ইতালি বিশ্বকাপে নেই, এই দুঃখ আজীবন তাড়া করবে জর্জিনিওকে
স্তাদিও রেঞ্জো বারবেরা আর স্তাদিও ওলিম্পিকো। পালেরমোর রেঞ্জো স্টেডিয়াম থেকে কেউ রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে যেতে চাইলে, সড়ক পথে তাঁকে পাড়ি দিতে হবে ৯৪৫ কিলোমিটার। কাল রাতে দুই মাঠের দূরত্ব মিলিয়ে গেল, ফুটবল পাগল সব ইতালিয়ানের মনেই পালেরমো ছাপিয়ে রোম হাজির হলো। ইস, সেদিন যদি জর্জিনিও পারতেন!
গতকাল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ইউরোপিয়ান অঞ্চলের প্লে–অফের পথ ‘সি’র সেমিফাইনালে হেরে গেছে ইতালি। উত্তর মেসিডোনিয়ার কাছে ১-০ গোলের এই হার নিশ্চিত করেছে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে না বর্তমান ইউরো বিজয়ীদের। অথচ দুটি পেনাল্টি থেকে জর্জিনিও গোল করতে ব্যর্থ না হলে কাল প্লে–অফে খেলারও প্রয়োজন হতো না। দেশের বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ নষ্ট করার ব্যর্থতা আজীবন তাড়া করবে ইতালিয়ান মিডফিল্ডার জর্জিনিওকে।
রবার্তো মানচিনির অধীন দুর্দান্ত ফুটবল খেলছিল ইতালি। ২০১৮ বিশ্বকাপে জায়গা করতে না পারার দুঃখ ভুলে টানা ৩৭ ম্যাচ দলকে হারতে দেননি মানচিনি। এই রেকর্ডযাত্রায় ২০২০ ইউরোও (২০২১ সালে অনুষ্ঠিত) জিতেছে ইতালি। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও পরিষ্কার ফেবারিট ছিল তারা। কিন্তু সুইজারল্যান্ড ২ পয়েন্টে তাদের টপকে গ্রুপসেরা হয়। আর ওদিকে দ্বিতীয় হয়ে প্লে-অফ ভাগ্য পরীক্ষায় নামতে হয় ইতালিকে। প্লে-অফ ভাগ্য যে ইতালির নেই সেটা তখনই বোঝা গেছে, যখন তাদের পথেই পড়েছিল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। প্লে-অফের সেমিফাইনালে জিতলেও ফাইনালে রোনালদোর সামনে পড়ার সম্ভাবনা ইতালির।
রোনালদো ও তাঁর দল কাল প্লে-অফ ফাইনালে চলে গেছে। কিন্তু ইতালি সেমিফাইনাল থেকেই বাদ পড়েছে। অর্থাৎ টানা দুটি বিশ্বকাপে দেখা যাবে না ইতালিকে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমন কিছু ঘটেনি। আর সে দায়টা মিডফিল্ডার জর্জিনিওকেই নিতে হচ্ছে বেশি।
গত ১২ নভেম্বর বাছাইপর্বে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ইতালি, প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ড। ঘরের মাঠে সুইজারল্যান্ডকে হারাতে হবে জেনেই নেমেছিল ইতালি। আর তাহলেই গ্রুপসেরা হয়ে বিশ্বকাপ নিশ্চিত হবে তাদের। নির্ধারিত সময়ের একদম শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি পেল স্বাগতিক দল। চেলসির জার্সিতে নিয়মিত পেনাল্টি থেকে গোল করেন এই মিডফিল্ডার। ১২ গজ দূর থেকে শট নেওয়ার সময় স্নায়ু চাপে ভোগেন না বলে বেশ সুনাম তাঁর। দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেনাল্টি নেওয়ার চাপে সেই জর্জিনিও ভেঙে পড়লেন। নষ্ট করলেন পেনাল্টি!
এই মুহূর্তটাও জন্ম নিত না, যদি গত ৫ সেপ্টেম্বর নিজের কাজটা করতে পারতেন। কদিন আগেই স্নায়ুর চাপ নিতে না পেরে ইউরোর ফাইনালে টাইব্রেকারে নিজের শট থেকে গোল করতে পারেননি জর্জিনিও। তবু ৫ সেপ্টেম্বর সুইজারল্যান্ডে ম্যাচে তাঁকেই দলকে এগিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ৫৩ মিনিটের সে পেনাল্টি থেকেও গোল করতে ব্যর্থ জর্জিনিও। সেদিন গোলকিপারের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন।
সুইজারল্যান্ড-ইতালির মধ্যকার দুটি ম্যাচই সমতায় শেষ হয়েছিল। এর একটি ম্যাচও যদি ইতালি জিতত, অর্থাৎ জর্জিনিও যদি পেনাল্টি থেকে গোল করতেন, তাহলেই আর বিশ্বকাপে না খেলার দুঃখ পেতে হতো না ইতালিকে।
গতকাল প্লে–অফের সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে পড়ার পর জর্জিনিওকে তাই এ নিয়েই কথা বলতে হলো। আরএআই স্পোর্টকে বলেছে, ‘এ নিয়ে চিন্তা করলেও কষ্ট লাগে, কারণ আমি এখনো এ নিয়ে চিন্তা করি এবং এটা আজীবন আমাকে তাড়া করে বেড়াবে। দুবার পেনাল্টি নিতে গিয়েও দল ও দেশকে সাহায্য করতে না পারার এই কষ্ট আমার সঙ্গে আজীবন থাকবে। এটা আমার ঘাড়ে চেপে বসবে। মানুষ বলে আমাদের মাথা উঁচু করে সামনে এগোনো উচিত, কিন্তু এটা কঠিন।’
চতুর্থ দল হিসেবে বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়েও পরের বিশ্বকাপ খেলবে না ইতালি। ২০০৬ সালে সর্বশেষ গ্রিস এমন কিছু দেখিয়েছিল। জর্জিনিও মানছেন, কদিন আগেও দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এক দলের এভাবে বাদ পড়ে যাওয়ার ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন। এ ধাক্কা সামলাতে সময় লাগবে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন চেলসির মিডফিল্ডার, ‘কী ঘটল এর ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন। কী যে কষ্ট হচ্ছে। সত্যি বলছি, আমি এখনো হতবুদ্ধ। আমার মনে হয় না আমাদের সৃষ্টিশীলতার অভাব ছিল। আমরা সব সময় ম্যাচে প্রভাব বিস্তার করেছি এবং অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেগুলো কাজে লাগাতে পারিনি।’
২০২১–এর জুনে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলটি ছোটখাটো ভুলের কারণেই বিশ্বকাপ খেলতে পারছে না, অন্তত জর্জিনিওর ভাষ্য তাই, ‘আমরা ভালো ফুটবল খেলেছি, গত গ্রীষ্মে ইউরো জিতেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত কয়েক ম্যাচে আমরা কিছু ছোট ভুল করেছি এবং তা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।’
একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দুটি পেনাল্টি হাতছাড়া করাকে সমর্থকেরা অবশ্য ‘ছোট’ ভুল হিসেবে না–ও মানতে পারেন!