আজ রাতে আর্জেন্টিনা–কলম্বিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার নতুন ক্ল্যাসিক
কলম্বিয়ান শহর ব্যারানকিয়ার সূর্যটা ইদানীং একটু বেশিই তেতে আছে। অতিরিক্ত তাপে মানুষের সাধারণ কাজকর্ম করাও যেন দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূর্যের এমন রুদ্রমূর্তি দেখে মেঘ কিংবা ছায়াও হয়তো ধারেকাছে ঘেঁষার সাহস দেখাতে পারছে না। ফলে রোদের তেজ আরও লাগামছাড়া।
এই পরিস্থিতিতে রোদের তীব্রতা থেকে মুক্তি লাভে কলম্বিয়ানদের প্রয়োজন ছিল এমন এক দাওয়াই, যা তাপের আঁচকে ভুলিয়ে দেবে। বাংলাদেশ সময় আজ রাত ২টা ৩০ মিনিটে হতে যাওয়া আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়া ম্যাচটা তেমন কিছু হয়েই এসেছে কলম্বিয়ানদের কাছে।
দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলীয় দ্বৈরথে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাই ছিল শেষ কথা। উরুগুয়ে-চিলির মতো দলগুলো বিভিন্ন সময় আধিপত্য বিস্তার করলেও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার উন্মাদনাকে কখনোই ছাপিয়ে যেতে পারেনি। কিন্তু সেই সমীকরণ সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা হলেও বদলে দিতে পেরেছে কলম্বিয়া-আর্জেন্টিনা ম্যাচ।
২০২১ সালে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনাল দিয়ে শুরু হয় এই দ্বৈরথের। সেবার কলম্বিয়ার ইয়েরি মিনাকে টাইব্রেকারে শট নেওয়ার আাগে ‘আই উইল ইট ইউ ব্রো’ বলে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। মিনা সেই পেনাল্টি মিস করার পর টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হেরে যায় কলম্বিয়া। পরবর্তীকালে মার্তিনেজের এ মন্তব্য নিয়েও বেশ আলোচনাও হয়।
এরপর বিশ্বকাপের বাছাইয়ের ম্যাচে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়া। ম্যাচটি ১-০ গোলে জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। আর সর্বশেষ দুই দল মুখোমুখি হয় এ বছরের কোপা আমেরিকা ফাইনালে। উত্তেজনা ও রোমাঞ্চ ছড়ানো এই ম্যাচও আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের মাধ্যমে শেষ হয়। বারবার কাছাকাছি গিয়েও আর্জেন্টিনার কাছে হার এখন কলম্বিয়ার জন্য মনোবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে আজ রাতের ম্যাচ ঘিরে উত্তাপও ক্রমশ বাড়ছে।
আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ক্লারিনের সঙ্গে আলাপের সময় সে উত্তাপই যেন ঝরে পড়ল কলম্বিয়ান সমর্থক ডোমিঙ্গোর কণ্ঠে, ‘এই ম্যাচ বিশেষ কিছু। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়ার দ্বৈরথ দেখা গেছে। আমাদের দিকটায় এখনো কাঁটা বিঁধে আছে, মাঠে খেলেই সেটি আমাদের বের করতে হবে।’
ডোমিঙ্গো যে কাঁটার কথা বলছিলেন, সেটা মূলত আর্জেন্টিনার বিপক্ষে টানা তিন হার। এর শোধটা ঘরের মাঠে এবার নিতে চায় কলম্বিয়া। আর কলম্বিয়ানদের এই ‘প্রতিশোধ’ আকাঙ্ক্ষাই দুই দলের লড়াইকে ধ্রুপদি অবয়ব দিচ্ছে।
এর মধ্যে কেউ কেউ আবার ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে কলম্বিয়ার কাছে আর্জেন্টিনার ৫-০ গোলে হারের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন। পেদ্রো নামের এক কলম্বিয়ান সমর্থক যেমন বলছিলেন, ‘আর্জেন্টিনা সব সময় ৫-০ ব্যবধানে হারার কথা মনে রাখবে। সেটা মনে করে সমর্থকেরা বেশ রোমাঞ্চিত।’ প্যাট্রন বারমুদেজ নামের একজন অবশ্য কোনো রাখডাক রাখলেন না। সরাসরি বললেন, ‘ম্যাচটা যা, এটাকে সে নামে ডাকতে ভয় পাওয়া উচিত নয়। এটা কলম্বিয়ার জন্য প্রতিশোধের ম্যাচ।’
সমর্থকদের চাওয়া অনুযায়ী কলম্বিয়া দল জ্বলে উঠতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। কলম্বিয়ার আর্জেন্টাইন কোচ নেস্তর লরেনৎসো অবশ্য উত্তাপটা একটু যেন কমিয়েই দিতে চাইলেন, ‘প্রতিটি ম্যাচই আলাদা গল্প। পরিস্থিতি ও মুহূর্তগুলো বরাবরই আলাদা। আমরা এটাকে নতুন চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ হিসেবেই নিচ্ছি। প্রতিশোধ হিসেবে নয়।’