ইউনাইটেডে টেন হাগের প্রথম সাত দিন যেমন কেটেছে...
নতুন কোচ এরিক টেন হাগের আগমনের সাত দিন হয়ে গেছে। এখনো কোনো নতুন খেলোয়াড় দলে টানেনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। বার্সেলোনার মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং ও আয়াক্সের মিডফিল্ডার লিসান্দ্রো মার্তিনেজের প্রতি ইউনাইটেডের আগ্রহ নিয়মিত খবরের শিরোনামে, ফেইনুর্ডের লেফটব্যাক টাইরেল মালাসিয়ার ক্লাবে যোগ দেওয়াও সময়ের ব্যাপার বলেই গুঞ্জন।
৭ আগস্ট ওল্ড ট্রাফোর্ডে ব্রাইটনের বিপক্ষে ম্যাচের আগে সেদিকে অনেক কাজ করার সময়ও পাচ্ছে ম্যান ইউনাইটেড। কিন্তু এর বাইরে দলবদলে কোনো হাঁকডাক না তোলা ম্যান ইউনাইটেড টেন হাগের অধীন প্রথম সাত দিনে কী করেছে?
স্কাই স্পোর্টসের সাংবাদিক মেলিসা রেড্ডির বিশদ বিশ্লেষণে সেই চিত্র কিছুটা উঠে এসেছে। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য সেটি তুলে ধরা হলো...
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে এরিক টেন হাগের প্রথম সপ্তাহ খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর বেশ ইতিবাচক ছাপ ফেলেছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সিনিয়র খেলোয়াড়দের একজন যে বর্ণনা দিয়েছেন, সেটি হলো, ‘সবকিছু উজাড় করে দেওয়া অনুশীলন—শুধু শারীরিক দিক থেকে নয়, মানসিক দিক থেকেও। তিনি চান, আপনি বুদ্ধি-বিবেচনাকে আরও বেশি কাজে লাগান, আরও ভাবুন, আরও ভাবুন।’
অনুশীলন মাঠে এরিক টেন হাগের প্রথম সপ্তাহ স্কোয়াড ও স্টাফদের ওপর বেশ ভালোই ছাপ রেখেছে, পাশাপাশি বিশদভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে আগামী দিনগুলোতে তিনি কী চান। ইউনাইটেডের অনেকগুলো সূত্র সবচেয়ে বেশি করে যে দিকের কথা বলছে, সেটি হচ্ছে, তাদের কোচ অনুশীলন সেশনগুলোর সময়ে কতটা ডুবে থাকেন ফুটবল নিয়ে, বল পায়ে অনুশীলনে তিনি কত বেশি সময় কাটান।
অনুশীলনের প্রতিটি ড্রিলেই টেন হাগ নিজেই সবকিছু ঠিক করে দেন, যেটি কিনা ক্যারিংটনের (ইউনাইটেডের অনুশীলন মাঠ) স্বাভাবিক রীতির ব্যতিক্রম। এর আগে উলে গুনার সুলশারের সময়ে তিনি বসে বসে দেখতেন কিয়েরান ম্যাককেনা, মাইকেল ক্যারিক ও মাইক ফেলানের ড্রিল পরিচালনা। সেই ড্রিলগুলোকে বলা হতো ‘বেসিক’, যেখানে ‘খুব বেশি সংশোধন না করে সবাইকে নিজের মতো কিছু করে দেখানোর স্বাধীনতা দেওয়া হতো।’
রালফ রাংনিকের সময়ে সেশনগুলো চালিয়ে নিতেন ক্রিস আরমাস, যেগুলোতে ‘ফুটবলের পরিভাষার বাড়াবাড়ি থাকত, বল পায়ে না থাকলে কী করতে হবে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা বেশি হতো।’
দুই কোচের কেউই ড্রিলের মধ্যে সেটিকে থামিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করতেন না। আর যেকোনো কারণেই হোক, অনুশীলন সেশনগুলোতে দুজনের কারোরই খেলোয়াড়দের ওপর নিয়ন্ত্রণ একেবারে প্রশ্নাতীত ছিল না।
ক্লাবের ভেতরের সূত্র অনুযায়ী, টেন হাগের প্রথম সপ্তাহে এই দুটি জায়গায় আগের দুই কোচের চেয়ে ভিন্নতা দেখা গেছে।
দুই সহকারী মিচেল ফন ডার গার্গ ও স্টিভ ম্যাকক্লারেনকে সঙ্গে নিয়ে সবার আগে বল দখলে রাখার সময়গুলোতে কী করতে হবে, সেটি নিয়েই বেশি কাজ হয়েছে। ইউনাইটেডকে নিয়ে টেন হাগের বিশদ বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বল পায়ে থাকার সময়ে ইউনাইটেড কতটা ভয়ে ভয়ে থাকে, কী করবে সেটি নিয়ে কতটা অনিশ্চয়তায় ভোগে, সেসব।
সুলশারের অধীন ইউনাইটেড পাল্টা আক্রমণে ভয়ংকর ছিল, তবে বল পায়ে আক্রমণ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না। রাংনিকের ভাবনাজুড়ে ছিল রক্ষণকাজ আর প্রতিপক্ষের পায়ে বল থাকলে কীভাবে ম্যাচ বের করে নিতে হবে, সেই পরিকল্পনা। সেখানেও আক্রমণ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব কমই ছিল।
