প্রশ্নটা অনেক আগের—আর্জেন্টিনা কি লিওনেল মেসির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল? সমর্থকেরা এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলে লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে ফেলেন। এত দিন পর মেসির কথায় তা একটু হলেও থামতে পারে।
আর্জেন্টাইন তারকা জানিয়েছেন, আর্জেন্টিনা তাঁর ওপর কখনোই খুব বেশি নির্ভরশীল ছিল না। অর্থাৎ নির্ভরশীল থাকাটা অস্বাভাবিক নয়, তবে সেটি কখনোই খুব বেশি ছিল না।
আন্তর্জাতিক ময়দানে আর্জেন্টিনার শিরোপাখরা ২৮ বছরের। এদিকে দেশের জার্সিতে মেসির ক্যারিয়ারের বয়স ১৬ বছর চলছে। এ সময়ে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকার ফাইনালে নিয়ে গেছেন মেসি।
তাঁকে নিয়ে একবার নয়, তিন-তিনবার কোপার ফাইনাল খেলেও শিরোপা জিততে পারেনি আর্জেন্টিনা। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল তো হয়ে আছে তাদের হৃদয়ভঙ্গের বড় অধ্যায়।
বড় টুর্নামেন্টে এই যে এতবার ফাইনালে খেলল আর্জেন্টিনা, প্রতিবারই মেসির নামটা আগে এসেছে তারকা হিসেবে। মাঠের পারফরম্যান্সেও তা অনূদিত করেছেন বার্সেলোনা তারকা।
কিন্তু মেসির বিশ্বাস, দল তাঁর অবদানের ওপর কখনোই পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিল না। এবার কোপা আমেরিকা জয়ে আর্জেন্টিনা ‘সঠিক পথেই আছে’ বলে মনে করেন ৩৩ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ড। এই কোপা আমেরিকা তাঁর শেষ মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্টও হতে পারে, কে জানে!
স্বাভাবিকভাবেই দেশের হয়ে শিরোপাখরা ঘোচাতে মরিয়া চেষ্টাই করবেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এ ফুটবলার। এদিকে সব সময় সমালোচকেরা বলে আসছেন, আর্জেন্টিনা বরাবরই মেসির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা কথা ভেসে বেড়ায়, মেসি একা কী করবেন!
যদিও আর্জেন্টিনা দল শুধু মেসিকে নিয়ে নয়; হুয়ান রোমান রিকেলমে, কার্লোস তেভেজ, হারনান ক্রেসপো, হুয়ান সেবাস্তিয়ান ভেরন, পাবলো আইমার থেকে গঞ্জালো হিগুয়েন, সের্হিও আগুয়েরো, আনহেল ডি মারিয়াদের মতো তারকা খেলে গেছেন কিংবা খেলছেন মেসির সঙ্গে।
আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ওলেকে মেসি তাই বললেন, ‘কোনো সময়ই জাতীয় দল আমার ওপর নির্ভরশীল ছিল না। আমরা সব সময় শক্তিশালী দল হওয়ার চেষ্টা করেছি। সব সময় বলেছি, শক্তিশালী দল হয়ে উঠতে না পারলে নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছানো খুব কঠিন হবে।’
কোপা আমেরিকায় আজ চিলির মুখোমুখি হয়ে শিরোপা অভিযান শুরু করবে আর্জেন্টিনা। এবারের দল নিয়ে মেসি নিজের প্রত্যাশাও জানালেন, ‘আমরা শক্তিশালী দল হয়ে উঠতে পেরেছি বলে মনে করি। বেশির ভাগ খেলোয়াড় একসঙ্গে অনেক দিন খেলছে। আমরা আগেও কোপা আমেরিকায় খেলেছি। সঠিক পথেই আছি বলে মনে করি।’
ক্লাব ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রায় সবকিছু জেতা এ ফুটবলার জাতীয় দলের হয়ে খেলাকে বিশেষ কিছু বলেই মনে করেন, ‘জাতীয় দলের সঙ্গে যা কিছুই খেলি না কেন, সবই আমার কাছে বিশেষ কিছু। প্রীতি ম্যাচ, বাছাইপর্ব, কোপা আমেরিকা, বিশ্বকাপ...কখনো ভাবিনি এত ম্যাচ খেলতে পারব। শুধু প্রতিদিনের কথা ভাবি এবং নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি।’
২০১৫ ও ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। ১০ দলের এ টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়বে মাত্র দুটি দল। ‘এ’ গ্রুপে আর্জেন্টিনার সঙ্গে রয়েছে বলিভিয়া, চিলি, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ে। অর্থাৎ অলৌকিক কিছু না ঘটলে কোয়ার্টার ফাইনালে ৮ দলের মধ্যে জায়গা করে নেওয়া কঠিন হবে না আর্জেন্টিনার জন্য।
কিন্তু মেসি আর্জেন্টিনার শুরুটা করতে চান জয় দিয়ে, ‘আমাদের প্রথম ম্যাচটা জেতা দরকার। ৩ পয়েন্ট নিয়ে শুরু করাটা গুরুত্বপূর্ণ। এতে সামনের পরিস্থিতি নিয়ে শান্তিতে থাকা যায়। তবে কাজটা যে কঠিন হবে, তা জানি। চিলির বিপক্ষে খেলব, আমরা একে অপরকে ভালো করেই জানি। তারা শক্ত দল।’