‘মেসি সবকিছুর ঊর্ধ্বে, আর্জেন্টিনার জার্সি তাই থাকবে’—স্কালোনির বিশ্বাস
আর্জেন্টিনার জার্সিতে লিওনেল মেসির প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ কোনটি?
সাতপাঁচ না ভেবে ১৯ বছর আগে ফেরেঙ্ক পুসকাস স্টেডিয়ামে হাঙ্গেরির বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে মেসির অভিষেক ম্যাচের কথা বলতে পারেন। কিন্তু সেটি ছিল প্রীতি ম্যাচ। আর্জেন্টিনার জার্সিতে তাঁর প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে অভিষেক ২০০৫ সালের আগস্টে হাঙ্গেরি ম্যাচের পরের মাসে।
২০০৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সে ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল প্যারাগুয়ে। ভেন্যু প্যারাগুয়ের রাজধানী আসুনসিওনের দেল চাকো স্টেডিয়াম। মাঝের এ সময়ে এই স্টেডিয়ামে খেলেছেন মেসি। কিন্তু ১৯ বছর আগের সেই স্মৃতি উঠে আসছে অন্য কারণে। প্রায় দুই দশকের এই সময়ে মেসি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বিশ্বব্যাপী তাঁর সমাদর ও জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। কিন্তু বাংলাদেশ সময় আজ রাতে মেসি যখন এই স্টেডিয়ামে নামবেন, তখন অন্য রকম এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে পারেন।
ভেন্যু যেটাই হোক, মেসিকে নিয়ে আর্জেন্টিনা দল মাঠে নামলে গ্যালারিতে আকাশি-সাদা রঙের ১০ নম্বর জার্সির উপস্থিতি ছিল শিরোধার্য। সেটা হোক আর্জেন্টাইন কিংবা স্বাগতিক সমর্থক। কিন্তু আজ তা নাও দেখা যেতে পারে! আগেই জানা গিয়েছে, প্যারাগুয়ের ফুটবল ফেডারেশন (এপিএফ) স্বাগতিক ব্যতীত গ্যালারিতে অন্য কোনো দলের জার্সি বরদাশত করবে না।
প্যারাগুয়ের ফুটবলারদের জন্য সবাই চায় জাতীয় দলের জার্সি পরা হোক। কিন্তু লিও (মেসি) সবকিছুর ঊর্ধ্বে, আর্জেন্টিনার জার্সি তাই থাকবে (গ্যালারিতে)।লিওনেল স্কালোনি, আর্জেন্টিনা কোচ
এপিএফের লাইসেন্সিং ম্যানেজার ফের্নান্দো ভিয়াসবোয়া গতকালও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা অন্য দলের জার্সি অনুমোদন করব না। বিষয়টি মেসিকে নিয়ে নয়। আমরা সব ফুটবলারের ক্যারিয়ারকেই সম্মান করি। ঘরের মাঠ আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ, এটাই কারণ।’
অর্থাৎ মেসির ১০ নম্বর জার্সি তো বটেই, আর্জেন্টিনার জার্সি নিয়ে মাঠে ঢুকতে পারবেন না স্থানীয় দর্শক। কিন্তু এ নিষেধ যে পুরোপুরি মানা হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণটা অন্যভাবে বুঝিয়ে বলেছেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তাঁর যুক্তি, ‘প্যারাগুয়ের ফুটবলারদের জন্য সবাই চায় জাতীয় দলের জার্সি পরা হোক। কিন্তু লিও (মেসি) সবকিছুর ঊর্ধ্বে, আর্জেন্টিনার জার্সি তাই থাকবে (গ্যালারিতে)।’
স্কালোনি মনে করেন, এই নিষেধাজ্ঞার পরও প্যারাগুয়ের কিছু সমর্থকের গায়ে মেসির জার্সি দেখা যাবেই। কারণ? বিশ্বব্যাপী তাঁর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা। স্কালোনি বলেছেন, ‘এর অর্থ এই নয় যে তারা (স্থানীয় দর্শক) প্যারাগুয়েকে সমর্থন করে না। আমার মতে, সে (মেসি) কী, তা ফুটবল-সংশ্লিষ্টদের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারটি ভালো। জার্সি থাকলেই আর্জেন্টিনার সমর্থক হয়ে যাবেন, ব্যাপারটি এমনও নয়।’
প্যারাগুয়ের কোচ গুস্তাভো আলফারোও এ নিয়ে কথা বলেছেন সংবাদ সম্মেলনে, ‘জার্সি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আমার কিছুই করার নেই। এ নিয়ে কোনো ধারণাই নেই আমার। আমার মনে, সম্ভাব্য সংঘাতের সম্ভাবনা এড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত। মেসি আগামীকাল (বাংলাদেশ সময় আজ রাত ৩টা) আমাদের প্রতিপক্ষ। পেরুর বিপক্ষে আমি চাই সে জীবনের সেরা ম্যাচটা খেলুক, কিন্তু আগামীকাল নয়।’
প্যারাগুয়ে আর্জেন্টিনার জন্য সহজ জায়গা নয়। সেখানে ২০১৩ সালে সর্বশেষ জিতেছে আর্জেন্টিনা। ২০১৫ ও ২০২১ সালে সর্বশেষ দুই ম্যাচে ড্র করেছে। তার আগে ২০০৫ ও ২০০৯ সালে দুই ম্যাচেই হেরেছে আর্জেন্টিনা। ২০০৫ সালে মেসির অভিষেকের পর প্যারাগুয়েতে শুধু একটি ম্যাচই জিততে পেরেছে আর্জেন্টিনা। এ সময়ে পাঁচ ম্যাচ খেলে বাকি দুটি করে ম্যাচে হার ও ড্র করেছে আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘লা নাসিওন’ জানিয়েছে, দেল চাকো স্টেডিয়ামের ৩৫ হাজার আসনের টিকিট (টিকিট ছাড়ার) প্রথম দিনেই বিক্রি হয়ে গেছে। ১০ ডলার থেকে ১৯০ ডলার পর্যন্ত দাম উঠেছে টিকিটের। স্থানীয় সমর্থকেরা আর্জেন্টিনা, বার্সেলোনা, পিএসজি ও ইন্টার মায়ামির জার্সি নিয়ে ঢুকতে পারবেন না।
প্যারাগুয়ের বিপক্ষে সব মিলিয়ে ৫০ ম্যাচ জিতেছে আর্জেন্টিনা। প্যারাগুয়ে জিতেছে ১৫ ম্যাচ। স্কালোনির মেয়াদে প্যারাগুয়ের কাছে হারেনি আর্জেন্টিনা। দলটির সমর্থকদের জন্য আরও একটি স্বস্তির খবর হলো, আলফারোর অধীন মাঠে নামা দলের বিপক্ষে কখনো হারেনি তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। গোল করেছে সব ম্যাচেই।