রিয়ালে যাওয়ার কথা পিএসজিকে কখনো বলেননি এমবাপ্পে
পিএসজিতে কিলিয়ান এমবাপ্পে–নাটকের শেষ কোথায়?
রিয়াল মাদ্রিদে? সেটা সময় হলেই বোঝা যাবে। তবে এমবাপ্পের দাবি, পিএসজিকে তিনি বলেননি যে তিনি রিয়াল মাদ্রিদে যেতে চান। এমনকি তাঁকে বেচে দেওয়ার কথাও তিনি পিএসজিকে বলেননি। ইতালির সংবাদমাধ্যম লা গাজেত্তা দেল্লো স্পোর্তকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করেছেন এমবাপ্পে।
পিএসজিতে আগামী মৌসুম (২০২৩-২৪) শেষেই ক্লাবটির সঙ্গে এমবাপ্পের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। পিএসজির সঙ্গে তাঁর চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, এমবাপ্পে চাইলে চুক্তিটা আরও এক বছরের জন্য বাড়াতে পারবেন। সেটি করতে হবে এ বছরের জুলাইয়ের মধ্যেই। কিন্তু এমবাপ্পে আর চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে চান না। ফরাসি স্ট্রাইকারের চাওয়া মেয়াদ শেষ করে মুক্ত খেলোয়াড় (ফ্রি এজেন্ট) হিসেবে ক্লাব ছাড়বেন।
কিন্তু পিএসজি এমবাপ্পেকে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে ছাড়তে নারাজ। ২০১৮ সালে ১৮ কোটি ইউরোয় এমবাপ্পেকে কিনেছিল পিএসজি। ‘ট্রান্সফার মার্কেট’–এর হিসাবে পাঁচ বছর পরও ফুটবলের বাজারে একই দাম এমবাপ্পের। সিআইএসের হিসাবে ১৬ কোটি ৩২ লাখ ইউরো। অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় পিএসজির তাই এমবাপ্পেকে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে ছাড়ার কোনো কারণ নেই। তাই এমবাপ্পে চুক্তি নবায়ন না করলে চলতি দলবদলেই তাঁকে ছেড়ে দিতে চায় প্যারিসের ক্লাবটি।
এর মধ্যেই কাল নতুন এক ‘বোমা’ ফাটিয়েছে ফরাসি সংবাদমাধ্যম লা পারিসিয়ান। তাদের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এমবাপ্পে এবারের দলবদলেই রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে চান। গত দুই গ্রীষ্মের দলবদলে এমবাপ্পেকে পেতে রীতিমতো মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছিল রিয়াল। কিন্তু দুবারই শেষ মুহূর্তে গিয়ে হতাশ হতে হয় রিয়াল শিবিরকে। বিশেষ করে গতবার এমবাপ্পের রিয়ালে যাওয়া সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু পিএসজির নাছোড় অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে হয় রিয়ালকে। এরপর এমবাপ্পের পিছু ছোটা থেকে সরে আসে রিয়াল।
কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। করিম বেনজেমা রিয়াল ছেড়েছেন, আক্রমণভাগেও পরীক্ষিত খেলোয়াড় খুঁজছে রিয়াল। লা পারিসিয়ান দাবি করেছে, বেনজেমা চলে যাওয়ায় এমবাপ্পে এ সুযোগ নিতে চান। তবে রিয়াল তাঁকে নিতে আগ্রহী কি না, সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানা যায়নি।
কিন্তু লা পারিসিয়ানের প্রতিবেদনকে মিথ্যা দাবি করে টুইট করেছেন এমবাপ্পে, ‘মিথ্যা। যত বড় মিথ্যা, তত দ্রুত তা ছড়ায়। আগেই বলেছি, আমি আগামী মৌসুমেও পিএসজিতে থাকব, যেখানে আমি খুব খুশি।’ এই টুইট ছাড়াও বার্তা সংস্থা এএফপিকে এমবাপ্পে বলেছেন, ‘চুক্তি না বাড়ানোর কথা ক্লাবকে ২০২২ সালের ১৫ জুলাই জানানো হয়েছে। চিঠি দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো, আগে যা বলা হয়েছিল সেটাকে নিশ্চিত করা।’