টেন হাগ খেলোয়াড়দের বল পায়ে রাখার সময়গুলোতে স্বচ্ছন্দ করে তুলতে এবং বল নিয়ে কী করতে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অনুশীলন সেশনের যে মুহূর্তেই তাঁর নির্দেশনা পালনের ক্ষেত্রে কোনো ভুল হয়, ডাচ এই কোচ সেখানেই খেলা থামিয়ে নির্দেশনা দেন, তিনি কীভাবে কী চান খেলোয়াড়দের সেটি বুঝিয়ে বলেন। ‘খুব একটা ভালো হলো না’ ‘আমি তোমাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চটা চাই’—কথাগুলো টেন হাগের অনুশীলন সেশনে পরিচিত বাক্যই। অবশ্য ‘সবোচ্চটুকু দেওয়া হলে’ প্রশংসা করতেও কার্পণ্য হয় না তাঁর।
টেন হাগের চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে পুরো দলের সবাই যেভাবে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে, তাঁর চাহিদাকে আপন করে নিচ্ছে, সেটিতে ইউনাইটেড কোচকে সন্তুষ্টই মনে হয়। পাশাপাশি সকাল নয়টায় অনুশীলন মাঠে আসার সময়ও মেনে চলছেন সবাই, যে নিয়মটা কিনা আগে শুধু তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য প্রযোজ্য ছিল।
অনুশীলনে শৃঙ্খলা আর মানের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে যে উন্নতি এসেছে, কী করতে চান, তা নিয়ে টেন হাগের যে ‘পরিষ্কার ধারণা’ আছে, তা নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করা খেলোয়াড়দের একজন গোলকিপার দাভিদ দে হেয়া। আয়াক্সের সাবেক কোচ (টেন হাগ) কথা বলার ক্ষেত্রে যা বলতে চান, সেটা নির্দিষ্ট করেই বলেন। সে কারণে তাঁর অনুশীলন সেশনগুলোতে কঠোর পরিশ্রম করতে হলেও তাঁর কথাগুলো সহজেই অনুধাবন করতে পারেন সবাই।
অনুশীলনসংশ্লিষ্ট নির্দেশনার বাইরে খেলোয়াড়দের সঙ্গে বৈঠক ও সাধারণ আলোচনাগুলো এখন পর্যন্ত হালকাচালেই করেছেন টেন হাগ। মূলত একে অন্যকে সাধারণভাবে চেনাজানার জন্যই ছিল সেগুলো। তাতে পুরো ক্লাবটার একটা সাধারণ ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
অনুশীলন মাঠে, ক্যারিংটনের অন্য সব জায়গায়ও অনেক প্রাণচঞ্চল থাকেন টেন হাগ, যে কারণে সব মিলিয়ে খেলোয়াড়দের মনোভাবও আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। রাংনিকের সময়ে পুরো ক্লাবে যে দুর্দশাগ্রস্ত একটা ভাব ছিল, সেটি কাটিয়ে দিয়েছেন টেন হাগ। পাশাপাশি নিয়মকানুনও ফিরিয়ে এনেছেন, সুলশারের সময়ে যা অনেকটা হারিয়ে গিয়েছিল।
ক্লাবের কর্মীরা টেন হাগ-যুগের শুরুর এ সময় দেখে উচ্ছ্বসিত। তাঁদেরও মনে হচ্ছে, যে কারণে টেন হাগকে আনা হয়েছে, নিজের সেই কোচিং–দক্ষতা আর ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতার ছাপ এরই মধ্যে দেখিয়েছেন টেন হাগ।
আসল পরীক্ষা তো হবে মৌসুম শুরু হওয়ার পর, তবে ক্লাবে সবার বিশ্বাস, গত কয়েক মৌসুমের তুলনায় এবার প্রাক্-মৌসুমে খেলোয়াড়দের প্রস্তুত করে নেওয়ার প্রক্রিয়াটা অনেক ভালোভাবে হবে এবং কারিগরি ও কৌশলগত দিক থেকে এবার ইউনাইটেডের উন্নতিটা চোখে পড়ার মতোই হবে।
৮ জুলাইয়ের আগেই খেলোয়াড়দের দলে টানতে চান টেন হাগ।
প্রাক্-মৌসুম সফরে ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগেই ইউনাইটেডের খেলোয়াড় বেচাকেনার সিংহভাগ শেষ করতে চান টেন হাগ। বার্সেলোনার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক কথাবার্তা এরই মধ্যে হয়ে গেছে, ফেইনুর্ডের লেফটব্যাক টাইরেল মালাসিয়াকে নেওয়ার চুক্তিও শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে বলে ধারণা। আর্সেনালের চোখ যাঁর দিকে, সেই লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে পেতেও খুব আগ্রহী ইউনাইটেড, সেদিক নিয়েও কাজ করছে। ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন এখনো ইউনাইটেডে যাওয়া আর ব্রেন্টফোর্ডে থাকার মধ্যে কোনটি বেছে নেবেন, সেটি নিয়ে ভাবছেন, যদিও তাঁর হাতে আরও কিছু প্রস্তাব আছে।
আয়াক্সের ফরোয়ার্ড আন্তনিকে পেতে আগ্রহী ইউনাইটেড। আয়াক্সেরই রাইটব্যাকেও খেলতে সক্ষম সেন্টারব্যাক টিম্বারকে পেতে ইউনাইটেড আগ্রহী। তবে তাঁর ব্যাপারে আয়াক্স জানিয়ে দিয়েছে, তারা টিম্বারকে আমস্টারডামেই দেখতে চায়।