আর্জেন্টিনা বাজে আচরণ করেছে হিগুয়েইনের সঙ্গে
বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বশেষ হ্যাটট্রিক করেছেন একজন। অন্যজন তাঁর আগে টানা দুই বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করার অনন্য অর্জন করে দেখিয়েছেন। একজনের প্রসঙ্গে এখনো ভালোবাসামাখা স্তুতি শোনা যায়, অন্যজনের অবসরের ঘোষণাতে শোনা গেছে স্বস্তি! গঞ্জালো হিগুয়েইন আর গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার গল্প দুটি পুরোপুরি বিপরীতমুখী। আর্জেন্টাইনদের কাছ থেকে সব সময় ভালোবাসা পেয়েছেন বাতিগোল। এ কারণেই হয়তো আর্জেন্টিনার মানুষের চোখের বালি হিগুয়েইনের জন্য এত মমতা তাঁর। হিগুয়েইনের এমন বিদায় যে প্রাপ্য ছিল না, সেটি সোচ্চার কণ্ঠেই বলছেন বাতিস্তুতা।
পরশু আর্জেন্টিনাকে বিদায় বলে দিয়েছেন হিগুয়েইন। ত্রিশের কোঠায় এসেই এমন বিদায়ের কারণটা অভিমানী কণ্ঠে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন হিগুয়েইন, ‘আর্জেন্টিনার জার্সিতে আমার সময় শেষ। গভীরভাবে ভেবে দেখলাম সময় শেষ হয়েছে। এখন (জাতীয় দলের) বাইরে থেকে সব দেখব, অনেকেই খুশি হবেন। লিওনেল স্কালোনির (আর্জেন্টিনা কোচ) সঙ্গে কথা বলে তাঁকে আমার অবস্থান বুঝিয়ে বলেছি। এখন জাতীয় দলে আমার থাকা না–থাকা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাদ দিতে পারেন।’
শেষের খোঁচাটা বুঝে নিতে কষ্ট হয় না। আর্জেন্টিনার জার্সিতে হিগুয়েইনের সুখস্মৃতি কম নয়। এক দশকের ক্যারিয়ারে দেশের জার্সিতে খেলেছেন ৭৫ ম্যাচ, করেছেন ৩১ গোল। গোলসংখ্যায় ম্যারাডোনার (৩৪) মতো কিংবদন্তির ঠিক পেছনে। খেলেছেন তিন-তিনটি বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে ৫ গোল করেছেন। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সবশেষ হ্যাটট্রিকও তাঁর, বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করা আর্জেন্টিনার তিন খেলোয়াড়ের একজন।
কিন্তু লোকে ব্যর্থতার জন্যই তাঁকে বেশি মনে রেখেছে। টানা তিন বছরে তিনটি ফাইনালে তাঁর গোল হাতছাড়া করার দৃশ্যই মনে রেখেছে, বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করা নয়। তাঁকে দলে নেওয়া নিয়ে বারবার কথা উঠেছে। সে কথা যে আর উঠবে না, সেদিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন হিগুয়েইন।
এমন বিদায় কারও কাছেই প্রত্যাশিত নয়। নিজের উত্তরসূরিকে তাই আগলে রাখছেন বাতিস্তুতা, ‘আমার কাছে মনে হয় সে দারুণ এক স্ট্রাইকার ছিল। বিশ্বের সব প্রান্তে ওকে সবাই শ্রদ্ধা করে। কেবল আর্জেন্টিনাতেই ওর সঙ্গে বাজে আচরণ করা হয়েছে। আমি যা বলতে চাচ্ছি, একজন স্ট্রাইকার হয়তো ২০০ গোল মিস করবে, কিন্তু আসল মুহূর্তে এক, দুই বা তিন গোল করবে। কয়েকটি গোলের জন্যই আজীবন তাদের সবাই মনে রাখবে। যে অসংখ্য গোল করেনি সেগুলো নয় বরং যে কয়েকটি গোল করেছে তার জন্যই তাকে মনে রাখা উচিত।’
হিগুয়েইনের ক্ষেত্রে অবশ্য উল্টোই হয়েছে। আর্জেন্টিনাকে যে ৩১টি গোল করেছেন সেগুলোর সবই গুরুত্ব হারিয়েছে ওই ফাইনালের মিসগুলোর কারণে। বাতিস্তুতা এ দুঃখটা বোঝেন, ‘এর উল্টোও হয়। হিগুয়েইন ২০০ গোল করেছে এবং ভুল সময়ে তিনটি মিস করেছে। আর্জেন্টিনাতে তাকে ওভাবেই মনে রাখবে। অথচ গত কয়েক বছরে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার সে।’