অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার প্রয়োজন কি না—প্রশ্ন শুনেই খেপে গেলেন বাংলাদেশ কোচ
তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে আজ অন্তত ড্র পেতেই পারত বাংলাদেশ। অথচ বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ হারিয়ে বাংলাদেশ দলকে উল্টো হেরেই বুকিত জলিল স্টেডিয়াম ছাড়তে হয়েছে।
হোটেলে ফেরার সময় ফুটবলারদের মন ছিল বিষণ্ন। মন খারাপ ছিল বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরারও। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশ দলের কোচ বলেছেন, ‘আমরা জিততে পারতাম। কিন্তু গোল না পাওয়ায় জিততে পারিনি। এটা অবশ্যই হতাশার। এমন পরাজয় মানতে কষ্ট হচ্ছে।’ তবে গোল না পাওয়ার কারণ হিসেবে যখন অভিজ্ঞ স্ট্রাইকারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন হলো, তাতে খেপেই গেলেন কাবরেরা!
এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে বাহরাইনের কাছে প্রথম ম্যাচে ২–০ গোলে হারের পর আজ তুর্কমেনিস্তানের কাছে ২–১ গোলে হার। বাংলাদেশ আজ প্রথম গোল খেয়েছে শুরুতেই কর্নারে। আর এভাবে গোল খাওয়া মানতে পারছেন না কাবরেরা, ‘শুরুতেই কর্নারে আমরা গোল উপহার দিয়ে ফেলেছি ওদের। এটা ঠিক হয়নি।’ তারপর যোগ করেন, ‘আমরা জানতাম শারীরিকভাবে এগিয়ে থাকা তুর্কমেনিস্তানের ফুটবলাররা আক্রমণে আসবে। তবে এ–ও জানতাম প্রতি–আক্রমণে আমাদের সুযোগ আসবে। সুযোগ এসেছে এবং আমরা গোল পেয়েছি।’
নবাগত স্ট্রাইকার সাজ্জাদ হোসেন সুবিধাজনক জায়গায় কয়েকবার বল পেলেও গোল করতে পারেননি। তাঁর জায়গায় অভিজ্ঞ কোনো স্ট্রাইকার থাকলে বাংলাদেশ আজ দ্বিতীয় গোলটা পেতে পারত কি না—এই প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বাংলাদেশ কোচ। এটাকে ‘নেতিবাচক প্রশ্ন’ বলে পাশ কাটিয়ে যান। বলেন, ‘এই ম্যাচ থেকে অনেক ইতিবাচক দিক খুঁজে নেওয়ার আছে। সাজ্জাদ মাঠে লড়াই করেছে। কাজেই এমন নেতিবাচক প্রশ্নের কোনো উত্তর আমি দেব না।’
তবে ম্যাচ দেখা সবারই অভিন্ন মত, বাংলাদেশ দলে অভিজ্ঞ একজন স্ট্রাইকার থাকলে আজ জিততেও পারত বাংলাদেশ। কিন্তু সাজ্জাদ ছাড়া এই দলে অভিজ্ঞরা নেই। সুমন রেজা, মতিন মিয়া চোটের কারণে ছিটকে গেছেন। কয়েক ঘণ্টা দেরি করে ক্যাম্পে আসায় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণ দেখিয়ে কোচ দল থেকেই বাদ দিয়েছেন দেশের অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার নাবিব নেওয়াজকে। এমনকি এলিটা কিংসলিকেও নেননি। তাঁরা থাকলেই গোল হতোই, এমন নিশ্চয়তা হয়তো নেই। তবে এভাবে সুযোগ হারিয়ে হেরে যাওয়ার পর এখন সেদিকে চোখ ফিরছে অনেকেরই।
সাজ্জাদ তাঁর সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন, এখানে তাঁকে কেউ দোষারোপ করছে না। প্রশ্নটা হলো, কোনো অভিজ্ঞ স্ট্রাইকারের অভাব কোচ অনুভব করেন কি না। আর এটা নিয়ে প্রশ্ন শুনে কোচের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সংবাদ সম্মেলনে সবাইকে বিস্মিত করেছে।
সে যা-ই হোক, কোচের কাছে পরের প্রশ্ন ছিল তাঁর অধীনে এটিই বাংলাদেশের সেরা ম্যাচ কি না। উত্তরে বলেছেন, ‘মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে আমরা পুরো ম্যাচ প্রাধান্য বিস্তার করে খেলেছি। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গেও ভালো খেলেছি। আমরা উন্নতি করছি। আজ আমরা খুব ভালো খেলেছি।’
ম্যাচের ফলে হতাশ কি না—প্রশ্নে তাঁর কথা, ‘আমি জানি না, ড্র না হয় জয় পেতে পারতাম আজ। তবে আমি জানি আমরা আজ কিছু পেতে পারতাম। কিন্তু পাইনি, এটাই ফুটবল। তবে এই পারফরম্যান্স মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ছেলেদের উজ্জ্বীবিত করবে।’
বাংলাদেশের একমাত্র গোলদাতা মোহাম্মদ ইব্রাহিম মিক্সড জোনে মালয়েশিয়ার স্থানীয় এক সাংবাদিককে বলেন, ‘গোল করে আমি খুশি। তবে ম্যাচের ফলে আমরা হতাশ। কারণ, আমরা হেরে গেছি। তারপরও এই গোল আমি মালয়েশিয়া প্রবাসীদের উৎসর্গ করছি।’ ইব্রাহিম এরপর যোগ করেন, ‘সেট পিসে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে। দুই ম্যাচের ৪ গোলের ৩টিই আমরা সেট পিসে খেয়েছি। এই জায়গায় আমাদের উন্নতি করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে তুর্কমেনিস্তানের কোচ হোজাগেলদিয়েভ ইয়াজগুলি যা বলেছেন, তার সারকথা, ‘আমরা জানতাম বাংলাদেশ আমাদের ভুল কাজে লাগাবে। ফলে ম্যাচে তারা ফিরে এসেছে। আমরা কিছু ভুল করেছি বলে গোল খেয়েছি। তবে আমরা হাল ছাড়িনি। জানতাম নিজেদের লক্ষ্যে অবিচল থাকলে গোল আসবে। সেই গোল আমরা পেয়েছি।’
এই জয় ভাগ্যগুণে কি না—এমন প্রশ্ন উড়িয়ে তাঁর কথা, ‘ভাগ্যগুণে পাওয়া জয় নয় এটি। সব দলই পয়েন্ট চায়। আমরা তিন পয়েন্ট পেতেই মাঠে নেমেছিলাম এবং সেটা আমরা পেয়েছি এটাই বড় কথা।’