করুন
২. শ্রোতাদের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করুন
৩. মুহূর্ত ধরতে শিখুন
৪. নতুন কিছু দিন
৫. ভালো সময় পার করুন অথবা খারাপ, সব সময় সৎ থাকুন
৬. নিজের বক্তব্যে জোর দিন
৭. খাঁটি কিছু দেওয়ার চেষ্টা করুন।