আমার ছেলে বার্সেলোনায় থাকবে না—বার্তোমেউকে মেসির বাবা
বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচ্যগ্র মেদিনী।
প্রথম দফা বৈঠকের পর এটাই আপাত পরিস্থিতি। দুই পক্ষই নিজেদের দাবিতে অনড়। লিওনেল মেসি-বার্সেলোনা পরিস্থিতির কোনো সুরাহা হয়নি। মেসির বাবা ও এজেন্ট হোর্হে মেসির সঙ্গে কাল বহুল প্রত্যাশিত বৈঠকটি হয়েছে বার্সেলোনা সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউয়ের। ক্যাম্প ন্যু তে দেড় ঘণ্টার বেশি সময়ব্যাপী এ বৈঠকে কোনো সমঝোতা কিংবা সিদ্ধান্ত হয়নি। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দুই পক্ষের কথা চালাচালি চলবে।
মেসিদের পক্ষের দাবি, বার্সার চুক্তির শর্ত মেনেই খেলোয়াড় এখন ফ্রি-এজেন্ট। দুই পক্ষের পরবর্তী কথা চালাচালি কবে কোথায় হবে তা এখনো নিশ্চিত হয়নি।
কাল বাংলাদেশ সময় রাতে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বার্তোমেউ মেসিকে বিক্রি না করার জায়গা থেকে সরেননি। আর্জেন্টাইন তারকা এখনো চুক্তির অধীনে আছেন বলে মনে করছে বার্সা। কোনো ক্লাব তাঁকে কিনতে চাইলে ৭০ কোটি ইউরো রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করতে হবে। অন্যদিকে মেসির বাবাও তাঁর ছেলের দাবিতে অনড় ছিলেন। মেসিদের পক্ষের দাবি, বার্সার চুক্তির শর্ত মেনেই খেলোয়াড় এখন ফ্রি-এজেন্ট। দুই পক্ষের পরবর্তী কথা চালাচালি কবে কোথায় হবে তা এখনো নিশ্চিত হয়নি।
হোর্হে মেসি-বার্সা বৈঠকে ঠিক কী কী কথা হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস মেসির বাবার একটি উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে। বিশেষভাবে বৈঠকের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে তারা। বার্সা সভাপতি বার্তোমেউকে মেসির বাবা নাকি চূড়ান্ত কথাটাই বলেছেন, ‘আমার ছেলে বার্সেলোনায় থাকবে না।’ স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যার কিছু আগে মেসির পক্ষে আলোচনায় বসেন তার বাবা হোর্হে মেসি। তার সঙ্গে ছিলেন মেসির ভাই ও পরামর্শক রদ্রিগো মেসি। মেসির বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে তাদের এক আইনজীবীও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ জানিয়েছে, এই অচলাবস্থা নিরসনে পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে মেসি বার্সা ছাড়ার সিদ্ধান্ত বুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে ক্লাবকে জানানোর পর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে কথা বলবেন। এদিকে অনুশীলন ও পিসিআর টেস্টে উপস্থিত না হওয়ায় তাঁকে জরিমানা করার হুমকি দিতে পারে বার্সা শিবির। এর চেয়েও চরম কিছু হতে পারে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায়। দুই পক্ষই যেতে পারে আদালতে। তবে মার্কার মতে, দুই পক্ষের আদালতে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
বুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে মেসি ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছা বার্সাকে জানানোর পর আট দিন পার হলো। এর মধ্যে জল গড়িয়েছে বহু দুর। শর্ত ছিল, নতুন চুক্তিতে প্রতি মৌসুম শেষে চাইলে ক্লাব ছাড়তে পারবেন মেসি। তবে এ ইচ্ছাটা জানাতে হবে মৌসুম শেষ হওয়ার ২০ দিন আগে। তা না করলে নতুন মৌসুমের জন্য কাতালান ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন মেসি। আর্জেন্টাইন তারকা নতুন মৌসুমের আগে ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে দাবি করেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে যেহেতু এই মৌসুমটা স্বাভাবিক সময়ে শেষ হয়নি, আরও পিছিয়েছে, আর এই পেছানো সময় ধরেই বার্সার শর্তের মধ্যে থেকে সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন তিনি। কিন্তু বার্সার কাছে মেসির এই দাবি ভিত্তিহীন।
বার্সেলোনার দাবি, মেসির ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছে কথা জানানোর শেষ সময় ছিল ১০ জুন, সেটা ১০ জুনই থাকবে। করোনার কারণে মৌসুম আগস্ট পর্যন্ত পেছালেও মেসির চুক্তির শর্তের সে মেয়াদ তো আর পেছানো হয়নি। ফলে মেসি এখনো বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ এবং তাঁকে নিতে চাইলে অন্য ক্লাবকে অর্থ খরচ করেই নিতে হবে। আর বার্সেলোনার অনিচ্ছায় নিতে চাইলে সে অঙ্কটা হতে হবে ৭০ কোটি ইউরো।
এরপর মেসির ক্লাব ছাড়ার পথ সুগম করতে বার্সার সঙ্গে কথা বলতে কাল স্পেনে পা রেখেছেন মেসির বাবা হোর্হে মেসি। বার্সেলোনার বিমানবন্দরে নামার পর সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, তাঁর ছেলের বার্সায় ভবিষ্যৎটা ‘কঠিন’। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম দেপোর্তেস কুয়াত্রো হোর্হে মেসিকে জিজ্ঞেস করেছিল, বার্সায় মেসিকে দেখেন? ‘কঠিন, কঠিন’—জবাব দেন হোর্হে মেসি। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখনো ঘোলাটে, অন্তত প্রথম দফা বৈঠক শেষে এটুকু বলা যায় দাবার বোর্ডে পরবর্তী চালের অঙ্ক কষছে দুই পক্ষ।