অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপে নেওয়ার পরিকল্পনা কাউকে জানাননি কোচ
চোট বা দুর্ঘটনাবশত কোনো লাল কার্ডের ঘটনা না ঘটলে দলের দ্বিতীয় গোলকিপারদের দেখাই মেলে না ফুটবলে। সেখানে তৃতীয় গোলকিপার হয়ে কাল নায়ক বনে গেছেন অ্যান্ড্রু রেডমাইন। গতকাল সোমবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্লে-অফে পেনাল্টি শুটআউটে পেরুকে ৫-৪ ব্যবধানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য ড্র ম্যাচে বদলি নেমে দলকে বিশ্বকাপে নিয়ে গেছেন রেডমাইন।
অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে (১২০) নিয়মিত গোলকিপার ম্যাট রায়ানকে তুলে নেন অস্ট্রেলিয়ার কোচ গ্রাহাম আরনল্ড। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এর আগে মাত্র একটি প্রতিযোগিতামূলক (নেপালের বিপক্ষে) ম্যাচ খেলা রেডমাইনকে নামতে দেখেই পেনাল্টি নিয়ে পেরুর করা পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আরনল্ডের এ সিদ্ধান্তই বিশ্বকাপে নিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়াকে। অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিকল্পনার কথা কাউকে বলেননি অস্ট্রেলিয়ার কোচ।
শেষ শটটি ঠেকিয়ে নায়ক হয়ে গেছেন ৩৩ বছর বয়সী রেডমাইন। ম্যাচ শেষে অবশ্য নিজেকে কোনো কৃতিত্ব দিতে চাননি। বলেছেন, পেনাল্টি নিয়ে আগে থেকে ভাবলেও শেষ পর্যন্ত এটা ভাগ্যের খেলা, ‘দল চূড়ান্ত করার আগে এমন পরিস্থিতির কথা ভাবা হয়েছে। গত দুই বা তিন সপ্তাহ এখানে আছি আমরা, এমন কিছু হতে পারে মাথায় ছিল। অনুশীলনে কিছু কাজও করেছি। কিন্তু দিন শেষে এটা তো ডানে বা বাঁয়ে লাফানোর সিদ্ধান্তই।’
ওদিকে কোচ আরনল্ড বলেছেন, পেরুকে মানসিকভাবে ধাক্কা দিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং যাঁকে তুলে রেডমাইনকে নামিয়েছেন তিনি, দলের অধিনায়ক ম্যাট রায়ানও জানতেন না এমন কিছু হতে যাচ্ছে, ‘ওর নম্বর ওঠার আগপর্যন্ত জানত না। এটা দারুণ। সে বুঝতে পেরেছে, কেন এটা করছি এবং এ কারণেই আমরা সকারুরা একটা পরিবার। আমরা একটা দল, সবার নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে হয়। অবশ্যই সে একটু অবাক হয়েছে, কিন্তু সে ভালোভাবেই নিয়েছে, একজন অধিনায়কের যেমন করা উচিত।’
ফুটবলে মানসিক দিকের গুরুত্বটা বোঝেন আরনল্ড। আর সে কারণেই কাল জুয়ো খেলেছেন। অস্ত্র মেনেছেন কখনো অস্ট্রেলিয়ার বাইরে ক্লাব ফুটবল না খেলা রেডমাইনকে, তিনি কয়েক সপ্তাহ আগেই এ পরিকল্পনা করে রেখেছেন, ‘এর পেছনে মানসিক দিকটাই বেশি প্রভাব রেখেছে। ওরা হয়তো ম্যাট রায়ানের দিকেই নজর রেখেছে এবং সে পেনাল্টিতে কী করে, সেটা দেখেছে। ওরা অ্যান্ড্রু রেডমাইনকে আগে কখনো দেখেনি। সে সঙ্গে যখন আমি অ্যান্ড্রু রেডমাইনকে বদলি নামালাম, তখন ওরা নিশ্চয় নিজেদের প্রশ্ন করেছে, কেন।’
প্রতিপক্ষকে মনস্তাত্ত্বিক খেলায় হারানোয় তৃপ্তি পাচ্ছেন আরনল্ড, ‘ওরা যেটা থেকে গোল করতে পারেনি, আর যেটা পোস্টে লাগিয়েছে, এর কারণ হয়তো পেনাল্টি মারতে এসে ওরা একটু বেশি জোরে মারতে চেয়েছিল কিংবা পোস্ট ঘেঁষে মারতে চেয়েছিল যেহেতু ও (রেডমাইন) ম্যাটির চেয়ে লম্বা। এ কারণেই করেছি।’
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দীর্ঘ একটা সময় বাদ পড়ার ঝুঁকিতে ছিল অস্ট্রেলিয়া। কোচের চাকরি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। গতকালও শুটআউটের প্রথম শট থেকে গোল করতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার মার্টিন বয়েল। কঠিন এই পথ পাড়ি দেওয়া কোচের তাই আনন্দের কমতি নেই আজ, ‘আমার খেলোয়াড়দের নিয়ে অনেক গর্বিত। এখানে পৌঁছাতে এই ছেলেরা কিসের মধ্য দিয়ে গেছে, কেউ জানে না। এত কঠিন ছিল পুরো যাত্রাটা। কিন্তু ওরা সবাই একে অপরকে সাহস জুগিয়েছে এবং হাল ছাড়েনি, দুর্দান্ত। অনেক কষ্ট করেছে, ২০টি বাছাইপর্বের ম্যাচ, এর ১৬টিই ছিল ঘরের বাইরে। কঠিন ছিল, কিন্তু আমরা করে দেখিয়েছি।’