সোনায় সোহাগা সময় কাটছে রদ্রির
ম্যানচেস্টার সিটির একমাত্র অপ্রাপ্তি ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। দীর্ঘ শিরোপা–খরায় ভুগছিল স্পেনও। তবে মাত্র ৮ দিনের ব্যবধানে সিটি–স্পেন দুই দলেরই আক্ষেপ ঘুচে গেছে।
১০ জুন ইস্তাম্বুলে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ১–০ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপা জিতেছে সিটি। পেপ গার্দিওলার দল গড়েছে ‘ট্রেবল’ জয়ের কীর্তি। আর গত রাতে রটারডামে লুকা মদরিচের ক্রোয়েশিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে প্রথমবার নেশনস লিগ ট্রফির স্বাদ পেয়েছে স্পেন, যা ১১ বছর পর তাদেরও প্রথম শিরোপা।
এতেই নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন রদ্রি ও এমেরিক লাপোর্ত। ক্লাব ফুটবলে সিটি ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে স্পেনের দুই সতীর্থ সবচেয়ে কম সময়ের ব্যবধানে উয়েফা আয়োজিত দুটি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন দলের গর্বিত সদস্য হওয়ার নজির গড়েছেন। মাত্র ৮ দিনের ব্যবধানে ক্লাব ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দুটি মহাদেশীয় শিরোপা জয়ের রেকর্ড রদ্রি ও লাপোর্ত ছাড়া আর কারও নেই।
রদ্রি তো এক অনন্য কীর্তিই গড়েছেন। ২৬ বছর বয়সী এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে একই মৌসুমে উয়েফা আয়োজিত ক্লাব ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পেয়েছেন। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই কাল জিতেছেন নেশনস লিগের সেরা ফুটবলারের খেতাবও।
শুধু কী তা–ই? দুই প্রতিযোগিতার ফাইনালেও সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন রদ্রি। ইস্তাম্বুলে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ফাইনালে জয়সূচক গোলটা তাঁর পা থেকেই এসেছিল। আর কাল ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে দ্বিতীয় শট নিতে এসে সহজেই করেছেন লক্ষ্যভেদ। কিন্তু এটুকুতেই কি ফাইনালসেরা হওয়া যায়? নিশ্চয় না। রদ্রিকে শুধু টাইব্রেকারে সফলতার জন্য এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে এর আগে ১২০ মিনিট মাঠজুড়ে দাপিয়ে বেড়ানোর জন্য।
তর্ক সাপেক্ষে রদ্রিই যে এই মুহূর্তে বিশ্বসেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার, সেটা তাঁর পারফরম্যান্সই বলে দিচ্ছে। তাঁকে আগামী ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও রাখছেন অনেক ফুটবল বিশ্লেষক।
ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ফুটমবের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রদ্রি কাল ৯১ শতাংশ পাস নিখুঁতভাবে দিয়েছেন। গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন একটি। বলে পা ছুঁয়েছেন ১০৫ বার। মানে, গড়ে প্রতি ১ মিনিট ১০ সেকেন্ড পর পর তাঁর কাছে বল এসেছে।
অ্যাটাকিং থার্ডে রদ্রি বল পাঠিয়েছেন ৬ বার। প্রতিপক্ষের শট রুখে দিয়েছেন ৩ বার, বল কেড়ে নিয়েছেন ৯ বার, বল দখলে নিয়েছেন ২ বার। ট্যাকলেও জিতেছেন ২ বার। মাঠে বল গড়িয়ে চলা ও বাতাসে ভেসে থাকা অবস্থায় ডুয়েলে জিতেছেন ৪ বার। আর ড্রিবল করেছেন একবার। এমন পারফরম্যান্সের পর রদ্রিকে ফাইনালসেরার স্বীকৃতি না দেওয়াটা হতো অন্যায়। ইতালির বিপক্ষে সেমিফাইনালেও ম্যাচসেরার পুরস্কারটা তাঁর হাতে উঠেছিল।
অথচ তারাদের মেলায় রদ্রি নামটা প্রায় আড়ালে থেকে যায়। খুব একটা আলোচনা তাঁকে নিয়ে হয় না বললেই চলে। সেই তিনিই সিটি আর স্পেনের আক্ষেপ ঘোচানোর অন্যতম কারিগর। সদ্য সমাপ্ত ২০২২–২৩ মৌসুমে সিটির হয়ে রদ্রি খেলেছেন ৫৬ ম্যাচ। এর মধ্যে ৫২ ম্যাচেই ছিলেন শুরুর একাদশে, যা গার্দিওলার কোচিং ক্যারিয়ারে এক মৌসুমে কোনো ফুটবলারকে ম্যাচ খেলানোয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এখানে রদ্রির ওপর শুধু লিওনেল মেসি। ২০১১-১২ মৌসুমে বার্সেলোনার ৫৭ ম্যাচে শুরুর একাদশে ছিলেন মেসি।
মেসি ফরোয়ার্ড হওয়ায় গার্দিওলার একাদশে তাঁর উপস্থিতি আগে থেকেই প্রায় নিশ্চিত হয়ে থাকত। কিন্তু ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার তো আর অপরিহার্য সদস্য নন। তা ছাড়া গার্দিওলা তাঁর কৌশলে প্রায়ই বদল আনেন। নানা রকম পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে একে–ওকে বসিয়ে রাখেন।
এখানেই গার্দিওলার আস্থা অর্জন করে নিয়েছেন রদ্রি। অনেক তারকাকে বসিয়ে রাখলেও ‘আড়ালের নায়ক’ রদ্রিকে নিয়মিতই সুযোগ দিয়েছেন সিটি কোচ। এখন তো জাতীয় দল স্পেনেও ‘অটো চয়েস’ হয়ে গেছেন।
সত্যিই, সোনায় সোহাগা সময় কাটছে রদ্রির।