আজ থেকে শুরু ফারাজ গোল্ডকাপ
>২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের অন্যতম শিকার ফারাজ আইয়াজ হোসেন। জঙ্গিরা তাঁকে প্রথমে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু অসীম সাহসী ফারাজ সেই রাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন দুই বন্ধুর জন্য। মৃত্যুঞ্জয়ী ফারাজকে স্মরণ করেই আজ থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ থেকে শুরু হচ্ছে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট
সুস্থ সুন্দর সমাজ গঠনে তরুণদের মাঠে নিয়ে আসার বিকল্প নেই। অন্তরে এই স্লোগান ধারণ করে গত বছর ঢাকায় প্রথম আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করছিল সোনালী অতীত ক্লাব। সাবেক ফুটবলারদের এই সংগঠনটি যাঁর নামে ওই আয়োজন করেছিল, তিনিও তারুণ্যেরই প্রতীক। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের অন্যতম শিকার ফারাজ আইয়াজ হোসেন। জঙ্গিরা তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু অসীম সাহসী ফারাজ সেই রাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন দুই বন্ধুর জন্য।
সেই মৃত্যুঞ্জয়ী তরুণ ফারাজকে গত বছর উৎসর্গ করা হয়েছিল প্রথম আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট। ২০ দলের ওই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল গ্রিন ইউনিভার্সিটি। আজ থেকে শুরু দ্বিতীয় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলে তারা খেলছে না। আগামী ৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় ফাইনালে তাই নতুন চ্যাম্পিয়নই পাওয়া যাবে।
আজ বেলা সাড়ে তিনটায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গতবারের রানার্সআপ ফারইস্ট বনাম ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাচ দিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে ১২ দিনের এই আয়োজনের। গতবার টুর্নামেন্টটির নাম ছিল ‘ফারাজ চ্যালেঞ্জ কাপ’। এবার ‘শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ফারাজ গোল্ডকাপ’। এবার ট্রফিটাতে এক ভরি সোনা আছে। পরপর তিনবার জিতলে তবেই সেটি নিতে পারবে কোনো দল। এমনিতে দেওয়া হবে রেপ্লিকা।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে টুর্নামেন্টের লোগো উন্মোচন ও সংবাদ সম্মেলন হয়ে গেল কাল। ২০টি দল ৮ গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে। গ্রুপ থেকে একটি দল উঠবে কোয়ার্টার ফাইনালে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ছাড়াও খেলা হবে কমলাপুর স্টেডিয়ামে, প্রয়োজনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) টার্ফেও। আজ সকালেই কমলাপুরে দুটি ম্যাচ হয়ে যাবে।
টুর্নামেন্টটি প্রথমবারই সাড়া ফেলেছিল অনেক। এবার সেটিও ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা। অনুষ্ঠানে সাবেক ফুটবলার ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি বাদল রায় বলেন, ‘সবাই বেশ উৎসাহী এই টুর্নামেন্টটি নিয়ে। আশা করি, এবারও অন্তত পাঁচজন ফুটবলার উঠে আসবে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বিদেশি কোচরা এই টুর্নামেন্টটা দেখবেন।’ টুর্নামেন্ট কমিটির সদস্যসচিব শেখ মোহাম্মদ আসলামের কথায়, ‘এখান থেকে একজন ফুটবলারও জাতীয় দলের জন্য পেলে সেটি হবে আমাদের বিরাট সফলতা।’
বক্তাদের মুখে বারবারই উঠে আসে ফারাজের সাহসিকতার কথা। প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ যেমন বললেন, ‘ফারাজের আত্মত্যাগ শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বেই বড় উদাহরণ।’ সাবেক ফুটবলার ও কোচ গোলাম সারোয়ার টিপুও কণ্ঠ মেলান অন্যদের সঙ্গে, ‘ফারাজ তার জীবন দিয়েছে বন্ধুত্বের জন্য। এটা অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।’ ফারাজের ভাই যারেফ আয়াত হোসেন সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন, ‘ফুটবল ছিল ফারাজের প্রিয় খেলা। সে সাহস, বন্ধুত্ব ও মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছে। এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে সোনালী অতীত ক্লাব এবং সংশ্লিষ্টরা এখন ফারাজের পরিবারেরই অংশ হয়ে গিয়েছে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক ফুটবলার হাসানুজ্জামান বাবলু, বাফুফে সদস্য ফজলুর রহমান বাবুল, টুর্নামেন্টের পৃষ্ঠপোষক শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
২০টি বিশ্ববিদ্যালয় দল
ইস্ট ওয়েস্ট, আইইউবি, ব্র্যাক, স্টেট, প্রেসিডেন্সি, ড্যাফোডিল, বিইউবিটি, শান্ত-মারিয়াম, অতীশ দীপংকর, উত্তরা, সাউদার্ন, সিটি, নর্দার্ন, প্রাইম, আইইউবিএটি, ফারইস্ট, ইউল্যাব, সাউথ ইস্ট, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ও গণ বিশ্ববিদ্যালয়।