ইউরোর ইতিহাসে সেরা ছয় সেমিফাইনাল
২৪ দল থেকে ইউরো এখন এসে ঠেকেছে ৪ দলে। এই ৪ দল থেকে ফাইনালে দুই প্রতিপক্ষ বেছে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে আজ থেকে। তার আগে ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা বেছে নিয়েছে ইউরোর ইতিহাসে সেরা ছয় সেমিফাইনাল। তালিকাটা উয়েফা অবশ্য প্রকাশ করেছিল সর্বশেষ ইউরোতেই। প্রথম আলোতেও তখনই প্রকাশিত হয়েছিল। এবারও সেই ছয়টি সেমিফাইনালকেই সেরা মনে করছে উয়েফা। প্রথম আলোর লেখাটিও তাই পুনঃপ্রকাশ করা হলো
ফ্রান্স ৪: ৫ যুগোস্লাভিয়া, ১৯৬০
১৭ দলের ‘বাছাইপর্ব’ পেরিয়ে ইউরোর ইতিহাসে মূল টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচটিই এখন পর্যন্ত ইউরোতে সবচেয়ে বেশি গোল দেখা ম্যাচ! প্যারিসের পার্ক দো প্রিন্সেসে প্রথমার্ধ শেষে সেদিন ১-১ সমতা, ফ্রাঁসোয়া উয়েতের জোড়া গোলে দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝিতে ফ্রান্স এগিয়ে যায় ৪-২ গোলে। যুগোস্লাভিয়ার হার যখন অনুমিত, পাঁচ মিনিটের মধ্যে ৩ গোল করে প্যারিসের হাজার পঁচিশেক দর্শককে হতবাক করে রাখে যুগোস্লাভরা।
যুগোস্লাভিয়া ২: ৪ পশ্চিম জার্মানি, ১৯৭৬
পশ্চিম জার্মানি কোচ হেলমুট শোনের এক বদল, আর ম্যাচের গল্প ১৮০ ডিগ্রি বদলে দেওয়া এক হ্যাটট্রিক ডিটার মুলারের। বেলগ্রেডে সেদিন ৭৯ মিনিটেও আগের বারের চ্যাম্পিয়ন পশ্চিম জার্মানি শেষ চারে বিদায়ের শঙ্কায়। বিরতিতে ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা পশ্চিম জার্মানি ৬৪ মিনিটে ব্যবধান কমায় হাইঞ্জ ফ্লোহের গোলে। এরপর? মুলার শো! তিন মিনিট আগে বদলি নামা মুলার ৮২ মিনিটে ম্যাচে নিজের প্রথম স্পর্শেই নিশ্চিত করলেন, ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত সময়ে আরও দুই গোলে নিশ্চিত করলেন নিজের হ্যাটট্রিক আর পশ্চিম জার্মানির ফাইনালে ওঠা।
ফ্রান্স ৩: ২ পর্তুগাল, ১৯৮৪
২৪ মিনিটে জঁ-ফ্রাঁসোয়া দোমেঘেঁর গোলে ফ্রান্সের এগিয়ে যাওয়া, গোলকিপারের সৌজন্যে বেশ কয়েকবার বেঁচে যাওয়া পর্তুগাল সমতায় ফেরে ৭৪ মিনিটে—রুই জর্দাওয়ের গোলে। অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচ, সেখানেও জর্দাও-দোমেঘেঁর গোলবিনিময়। এরপর? মিশেল প্লাতিনির জাদুতে ভাস্বর ইউরোর এমন ম্যাচে প্লাতিনি কিছু না বললে চলে! স্তাদ ভেলোদ্রোমে সেদিন আলো ছড়ানো প্লাতিনি দলের দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন, ১১৯ মিনিটে ফ্রান্সের জয় এনে দেওয়া গোলটিও তিনি ছাড়া আর কার পায়ে মানাত!
পশ্চিম জার্মানি ১: ২ নেদারল্যান্ডস, ১৯৮৮
১৯৮৮ ইউরোর স্মৃতিচারণে ফাইনালে ফন বাস্তেনের গোলটিই যে কারও মনে সবার আগে আসবে, কিন্তু সেমিফাইনালে ফন বাস্তেনের গোলটিই–বা কম কী ছিল! ১৯৭৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির কাছে অঘটনের শিকার নেদারল্যান্ডস ১৪ বছর পরও আরেক দীর্ঘশ্বাসের সাক্ষী হওয়ার শঙ্কায় ছিল, যখন ৫৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে জার্মানদের এগিয়ে দেন লোথার ম্যাথাউস। কিন্তু হামবুর্গে সেদিন গল্পটা ডাচদের বেদনার হয়নি। ৭৪ মিনিটে পেনাল্টি রোনাল্ড কোমানের গোলে সমতা। ম্যাচ যখন অতিরিক্ত সময়ে গড়ানোর অপেক্ষায়, ৮৮ মিনিটে ফন বাস্তেন বল জড়িয়ে দিলেন জার্মান জালে।
জার্মানি ৩: ২ তুরস্ক, ২০০৮
২২ মিনিটে উগুর বোরালের গোলে এগিয়ে যায় তুরস্ক, দুই মিনিট পর জার্মানিকে সমতায় ফেরান বাস্তিয়ান শোয়াইনস্টাইগার। ৭৯ মিনিটে মিরোস্লাভ ক্লোসার গোলে যখন জার্মানির এগিয়ে যাওয়া, ৮৮ মিনিটে সেমিহ সেন্তুর্কের গোলে আরেকবার তুর্কি-রূপকথা দেখার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার হলো উল্টো! ৯০ মিনিটে দারুণ ফিনিশার বনে গেলেন জার্মান রাইটব্যাক ফিলিপ লাম।
জার্মানি ১: ২ ইতালি, ২০১২
মারিও বালোতেল্লির উত্থানের চেয়ে পতনে ভারী ক্যারিয়ারের সম্ভবত সবচেয়ে আলো ছড়ানো ম্যাচ সেটি। ২০ মিনিটে আন্তোনিও কাসানোর ক্রসে হেড করে ইতালির ইতিহাসে ইউরোর সেমিফাইনালে প্রথম গোলটি এনে দিলেন বালোতেল্লি, ১৬ মিনিট পর তাঁর বক্সের বাইরে থেকে ছোড়া গোলা ঠেকানোর সাধ্য ছিল না মানুয়েল নয়্যারের মতো গোলকিপারেরও। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে টানা ১৫ জয়ের রেকর্ড নিয়ে নামা জার্মানদের আর ফেরা হলো না। যোগ করা সময়ে পেনাল্টি থেকে মেসুত ওজিলের গোলও এবার আর কোনো জার্মান-রূপকথার আশা জাগায়নি।