সোনার বল পাবেন কে
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটা মনে আছে?
সবাই ভেবেছিল, কিলিয়ান এমবাপ্পে ইংল্যান্ডের রক্ষণ ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলবেন। এই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি গোল করা এমবাপ্পেকে ম্যানচেস্টার সিটির ফুলব্যাক (কাইল ওয়াকার) ঠেকাতে পারবেন কি না—হিসাব ছিল এটাই।
কিন্তু সেই হিসাব টাচলাইনের বাইরে ফেলে গ্রিজমান ম্যাচের ভাগ্য গড়েছেন দুটি গোল বানানো পাসে। যেখান থেকে গোলও পেয়েছেন চুয়ামেনি ও জিরু।
এমবাপ্পের কাছ থেকে কোনো কিছু না কেড়েই বলা যায়, ফ্রান্স দলে যদি কারও ‘ব্যাগ অব ট্রিকস’ থাকে, তবে সেটি গ্রিজমানেরই আছে। আর তাতে এই বিশ্বকাপে সুযোগ তৈরিতেও অনেককে পেছনে ফেলেছেন আতলেতিকো মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড।
১৭টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন গ্রিজমান, সেটিও বেশ পেছন থেকে। কাল রাতে সেমিফাইনালে গোল করা ও গোল বানানো মেসিই শুধু এই তালিকায় তাঁর চেয়ে এগিয়ে (১৮)। আর্জেন্টাইন তারকা সোনার বল জয়ের দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও অস্বীকার করা যায় না সুযোগটা গ্রিজমানেরও আছে।
পর্তুগালের ব্রুনো ফার্নান্দেজ ও ইংল্যান্ডের হ্যারি কেইনের সমান ৩টি করে গোল বানিয়েছেন গ্রিজমান। ইংল্যান্ড বাদ পড়ায় কেইনের যাত্রা শেষ। ফার্নান্দেজ ও গ্রিজমানের মধ্যে যদি এই মুহূর্তে কাউকে বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে গ্রিজমানের পাল্লায়ই সম্ভবত বেশি ভোট পড়বে।
আক্রমণ তৈরির পাশাপাশি মাঝমাঠ গোছানো ও পগবার অভাব পূরণ করা—এসব জায়গায় গ্রিজমান যে ফার্নান্দেজের চেয়ে এগিয়ে! খেলার সৌন্দর্যের কথা তো বাদই রইল।
মরক্কোর বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচ সামনে রেখে ফরাসি ফুটবলে একটা রব উঠেছে—গ্রিজমান ‘মেকস এভরিথিং ওয়ার্ক ফর দেম’। একটু পেছনে তাকানো যাক। বিশ্বকাপ শুরুর আগে পল পগবা ও এনগোলো কান্তের মতো দুজন মিডফিল্ডার হারিয়ে এলোমেলো অবস্থায় পড়েছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।
ভাবা হয়েছিল, কাতারে ফরাসি সৌরভ হয়তো মিলবে না। কিন্তু কিসের কি! উল্টো কাতার বিশ্বকাপে ফ্রান্স দলকে রাশিয়ায় বিশ্বকাপজয়ী দলটির চেয়েও আক্রমণাত্মক মনে হচ্ছে। এর পেছনে কিন্তু গ্রিজমান—ফরাসি ফুটবল–সৌরভের কৌটো তাঁর হাতে। প্রতি ম্যাচে ছিপি খুলে ছাড়ছেন একটু একটু করে।
তাতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ডও গড়েছেন। জিনেদিন জিদান ও থিয়েরি অঁরিকে পেছনে ফেলে ফ্রান্সের জার্সিতে সর্বোচ্চ ২৮টি ‘অ্যাসিস্ট’ (গোল বানানো) এখন তাঁর। পগবা ও কান্তে থাকায় রাশিয়ায় ৪ গোলের পাশাপাশি ৪টি গোলও বানিয়েছিলেন গ্রিজমান। তবু গোল্ডেন বল জিতেছিলেন লুকা মদরিচ। এবার পগবা ও কান্তে না থাকায় অরলিয়েঁ চুয়ামেনি ও আদ্রিয়ান রাবিওতের সঙ্গে খেলছেন মাঝমাঠে। তবু কি গ্রিজমানকে ঠেকানো গেছে?
একটা প্রশ্নেই উত্তরটা দেওয়া যায়— আলোকে কি কখনো চাপা দিয়ে রাখা যায়?