বছরের শীর্ষ দলবদলে বেলিংহাম-কেইনদের সঙ্গে যাঁরা

হ্যারি কেইন ও জুড বেলিংহামইনস্টাগ্রাম

চলতি বছর ফুটবলের দলবদলে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এর আগে বেশির ভাগ তারকা খেলোয়াড়দের দলবদল ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার বদলে গেছে চিত্র। খেলোয়াড় কেনার দৌড়ে নতুন করে যোগ দিয়েছে সৌদি প্রো লিগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার (এমএলএস)। সৌদি লিগের ক্লাবগুলো ইউরোপ থেকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, রবার্তো ফিরমিনো, সাদিও মানে এবং রিয়াদ মাহরেজদের মতো বিশ্বসেরা তারকাদের নিয়ে এসেছে।

আর এমএলএসে যোগ দিয়েছেন লিওনেল মেসি, সের্হিও বুসকেতস এবং জর্দি আলবার মতো তারকা। এই দুই লিগ ইউরোপকে কঠিন চ্যালেঞ্জ দিলেও এখনো অবশ্য রাজত্বটা ইউরোপেরই দখলে। গত এক বছরে দলবদলে দারুণ কিছু সাফল্য পেয়েছে ইউরোপের ক্লাবগুলোও। তেমন সফল কিছু দলবদল নিয়ে এ আয়োজন।

আরও পড়ুন

জেমস ম্যাডিসন
টটেনহাম

২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত লেস্টার সিটিতে ছিলেন জেমস ম্যাডিসন। কিন্তু গত মৌসুমে আশ্চর্যপতনে অবনমিত হয়ে দ্বিতীয় বিভাগে চলে যায় লেস্টার সিটি। লেস্টারের অবনমনের কারণে দলবদলের বাজারে ম্যাডিসনের গন্তব্য কোথায় হয়, তাতে চোখ ছিল অনেকের। শেষ পর্যন্ত টটেনহামকেই নিজের ঠিকানা করে নেন এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার।

টটেনহামের হয়ে শুরুটা দারুণ করেছেন জেমস ম্যাডিসন
ইনস্টাগ্রাম

হ্যারি কেইনবিহীন ক্লাবটিতে নতুন মৌসুমে কোচ পোস্তেকগ্লুর অন্যতম হাতিয়ার হয়ে ওঠেন ২৭ বছর বয়সী এই ইংলিশম্যান। পোস্তেকগ্লুর কৌশলের সঙ্গেও দারুণভাবে মানিয়ে যান ম্যাডিসন। চোটে পড়ার আগে টটেনহামের হয়ে প্রথম ১১ ম্যাচে ৩ গোলের পাশাপাশি ৫ গোলে সহায়তা করে আলোচনায় উঠে আসেন এই মিডফিল্ডার। তাঁকে হারিয়েই মূলত পথ হারায় টটেনহামও। এখন টটেনহামের ঘুরে দাঁড়াতে হলে দ্রুত দলে ফিরতে হবে ম্যাডিসনকে।

আরও পড়ুন

ইসকো
রিয়াল বেতিস

রিয়াল মাদ্রিদে দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন ইসকো। যদিও রিয়ালের হয়ে প্রত্যাশা সবটা দিতে পেরেছেন কি না, সে প্রশ্নও কেউ চাইলে তুলতেই পারে। তবে গত মৌসুমে একপর্যায়ে ইসকোর ক্যারিয়ারই ছিল শেষ হওয়ার পথে। মাঝ মৌসুমে সেভিয়া ছাড়তে গিয়েই মূলত বিপাকে পড়েন এই স্প্যানিশ উইঙ্গার। জার্মান ক্লাব হার্থা বার্লিনে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত হলেও শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি সেই চুক্তি।

রিয়াল বেতিস তারকা ইসকো
ইনস্টাগ্রাম

একসময় মনে হচ্ছিল, ক্লাববিহীনই থেকে যাবেন ইসকো। পরে অবশ্য রিয়াল বেতিস এগিয়ে দলে টেনে নেয় তাঁকে। এই সিদ্ধান্ত ইসকো এবং বেতিস দুই পক্ষের জন্যই ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে। ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনির অধীন দারুণভাবে নিজেকে মানিয়ে নেন তিনি। মাঝমাঠে বেতিসের প্রাণভোমরাও এখন সাবেক এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। ইসকোময় বেতিস এখন লা লিগায় সেরা ছয়ে থাকার স্বপ্নও দেখছে।

ডেকলান রাইস
আর্সেনাল

সাম্প্রতিক সময়ের বড় অঙ্কের অনেকগুলো দলবদল ব্যর্থ হতে দেখা গেছে। তবে ডেকলানের ক্ষেত্রে সেটি বলার সুযোগ নেই। চলতি মৌসুমে আর্সেনালের দারুণ নৈপুণ্যের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের রাইস। এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের উপস্থিতির কারণে আর্সেনাল এখন আরও বেশি পরিণত ও সংঘবদ্ধ। রক্ষণে আগে থেকেই পরীক্ষিত ছিলেন রাইস।

আর্সেনাল তারকা ডেকলান রাইস
ইনস্টাগ্রাম

তবে মিকেল আরতেতার অধীন বলের দখল ধরে রাখা এবং বল পায়ে রেখে সামনে এগিয়ে গিয়ে আক্রমণের ধারা তৈরিতেও বড় ভূমিকা রাখছেন রাইস। মাঠে আধিপত্য বিস্তার ও প্রতিপক্ষের বক্সের আশপাশে হুমকি তৈরিতেও দারুণ প্রভাব রাখতে পারেন এই ইংলিশ তারকা। এমনকি দলের প্রয়োজনের চাপের মুহূর্তে করতে পারেন গোলও।

