‘আপনি ছাড়া কোনো রেফারির সঙ্গে আমার সমস্যা নেই’—রেফারিকে ক্ষুব্ধ ক্লপ
হয় কোভিড, নয় চোট—এই দুই কারণে লিভারপুলের মূল একাদশের একাধিক খেলোয়াড় ছিলেন মাঠের বাইরে। টটেনহামের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসন থেকে শুরু করে ডিফেন্ডার ভার্জিল ফন ডাইক, রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার ফাবিনিও, সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার থিয়াগো আলকানতারাকে ছাড়াই মাঠে নেমেছিল লিভারপুল। এ অবস্থায় প্রতিপক্ষের মাঠ থেকে এক পয়েন্ট পাওয়াকে ইতিবাচক বলা যেতেই পারে।
লিভারপুলের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ অবশ্য সে দলে নন। যে ম্যাচ জিতলে শিরোপার লড়াইয়ে ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে টক্কর দেওয়া যেত, সে ম্যাচে ড্র করে মেজাজ হারিয়েছেন ক্লপ।
তবে ক্লপের তোপের মুখে প্রতিপক্ষের কোচ বা কোনো খেলোয়াড় পড়েননি, পড়েছেন ইংলিশ রেফারি মার্ক টিয়ের্নি। দৃষ্টিনন্দন ম্যাচে একের পর এক বাজে সিদ্ধান্ত দিয়ে সব আলো কেড়ে নিয়েছেন যে এই টিয়ের্নিই!
২-২ গোলে ড্র করেছে দুই দল। হ্যারি কেইনের গোলে প্রথমে টটেনহাম এগিয়ে গেলেও লিভারপুলকে সমতায় ফেরান পর্তুগিজ উইঙ্গার দিয়োগো জোতা। দ্বিতীয়ার্ধে লেফটব্যাক অ্যান্ডি রবার্টসনের গোলে লিভারপুল এগিয়ে গেলেও কিছুক্ষণ পর টটেনহামকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন দক্ষিণ কোরিয়ান উইঙ্গার হিউং-মিন সন। পরে ব্রাজিলের রাইট উইংব্যাক এমারসন রয়ালকে ট্যাকল করে লাল কার্ড দেখেন রবার্টসন।
ঘটনাবহুল এ ম্যাচে আলোচনার জন্ম দিয়েছে আরও কিছু বিষয়। প্রথমার্ধে বলের দখল নিতে দিয়ে দুই পা দিয়ে রবার্টসনকে ভয়ংকর ট্যাকল করে বসেন কেইন। বলের নাগাল পাওয়া হয়নি তাঁর, উল্টো রবার্টসনের পায়ে সরাসরি ফাউল করে বসেন। সে ঘটনায় কেইনকে হলুদ কার্ড দেওয়া হলেও লিভারপুলের দাবি, অমন ফাউলে লাল কার্ডই প্রাপ্য।
দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুল লেফটব্যাক রবার্টসন যে ট্যাকলে লাল কার্ড দেখেছেন, সেটি লাল কার্ড দেখানোর মতোই, কিন্তু কেইনের ট্যাকল ছিল রবার্টসনের লাল কার্ড দেখা ট্যাকলের চেয়েও ভয়ংকর। দ্য অ্যাথলেটিকের সাংবাদিক জেমস পিয়ার্স এ নিয়ে ম্যাচ শেষে টুইট করেছিলেন, ‘ইংল্যান্ডের অধিনায়কের জন্য এক নিয়ম, স্কটল্যান্ডের অধিনায়কের জন্য অন্য।’ প্রসঙ্গত, কেইন ইংল্যান্ড জাতীয় দলের অধিনায়ক, রবার্টসন স্কটল্যান্ড জাতীয় দলের।
শুধু তা-ই নয়, প্রথমার্ধে লিভারপুলের পেনাল্টির জোরালো দাবিও নাকচ করে দেন টিয়ের্নি। ডি-বক্সে জোতাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন টটেনহাম রাইটব্যাক রয়াল, তাতে লিভারপুলের গোল করার একটা বড় সুযোগ নষ্ট হয়। লিভারপুলের খেলোয়াড়েরা পেনাল্টির আবেদন করলেও সাড়া দেননি টিয়ের্নি। উল্টো টাচলাইনে ক্লপের মেজাজ হারানো দেখে ক্লপকেই কার্ড দেখিয়ে বসেন! পরে দুজন দীর্ঘ সময় তর্কবিতর্ক করেছেন সাইডলাইনে। কেইনের লাল কার্ড আর প্রথমার্ধের পেনাল্টির দাবি—ওই দুই সিদ্ধান্ত লিভারপুলের পক্ষে গেলে হয়তো পুরো তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়ত লিভারপুল।
ম্যাচের শেষে রেফারির সঙ্গে হাত মেলাতে গিয়ে তাই টিয়ের্নিকে আরও এক হাত নিয়েছেন ক্লপ। জানিয়েছেন, টিয়ের্নিকে বিশেষ পছন্দ করেন না তিনি, ‘আমার কোনো রেফারির সঙ্গে সমস্যা নেই, শুধু আপনি ছাড়া!’
স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও টিয়ের্নির প্রতি রাগ ভোলেননি ক্লপ, ‘অবশ্যই আরও অনেক ঘটনা ছিল যা ম্যাচের ফলাফলে প্রভাব রেখেছে। কিন্তু আমার মনে হয়, এমন কিছু প্রশ্ন রেফারি পল টিয়ের্নিকেও করা উচিত। হ্যাঁ, রবার্টসনকে লাল কার্ড দেওয়াই যায়। খুব ভালোভাবে ট্যাকল করেনি সে। কিন্তু কেইনের ট্যাকলে অবশ্যই লাল কার্ড দেখানো যেত। এ নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই। আমাদের ভিএআর আছে, যে কারণে তিনি চাইলেই রবার্টসনের ঘটনাটা আরেকবার দেখেছেন। খুবই ভালো। কিন্তু কেইনের ব্যাপারে কী বলবেন? আর জোতার পেনাল্টির ব্যাপারে টিয়ের্নি জানিয়েছেন, পেছন থেকে ধাক্কা খাওয়ার জন্য ইচ্ছা করে জোতা ডি-বক্সে থেমে গিয়েছিল। আপনি বলে শট মারতে চাইলে আপনাকে একটু থামতেই হবে। একই সঙ্গে দৌড়ানো আর শট মারা যায় না।’
যারা আগে একটু হলেও ফুটবল খেলেছেন, তাদেরই রেফারি হওয়া উচিত বলে মনে করেন ক্লপ, ‘এ জন্য (রেফারি হতে গেলে) অতীতে ফুটবল খেলা দরকার অনেক। আপনি জোতার ঘটনাটা দেখলে বুঝতে পারবেন, জোতা থামলই–বা কোথায়?’
লিগে ১৮ ম্যাচ শেষে ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে আছে ম্যানচেস্টার সিটি। সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে লিভারপুল। কাল উলভারহ্যাম্পটনের মাঠে গোলশূন্য ড্র করা চেলসি ১৮ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে আছে তালিকার তিন নম্বরে।