ইতিহাসও চোখ রাঙাচ্ছে ইতালিকে

দলীয় অনুশীলনে ইতালি কোচ রবার্তো মানচিনি। তাঁর কৌশলে তাকিয়ে ইতালিয়ানরাছবি: এএফপি

বেচারা জর্জিনিও!

রোমে গত নভেম্বরে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে পেনাল্টিতে গোল করতে পারেননি। জর্জিনিওর সেই ব্যর্থতার খেসারত দিয়েই ইতালি নেমে যায় প্লে অফ সেমিফাইনালে। উত্তর মেসিডোনিয়ার বিপক্ষে পার্লেমোয় আজ রাতে ইউরোপের চ্যাম্পিয়নদের জিততেই হবে।

হারলে মেনে নিতে হবে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের ভাগ্য। জিতলেও শিগগিরই মুক্তি নেই। খেলতে হবে প্লে অফ ফাইনাল, সেখানে প্রতিপক্ষ পর্তুগাল অথবা তুরস্ক। সেখানেও জিতলে তারপর মিলবে কাতার বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বে খেলার টিকিট।

অথচ এই ইতালি ইউরোপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। ৫৩ বছর অপেক্ষার পর গত জুলাইয়ে ইউরো ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ইতালি। রবার্তো মানচিনির দল অপরাজিত থাকার ধারা বজায় রেখে জিতেছিল ইউরোপের মুকুট। গত অক্টোবরে উয়েফা নেশনস লিগের সেমিফাইনালে ইতালির টানা ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত–যাত্রা থামায় স্পেন। আজ কি হবে?

সুইডেনের বিপক্ষে দুই লেগ প্লে অফ ম্যাচ হারায় ২০১৮ বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি ইতালি। এরপর মানচিনি কোচ হয়ে এসে ইতালির খেলার ধাঁচই পাল্টে ফেললেন। আক্রমণাত্মক খেলায় ফিরিয়ে আনেন ফেদেরিকো কিয়েসা–জর্জিনিওদের। তবু জর্জিনিওর সেই ব্যর্থতায় ইতালি এখন রাশিয়া বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মতোই এক পুলসিরাতের ওপর দাঁড়িয়ে। একটু নড়চড় হলেই পতন!

উত্তর মেসিডোনিয়ার মুখোমুখি হওয়ার আগে অনুশীলনে ইতালির খেলোয়াড়েরা
ছবি: এএফপি

ইতালিকে চোখ রাঙাচ্ছে ইতিহাসের এক আলাদা অধ্যায়। ১৯৭৬, ১৯৯২ ও ২০০৪—এই তিন বছর ইউরোজয়ী দল পরবর্তী বিশ্বকাপে মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। খোলাসা করেই বলা যাক। সাবেক চেকোস্লোভাকিয়া (বর্তমানে চেক প্রজাতন্ত্র) ১৯৭৬ ইউরো জয়ের পর ১৯৭৮ বিশ্বকাপে মূল পর্বে খেলার সুযোগ পায়নি।

ডেনমার্ক ১৯৯২ ইউরো জিতলেও দুই বছর পর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি। গ্রিস এই আশ্চর্য–পতনের সর্বশেষ নজির। পর্তুগালকে কাঁদিয়ে ২০০৪ ইউরো জিতলেও জার্মানিতে ২০০৬ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়নি গ্রিকরা।

১৯৭৬ ইউরো ফাইনাল ‘পানেনকা’ পেনাল্টির জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে। সাবেক পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে নির্ধারিত সময় ২–২ গোলে ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে ৫–৩ গোলে জেতে চেক প্রজাতন্ত্র। আন্তনিও পানেনকা কুশলী শেষ শটে লক্ষ্যভেদ করে চেক প্রজাতন্ত্রকে একমাত্র ইউরো জেতান। কিন্তু ১৯৭৮ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে স্কটল্যান্ড ও ওয়েলশের গ্রুপে ৪ ম্যাচে মাত্র ২টি জিতে বাদ পড়ে চেক প্রজাতন্ত্র।

পিটার স্মাইকেল–ব্রায়ান লাউড্রপ–হেনরিক লারসেনদের ১৯৯২ ইউরো জয় ছিল রূপকথা। যুগোস্লাভিয়া ভেঙে যাওয়ায় তাঁদের জায়গায় খেলার সুযোগ পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ডেনমার্ক। কিন্তু দুই বছর পর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়ার গ্রুপে তৃতীয় হয়ে বাদ পড়ে ডেনমার্ক।

শিষ্যদের নিয়ে প্লে অফের বাধা কি টপকে যেতে পারবেন মানচিনি
ছবি: এএফপি

পর্তুগালের মাটিতে গ্রিসের ২০০৪ ইউরো জয়ও রূপকথা। ফাইনালে লুইস ফিগো–ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের হারিয়ে গ্রিস সবাইকে চমকে দিলেও ২০০৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সাত দলের গ্রুপে চতুর্থ হয়ে বাদ পড়ে গ্রিস।

ইতালির সামনে এসব উদাহরণ থাকলেও জর্জো কিয়েল্লিনি আশাবাদী। ইতালিকে বিশ্বকাপে তুলতে মরিয়া দলটির অধিনায়ক, ‘ইউরোতে ভালো স্মৃতি থাকলেও বিশ্বকাপে নেই। তাই বাজে স্মৃতি মুছে ইতিবাচকভাবে (ক্যারিয়ার) সব শেষ করতে চাই।’