এমবাপ্পের এ চিঠির পরই মূলত পিএসজিতে তাঁর থাকা না থাকা নিয়ে নাটক জমে ওঠে।
আর সেই নাটকে নতুন অধ্যায় হলো ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যমটিকে তাঁর দেওয়া সাক্ষাৎকার। টুইটের সুরেই এমবাপ্পে সেখানে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘পিএসজিকে বলিনি যে আমাকে বেচে দাও কিংবা আমি রিয়াল মাদ্রিদে যাব। আমি শুধু বলেছি, ২০২৫ সাল পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর যে সুযোগটা আছে, সেটি গ্রহণ করার ইচ্ছা নেই। পিএসজির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন নিয়েও কথা হয়নি। সেখানে আরও এক বছর খেলব, আমি এটাতেই খুশি।’
সাক্ষাৎকারে ফ্রান্স জাতীয় দল ও পিএসজির মধ্যে পার্থক্য নিয়েও কথা বলেছেন এমবাপ্পে। জাতীয় দলের হয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ের পর গত বছর কাতার বিশ্বকাপেও ফাইনালে খেলেছেন এমবাপ্পে। পিএসজির হয়ে ঘরোয়া লিগে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য পেলেও কখনো চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারেননি। একবার ফাইনালে (২০১৯-২০২০) খেলেছেন।
নিজের জাতীয় দল ও ক্লাবের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝিয়ে বললেন ২৪ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড, ‘ফ্রান্স দলে অবিশ্বাস্য কিছু প্রতিভা আছে। তাই বড় কেউ না থাকলেও বাকিরা পুষিয়ে দিতে পারে। এ জন্যই আর্জেন্টিনার বিপক্ষে (কাতার বিশ্বকাপ) ফাইনাল হারের সেই স্মৃতি আমরা পেছনে ফেলে এসেছি। কারণ, সামনে চার বছরের চক্র; একসঙ্গে কাজ করলে ইউরো, নেশনস লিগ ও ২০২৬ বিশ্বকাপেও দারুণ কিছু করা সম্ভব। কিন্তু পিএসজিতে ক্লাব–সম্পর্কিত অন্য অনেক ইস্যু আছে। এখানকার পরিস্থিতি ভিন্ন।’
২০১১ পিএসজি কাতারি মালিকের অধীন আসার পর থেকেই চ্যাম্পিয়নস লিগের পিছু ছুটছে। সে লক্ষ্যে প্রথমে নেইমার, তারপর এমবাপ্পে ও লিওনেল মেসিকেও উড়িয়ে এনেছিল ক্লাবটি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সাধের চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা হয়নি। এবারের মৌসুম শেষে পিএসজি ছেড়েছেন মেসি। নেইমারও যাই যাই করছেন। এখন এমবাপ্পেকেও নিয়েও গুঞ্জন ছড়িয়েছে। এমবাপ্পে কবে ক্লাব ছাড়বেন, তা সময়ই বলে দেবে। তবে পিএসজিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাতে না পারা নিয়েও কথা বলেছেন এমবাপ্পে।
গত দুই মৌসুমেই শেষ ষোলো থেকে বাদ পড়েছে ক্লাবটি। এমবাপ্পে এই ব্যর্থতা নিয়ে ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমার মতো খেলোয়াড়ের লক্ষ্য থাকে সবকিছু জেতা। হ্যাঁ, বাধা তো আসবেই আর ভুল থেকেও শিখতে হবে প্রতি মৌসুমে। তবে ব্যক্তিগতভাবে খেলার সর্বোচ্চ মানটুকু ধরে রেখেছিলাম কয়েক বছর।’