আরও পড়ুন

ভিক্টর বোনিফেস
বায়ার লেভারকুসেন

জাবি আলোনসোর হাত ধরে ঐতিহাসিক এক মৌসুম পার করছে বায়ার লেভারকুসেন। বুন্দেসলিগায় ১৬ ম্যাচের কোনোটিতে না হেরে এখন পর্যন্ত অপরাজিত দল লেভারকুসেন। এমনকি ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগে এখন পর্যন্ত একমাত্র অপরাজিত দলও হচ্ছে লেভারকুসেন। আর জাবির হাত ধরে আমূল বদলে যাওয়া এই দলের মূল ভরসা হচ্ছেন বোনিফেস। ২২ বছর বয়সী এই নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকারকে সেন্ট জিলোয়াঁ থেকে ১৭.৩ মিলিয়ন পাউন্ডে নিয়ে এসেছে লেভারকুসেন।

লেভারকুসেনের হয়ে আলো ছড়াচ্ছেন ভিক্টর বোনিফেস
ইনস্টাগ্রাম

এরই মধ্যে নিজেকে বিশ্বমানের স্ট্রাইকার হিসেবে প্রমাণ করেছেন বোনিফেস। বুন্দেসলিগায় ১০ গোলের পাশাপাশি ৭টি সহায়তাও আছে তাঁর। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে প্রতিপক্ষের বক্সের ভেতর বোনিফেস কতটা ত্রাস সৃষ্টি করতে পারেন। লেভারকুসেনের দাপট ধরে রেখে শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিততে হলে মৌসুমের বাকি সময়েও বোনিফেসের সেরা ছন্দে থাকার কোনো বিকল্প নেই।

হ্যারি কেইন
বায়ার্ন মিউনিখ

বেশ নাটকীয়তার পর হ্যারি কেইনকে রেকর্ড ৮৬.৬ মিলিয়ন পাউন্ডে টটেনহাম থেকে কিনে এনেছে বায়ার্ন মিউনিখ। কেইনকে কেনার সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, তা এরই মধ্যে প্রমাণ করেছেন এই ইংলিশ স্ট্রাইকার। বায়ার্নে এসেই দ্রুত দলের সঙ্গে মানিয়ে নেন কেইন। এরপর শুরু করেন গোলবন্যারও। ১৫ ম্যাচে ২১ গোল করার পথে একাধিক রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছেন কেইন। সঙ্গে আছে আরও ৫ গোলে সহায়তাও। আর সব মিলিয়ে এখন ২২ ম্যাচে তাঁর গোলের সংখ্যা ২৫, সহায়তা আছে ৮ গোলে।

বুন্দেসলিগার এক মৌসুমে দ্রুততম ২১ গোল করেছেন হ্যারি কেইন
ইনস্টাগ্রাম

এখনো মৌসুমের অর্ধেকের বেশি ম্যাচ বাকি। শেষ পর্যন্ত গোল মেশিন কেইন কোথায় গিয়ে থামেন সেটাতেই এখন চোখ সবার। শুধু ব্যক্তিগত অর্জনেই নয়, দলীয়ভাবেও এবার একাধিক শিরোপা জয়ের হাতছানি আছে কেইনের সামনে। বলে রাখা ভালো, ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত কোনো শিরোপার দেখা পাননি কেইন। বায়ার্নের হয়ে ছন্দ ধরে রাখতে পারলে এ মৌসুমেই হয়তো স্বপ্নপূরণ হবে তাঁর।

জুড বেলিংহাম
রিয়াল মাদ্রিদ

এ মৌসুমের সবচেয়ে সফল দলবদলের কথা বললে কেইনের সঙ্গে আসবে আরেক ইংলিশ তারকা জুড বেলিংহামের নামও। বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ৮৮ মিলিয়ন পাউন্ডে গ্রীষ্মের দলবদলে রিয়ালে আসেন বেলিংহাম। ২০ বছর বয়সী বেলিংহাম অবশ্য ডর্টমুন্ডেই দারুণভাবে মেলে ধরেন নিজেকে। তবে রিয়ালে এসে নিজেকে রীতিমতো অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার।

রিয়ালের জার্সিতে দারুণ ছন্দে আছেন জুড বেলিংহাম
টুইটার

শুরু থেকেই পান গোলের দেখা। প্রথম ৪ ম্যাচেই পান ৫ গোল। লা লিগায় ১৬ ম্যাচে তাঁর গোল ১৩, সহায়তা আছে ২ গোলে। আর চ্যাম্পিয়নস লিগে ৫ ম্যাচে ৪ গোলের সঙ্গে আছে আরও ৩ গোলে সহায়তা। রিয়ালে বেলিংহাম শুধু গোলই করছেন না, দলকে দারুণভাবে ভারসাম্যও এনে দিয়েছেন। মিডফিল্ড নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রতিপক্ষ বক্সের হুমকি তৈরি করে সতীর্থদের জন্যও কাজটা সহজ করে দিচ্ছেন এই ইংলিশ ফুটবলার। দলবদলে সফল বেলিংহামের শুরুটা তো দুর্দান্ত হলোই, এখন অপেক্ষা শুধু নতুন ইতিহাস গড়ার।