অথচ, জামাল–মতিনরাই কিনে নিতে পারেন নেপালের একটি ক্লাব
নেপাল ফুটবলে শিরোপা জিততে জানে। সেটি কেবল কাল বাংলাদেশকে হারিয়েই তারা প্রমাণ করেনি, প্রমাণ করে দিয়েছিল আজ থেকে ৫ বছর আগে—২০১৬ সালে ঢাকাতেই। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরেছিল নেপাল। জাতীয় দলের বাইরে দুটি এসএ গেমসেও ফুটবলে সোনা জিতেছে তারা। একটি ২০১৬ সালে গুয়াহাটি-শিলংয়ে অন্যটি ২০১৯ সালে কাঠমান্ডুতে।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের শেষ শিরোপা জয় সেই ২০০৩ সালে। অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবল বিবেচনায় নিলে ২০১০ সালে ঢাকায় এসেছিল সবশেষ সোনার পদক। তারও আগে ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু সাফ গেমস (এস এ গেমসকে তখন সাফ গেমস বলা হতো, অংশ নিত প্রতিটি দেশের জাতীয় দল)। আজ থেকে ২৬ বছর আগে, ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারের চার জাতি টুর্নামেন্টের শিরোপা—বাংলাদেশের ফুটবলে সাফল্য বলতে এগুলোই।
একসময় নেপাল বাংলাদেশের নাগালের মধ্যেরই এক প্রতিপক্ষ ছিল। কিন্তু এখন ব্যাপারটা পুরোপুরি অন্য রকম। নেপালের সঙ্গে জয় দূরের ব্যাপারই হয়ে গেছে এখন। খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত স্কিল, নতুন উন্নত মানের খেলোয়াড় উঠে আসা, ঘরোয়া লিগ আর ফিফা র্যাঙ্কিং—নেপাল বাংলাদেশকে পেছনে ফেলেছে সব জায়গাতেই। অথচ, এই খেলার মাঠে ‘পিছিয়ে থাকা’ বাংলাদেশের ফুটবলার নেপালকে বিপুল ব্যবধানে পেছনে ফেলেছেন পারিশ্রমিকের অঙ্কে। বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় দলের মাত্র দুই ফুটবলারই কিনে নিতে পারেন নেপালের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একটি ক্লাবের সব খেলোয়াড়।
করোনা যুগের আগে সর্বশেষ নেপাল ‘এ’ লিগ খ্যাত প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মহেন্দ্র ইউনাইটেড। এটিই নেপালের লিগের সর্বোচ্চ বাজেটের দল। তিনজন বিদেশি ফুটবলার মিলিয়ে দলটিতে খেলোয়াড় আছেন মোট ২০ জন। এদের মধ্যে ৫ তরুণ খেলোয়াড় খেলে থাকেন একদম ‘পেটে-ভাতে’, অর্থাৎ, নামমাত্র পারিশ্রমিক তাঁদের। মহেন্দ্র বিদেশি খেলোয়াড়সহ বাকি ১৫ ফুটবলারের পেছনে খরচ করেছে ১ কোটি ৩৬ লাখ নেপালি রুপি। বাংলাদেশি টাকায় যেটি ৯৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা। এই অঙ্ক তো বাংলাদেশের জামাল ভূঁইয়া আর মতিন মিয়ার সম্মিলিত পারিশ্রমিকের চেয়ে কম।
জামাল সাইফে খেলেন বছরে ৬৬ লাখ টাকা পারিশ্রমিকে। মতিন মিয়ার সঙ্গে বসুন্ধরা কিংসের চুক্তি বছরে ৫০ লাখ টাকারও বেশি (নির্দিষ্ট অঙ্কটা বেশি হবে)। মহেন্দ্র ইউনাইটেডের মোট বাজেটই তো এই দুই খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিকের চেয়ে কম। মহেন্দ্রর সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত খেলোয়াড় অঞ্জন বিসতার চুক্তি ৯ মাসের। প্রতি মাসে ১ লাখ ২০ হাজার রুপি হিসাবে ৯ মাসে ১০ লাখ ৮০ হাজার রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
আর কিছুদিনের মধ্যেই অল নেপাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (আনফা) শুরু করতে যাচ্ছে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। পরীক্ষামূলক এই আয়োজনেও সেভাবে নেই টাকার ছড়াছড়ি। বাজেট এমনই যে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির সব স্থানীয় খেলোয়াড়কেই কিনে নিতে পারেন বাংলাদেশের জামাল, মতিনদের মতো ফুটবলাররা। ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে আয়োজিত এই লিগে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৫০ হাজার নেপালি রুপিতে বিক্রি হয়েছেন অঞ্জন বিসতা। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর বাজেট কোনোভাবেই ২০ লাখ রুপির বেশি নয়। এ পরিমাণ অর্থ এখন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মধ্যম সারির একজন খেলোয়াড়ই আয় করেন। নেপালের বাইরে ভারতের আই লিগ খেলেন জাতীয় দলের গোলরক্ষক কিরণ চেমজং আর ইন্দোনেশিয়ান লিগে রোহিত চাঁদ। এ দুজনের হিসাব আবার অন্য। তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই নেপালের অন্য ফুটবলারদের চেয়ে অনেক বেশি আয় করেন। কিন্তু নেপাল জাতীয় দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ের আর্থিক আয় যে বাংলাদেশের ফুটবলারদের চেয়ে অনেক কম, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশের ‘ধনী’ ফুটবলারদেরই কাল বলে-কয়ে হারিয়ে দিলেন নেপালের ‘মধ্যবিত্ত’ ফুটবলাররা। এরপর কি ফুটবল-কর্তারা বলবেন বাংলাদেশের ফুটবল ঠিক পথেই আছে?