আবাহনীতে আনন্দময় এক দুপুর
স্বাধীনতা কাপের পর ফেডারেশন কাপ—এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে রোববার টানা দুটি শিরোপা জিতেছে আবাহনী লিমিটেড। আজ দুপুরে রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফ সদস্যদের সংবর্ধনা দিয়েছে ক্লাবটি।
তাঁদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ঘোষিত ৭৫ লাখ টাকা বোনাস। অনুষ্ঠানে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে দলের সাফল্যের পেছনের গল্পগুলো।
২০১৮ সালে আবির্ভাবেই আবাহনীর সাজানো বাগানটা দুমড়েমুচড়ে দিয়েছিল বসুন্ধরা কিংস। ঘরোয়া ফুটবলের সব কটি শিরোপাই নিজেদের করে নেয় তারা। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থা হয় ঐতিহ্যবাহী আবাহনীর।
ঘুরে দাঁড়াতে এবার দারুণ দল গড়েছে তারা। কিন্তু দল গড়লেই তো হয় না, সব খেলোয়াড়কে গাঁথতে হয় এক সূত্রে। আবাহনী সেটিই করেছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা আর কঠোর পরিশ্রমেই যে সাফল্য এসেছে, দলের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রূপু অনুষ্ঠানে বলেছেন সেটিই, ‘অনেক পরিশ্রমের পর এই সাফল্য এসেছে। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সবার চেষ্টা ছিল।’
অনুষ্ঠানটি পরিণত হয়েছিল আবাহনীর খেলোয়াড়দের মিলনমেলায়। বর্তমান খেলোয়াড়েরা তো ছিলেনই, ক্লাবের হয়ে খেলা অনেক সাবেক খেলোয়াড়েরাও ছিলেন। বিদেশি খেলোয়াড়েরা হাজির হয়েছিলেন পরিবার নিয়ে।
স্ত্রী ও বাচ্চাদের নিয়ে অনুষ্ঠানে এসেছিলেন কোচ মারিও লেমোসও। জানালেন এ দুটি শিরোপা পর্তুগিজ এই কোচের কাছে বিশেষই, ‘আমার কাছে বিশেষ মুহূর্ত। শুরুর দিকে সাফল্য আসেনি। তবে আশাহত হইনি। সবার সহযোগিতা নিয়ে সাফল্য এসেছে। আমি এখন খুশি। দুই ফাইনালে আবাহনী নিজেদের পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। এটাই আবাহনী।’
ফেডারেশন কাপে টুর্নামেন্ট সেরা ও ফাইনাল সেরা হয়েছেন দানিয়েল কলিনদ্রেস। কোস্টারিকান এই ফরোয়ার্ড আজ আবাহনীর এ আনন্দ অনুষ্ঠানে বাংলায় কথা বলে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন। মঞ্চে ডেকে নেওয়া হলে কলিনদ্রেস বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। শুভ রাত্রি! (অনুষ্ঠানটি দুপুরে হওয়ায় সবাই হেসে ফেলেন) আমি এখানে আসতে পেরে খুব খুশি। আবাহনীর সবাইকে ধন্যবাদ।’
লম্বা চোট কাটিয়ে এবার দলে ফিরেছেন অধিনায়ক ও স্ট্রাইকার নাবিব নেওয়াজ। এবার ত্রিমুকুট জয়ের স্বপ্ন দেখছেন নাবিব, ‘শুরুতে স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। ধারাবাহিকতায় ফেডারেশন কাপ জিতেছি। সামনে লিগ শুরু হচ্ছে। দোয়া করবেন যেন ট্রেবল জিততে পারি। সর্বোচ্চটা দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারি।’
এই মৌসুমেই বসুন্ধরা থেকে আবাহনীতে নাম লিখিয়েছেন মিডফিল্ডার ইমন মাহমুদ। তারকাবহুল বসুন্ধরায় তেমন খেলার সুযোগ মিলত না তাঁর। আবাহনীতে যোগ দিয়ে নিয়মিত খেলছেন এই মিডফিল্ডার।
দলের রসায়ন সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইমন বলছিলেন, ‘আজকে দু-চারজন যারা আমাকে চেনে, তা আবাহনী ক্লাবে খেলার কারণে। অন্য ক্লাবের সঙ্গে আবাহনী ক্লাবের পার্থক্য আছে। এখানে আমরা সবকিছু খুলে বলতে পারি। ব্যক্তিগতসহ পরিবারের কথা বলতে পারি। যে কারণে মাঠে আমাদের পারফরম্যান্স করতে সুবিধা হয়। সব সময় কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে খেলোয়াড় পরিবার হয়ে থাকতে পারি। সবকিছু সহজ হয়।’
ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল আগুস্তোর কাছেও আবাহনী একটি পরিবার। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে রাফায়েল, ‘আবাহনী ক্লাব একটি পরিবারের মতো। শুরু থেকে তা দেখে আসছি। একজন খেলোয়াড় হিসেবে দলের জন্য লড়াই করে যাব। আশা করছি, সামনের দিকে আরও ট্রফি জিততে পারব।’
সবার শেষে বক্তব্য দেন ক্লাবটির ডিরেক্টর ইনচার্জ কাজী নাবিল আহমেদ। এই মুহূর্তটাকে বিশেষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন কাজী নাবিল, ‘বর্তমান মুহূর্তটি আমাদের সবার কাছে ‘জাদুকরি মুহূর্ত’। ২০ (২৩) দিনের মধ্যে দুটি কাপ জয় করেছি। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমাদের এই চ্যাম্পিয়নশিপ এসেছে।’